ডা. সৌমিক চৌধুরি
প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জীবনযাত্রায় স্বাচ্ছন্দ্য এলেও স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ছে। আরামদায়ক জীবনযাত্রা যেমন বহু ঝঞ্ঝাট থেকে আমাদের একদিকে মুক্তি দিচ্ছে, অন্যদিকে কমিয়ে দিচ্ছে মানুষের জীবনের আয়ু। লাইফস্টাইল, খাদ্যাভাস, কাজের ধরণ, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি যেভাবে বাড়িয়ে তুলছে তাতে আগামী দিনে সচেতন না হলে এক ভয়ঙ্কর বিপদের মুখোমুখি হতে পারে ভারতের তরুণ প্রজন্ম। বিষয়টি নিয়ে দৈনিক স্টেটসম্যানের প্রতিনিধি পিয়ালি হাজরা কথা বলেছেন কনসালট্যান্ট ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট ডা. সৌমিক চৌধুরির সঙ্গে।
Advertisement
প্রশ্ন: কেন তরুণদের মধ্যে হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়ছে ?
উত্তর: ভারতীয়দের মধ্যে তরুণ বয়সে হৃদরোগের ঝুঁকি ক্রমশই বাড়ছে। আমাদের দেশে ৪০- এর পর থেকেই হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বেড়ে চলেছে। এর কারণ হল, অস্বাস্থ্যকর খাবার, লাইফস্টাইল, শরীরচর্চার অভাব এই রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এখন তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশ ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ করে থাকেন। অনেকের কাছে হয়তো এটা সুবিধেজনক হয়েছে, কিন্তু কাজের এই ধরণ স্বাস্থ্যের দিক থেকে আমাদের প্রচুর ক্ষতি করে চলেছে। এর ফলে হাঁটাচলা একদম কমে গেছে। আগে লোকে অফিস যেত, বাসে-ট্রামে যাতায়াত করে, পরিশ্রম করে অফিসে পৌঁছনো, আবার ফেরা-এতে অনেকটাই শারীরিক শ্রম হতো। এখন সেসব নেই। এগুলি বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করছে।
Advertisement
প্রশ্ন: শুধু হাঁটা-চলা কিংবা শারীরিক শ্রমের অভাবেই কী হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়ছে ?
উত্তর: আরেকটি বিষয় হল ইচ্ছে করলেই হাতের মুঠোয় পছন্দমতো খাবার, যে সব খাবার খুবই অস্বাস্থ্যকর। আমরা এখন বাড়ির খাবার খাওয়ার সময় পাই না। ইচ্ছে হলেই অর্ডার দিয়ে খাবার আনিয়ে নিতে পারি। নিউ এজ অ্যাপস, যার মাধ্যমে আমরা খুব সহজেই দ্রুত পেয়ে যাচ্ছি অস্বাস্থ্যকর খাবার। কিন্তু ক্যালরি বার্ন করার জন্য যতটা শারীরিক শ্রমের প্রয়োজন তা আমরা করছি না। এছাড়া আরেকটা বড় কারণ হল স্ট্রেস। মাত্রাতিরিক্ত স্ট্রেস হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলছে।
প্রশ্ন: তরুণদের মধ্যে কত বয়স থেকে ঝুঁকি বাড়ছে ?
উত্তর – সাধারণভাবে যেটা আমরা লক্ষ্য করছি ৩০-এর পর থেকেই ঝুঁকি বাড়ছে। ৩০ থেকে ৩৫ এর মধ্যে, ৪০ থেকে ৪৫-এর মধ্যে অনেকেই হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। শতাংশের হিসেবে বলা যায়, ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ছে, যা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। হঠাৎ তাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন, যখন হাসপাতালে আসছেন, তখন অনেকের ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি চিকিৎসকের হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে।
প্রশ্ন: এক্ষেত্রে কী করণীয়?
উত্তর: রুটিন চেকআপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় কিছু করার উপায় থাকে না আমাদের হাতে। তাই নিয়মিত চেক আপ, প্রিভেনটিভ চেক-আপ খুবই জরুরি। ৪০ এর পর থেকে বছরে অন্তত একবার স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা উচিত। কিডনি চেক-আপ, কোলেস্টরল, সুপারের মাত্রা চেক-আপ করা দরকার। কোনও কিছু ঘটবে তার জন্য অপেক্ষা না করে আগে থেকেই চেক-আপ করা খুবই প্রয়োজন।
প্রশ্ন: কোন ধরণের হৃদরোগ এঁদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায় ?
উত্তর – ইসকিমিক হার্ট ডিজিজ খুবই বাড়ছে। এতে হার্টের পেশীগুলিতে রক্তের প্রবাহ কমে যায়। এর প্রধান কারণ হল, করোনারি আর্টারি আংশি বা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণত চর্বিযুক্ত খাবার এর জন্য দায়ী। এতে বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, হতে পারে।
প্রশ্ন: এর লক্ষণ কী ?
উত্তর: এতে বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, হতে পারে। চোয়াল থেকে হাত অবধি ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে।
প্রশ্ন: কীভাবে চিকিৎসা করা হয়?
উত্তর: ইসিজি করা হয়, ইকোকার্ডিওগ্রাম করা হয়। লাইন অফ ট্রিটমেন্ট আমরা নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ঠিক করে থাকি। যখন আমরা নিশ্চিত হই যে হার্টের রোগ আছে, তখন দেখা হয় কত শতাংশ ব্লক রয়েছে সেক্ষেত্রে আমরা এনজিওগ্রাম করে দেখি। রোগীর এঞ্জিওপ্লাস্টি বা বাইপাসও করতে হতে পারে।
প্রশ্ন: লাইফস্টাইল কেমন হওয়া উচিত, যাতে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো যায়?
উত্তর: যদি আমরা প্রিভেন্ট করতে চাই, তবে স্বাস্খ্যকর জীবনযাত্রা প্রয়োজন। সঠিক খাবার খাওয়া, শারীরিক শ্রমের দরকার। শরীরচর্চা মানে এই নয় যে কাউকে জিম বা দৌড়ঝাঁপ করতে হবে। সপ্তাহে ৫ দিন আধঘণ্টা করে হাঁটলে তা হৃদরোগের সম্ভাবনা কমায়। খাবারের ক্ষেত্রে হাই প্রোটিন, চিনি ও লবণযুক্ত খাওয়া বন্ধ করতে হবে। তেল-মশলা জাতীয় খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
Advertisement



