ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য ৩ লাখ কোটি টাকা ও অন্যান্য সুবিধা : নির্মলা

করোনা মােকাবিলায় লকডাউনের জেরে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও অতিক্ষুদ্র শিল্পসংস্থাগুলি।

Written by SNS New Delhi | May 14, 2020 11:30 pm

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। (File Photo: IANS)

এদিন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ঘােষিত আর্থিক প্যাকেজের বিস্তারিত জানিয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ২০ লাখ কোটি টাকার কত অংশ কোন খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে তার ব্যাখ্যা দেন। তিনি জানান, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও অতিক্ষুদ্র সংস্থাগুলির জন্য তিন লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ঋণ সহ নানান সুবিধা পাবে সংস্থাগুলি। এছাড়া ইপিএফ ও টিডিএস খাতে কম টাকা কেটে হাতে বেশি টাকা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। রিয়েল এস্টেট ও ঠিকাদারদের জন্য সুবিধা দেওয়ার কথা ঘােষণা করা হয়েছে।

করোনা মােকাবিলায় লকডাউনের জেরে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও অতিক্ষুদ্র শিল্পসংস্থাগুলি। সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্র চাঙ্গা করতে তিন লাখ কোটি টাকার বরাদ্দ করা হয়েছে। ছােট সংস্থাগুলি চার বছরের জন্য ঋণ নিতে পারবে। ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি ফি জমা দিতে হবে। ব্যাঙ্ক গ্যারান্টার হবে সরকার। প্রথম বছরে ঋণের টাকা ফেরত নেওয়া হবে না।

অর্থমন্ত্রী জানান, আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় বাড়িয়ে ৩০ নভেম্বর করা হবে। এর ফলে ৫০ হাজার কোটি টাকা সাধারণ মানুষের হাতে যাবে। বৃহস্পতিবার থেকেই সরকারি নির্দেশ কার্যকর করা হবে। টিডিএসের ২৫ শতাংশ কম কাটা হবে। ৩১ মার্চ ২০২১ পর্যন্ত টিডিএস ২৫ শতাংশ কমানাে হচ্ছে।

রিয়েল এস্টেটের ক্ষেত্রে যে সব প্রকল্প চলছে সেগুলির মেয়াদ আরও তিনমাস বাড়িয়ে দেওয়া হবে। এজন্য নগরােন্নয়ন মন্ত্রক রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলগুলিকে নির্দেশ পাঠাচ্ছে। ব্যাঙ্ক গ্যারান্টির টাকার কিছুটা ফেরত দেওয়া হবে। পাবলিক-প্রাইভেট সংস্থার ঠিকাদারির ক্ষেত্রেও এই নিয়ম কার্যকর হচ্ছে। রেল, সড়ক বা অন্য ক্ষেত্রে যে সকল ঠিকাদার সরকারি কাজ করছেন তাদের কাজ শেষ করার মেয়াদ তিন থেকে ছয় মাস বাড়ানাে হচ্ছে।

এর সুবিধা গ্রাহক দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের জন্য সংস্থাগুলি ঋণ নিতে পারবে। এই সকল সংস্থার জন্য ৯০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ দেওয়া হয়েছে। সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ও বিদ্যুৎ বন্টনকারী সংস্থাগুলি আর্থিক সঙ্কটে ভুগছে। প্যাকেজ ঘােষণার ফলে ঋণ নিতে পারবে সংস্থাগুলি, কোনও গ্যারান্টার লাগবে না, সরকারই গ্যারান্টার হবে। ৪৫ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত সুবিধাও দেওয়া হবে। এই প্রকল্প আগে থেকেই চালু রয়েছে। কিন্তু তার প্রকৃতি কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে।

ত্রিশ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ দেওয়া হচ্ছে নন ব্যাঙ্কিং সংস্থাগুলির জন্য। হাউসিং ফিনান্স ও মাইক্রোফিনান্স সংস্থাও সমস্যায় পড়েছে। হাতে নগদ বেশি আসায় সংস্থার সুবিধা হবে। তবে সরকারি কর্মীদের ক্ষেত্রে বারাে শতাংশ কাটা হবে। আর কর্মীদের থেকেও দশ শতাংশ কাটা হবে।

কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী সংস্থাগুলিকে ইপিএফের ১২ শতাংশের পরিবর্তে দশ শতাংশ দিতে হবে। এর মেয়াদ জুন, জুলাই ও আগস্ট করা হয়েছে। ইপিএফ থেকে টাকা তােলার সুবিধা পাবেন কর্মীরা।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি ও অতিক্ষুদ্র সংস্থাগুলির সরকাছে পাওনা পঁয়তাল্লিশ দিনের মধ্যে মেটানাে হবে। এজন্য ইকমার্সের ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। করােনাসংক্রমণ এড়াতে মেলা বা জনসমাগম এড়িয়ে বিক্রির সমস্যা হতে পারে। স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানােই এর লক্ষ্য। টেন্ডারে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলিও অংশ নিতে পারবে।

সরকারি টেন্ডারের ক্ষেত্রে দুশাে কোটি টাকা পর্যন্ত গ্লেবাল টেন্ডার হিসেবে গণ্য করা হবে না। এদের ক্ষমতা বাড়িয়ে শিল্প প্রসারের সুযােগ করে দেওয়া হবে। অধিক সংখ্যায় মাইক্রো সংস্থা ক্ষেত্রের আওতাভুক্ত করা সম্ভব হবে। এখন থেকে বিনিয়ােগ এক কোটি ও লেনদেন পাঁচশাে কোটি টাকা হলেও তা মাইক্রো সংস্থা হিসাবে গণ্য হবে।

মাইক্রো শিল্পের ক্ষেত্রে উৎপাদনের জন্য সীমা ছিল ২৫ লাখ টাকা, এখন তা বাড়িয়ে এক কোটি টাকা করা হয়েছে। এমএসএমই’র সংগা পরিবর্তন করা হয়েছে। পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকার তহবিল থেকে সফল ভাবে কর্মরত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য দেওয়া হবে। দুর্বল ও ঋণগ্রস্ত সংস্থার জন্য কুড়ি হাজার কোটি টাকা নগদ সাহায্য করা হবে। চার বছরের জন্য এই ঋণ দেওয়া হবে। তার মধ্যে এক বছর ঋণ। পরিশােধ করতে হবেনা । এজন্য কোনও গ্যারান্টি লাগবে না। ঋণের ওপর এক বছরের মরিটরিয়াম দেওয়া হবে।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য তিন লাখ কোটি টাকার প্যাকেজ রূপায়ণে পনেরােটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি ক্ষুদ্র, মাঝারি ও অতিক্ষুদ্র শিল্পের জন্য। করদাতাদের কর দেওয়ার পদ্ধতির সরলীকরণ অন্যতম।

গরিবদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর গরিব কল্যাণ প্যাকেজ ঘােষণা করা হয়েছে। কৃষি, শিল্প সহ প্রায় সকল ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার করা হয়েছে। বিনামূল্যে গ্যাস, ব্যাঙ্কমিত্ররা বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকা দিচ্ছেন, ব্যাঙ্কে গিয়ে আর টাকা আনতে যেতে হচ্ছে না, গরিবদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা দেওয়া হচ্ছে। আত্মনির্ভর ভারত গঠনের মাধ্যমে বিশ্ব বাজারে দেশের গুরুত্ব বৃদ্ধি করা। স্থানীয় উৎপাদনে জোর দেওয়াই এই নতুন স্লোগানের মূল উদ্দেশ্য।

কেন্দ্রীয় অর্থপ্রতি মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর বলেন, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। প্রধানমন্ত্রী গরিবদের কল্যাণে যেসব ঘােষণা করেছিলেন সেগুলি রূপায়ণ শুরু হয়েছে। উজ্জ্বলা যােজনা তিন মাস বিনামূল্যে গ্যাস দেওয়া হচ্ছে। ইএমআই মােরেটোরিয়াম ঘােষণা করা হয়েছিল। এর আগে ১.৭ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘােষণা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর আত্মনির্ভর ভারত প্রকল্পের জন্য ২০ লাখ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘােষণায় সারা বিশ্ব থেকে প্রশংসা করা হয়েছে।