খেতে বসলেই অনেকের এক টুকরো পেঁয়াজ না হলে চলে না। অনেকে আবার উপকারের কথা ভেবে পেঁয়াজের রস খান। আপনি হয়তো জানলে অবাক হবেন যে প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণ পেঁয়াজ খেলে তা অনেক উপকারে লাগে। পেঁয়াজের সবুজ গাছ ও কলি আমরা রান্না করে খেয়ে থাকি। তবে এই কলি সামান্য লবণ মাখিয়ে চিবিয়ে রস খেয়ে ছিবড়া ফেলে দিলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যায়। তবে রান্নায় খুব বেশি পেঁয়াজ দেওয়া ভালো নয়।
পেঁয়াজে আছে ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৫, বি৬, বি৯ ও ভিটামিন সি। পেঁয়াজ শরীরে শক্তি জোগায়, বিভিন্ন ভিটামিনের গুণ দিয়ে দেহকে সাবলীল রাখতে কাজ করে, হার্টের কার্যক্ষমতা ও কার্ডিভাসকুলার ফাংশন ঠিকঠাক রাখতে সাহায্য করে। উপকার পেতে হলে কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়াই জরুরি, অথবা রস করে খেতে পারেন। আমরা সাধারণত রান্নায় যে পেঁয়াজ খাই, তা দিয়ে উপকার হলেও ঔষধি গুণের উপকার পাওয়া যাবে না।
যাঁদের কার্ডিভাসকুলার ফাংশনে সমস্যা আছে, তাঁরা প্রতিদিন দুই চা–চামচ পেঁয়াজের রস খেলে উপকার পাবেন। হার্টের সমস্যায় প্রতিদিন খাওয়ার সময় স্যালাডে পেঁয়াজ রাখতে পারেন। অনেকেরই চোখের সমস্যা থাকে। নিয়মিত পেঁয়াজের রস খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। এক টেবিল চামচ পেঁয়াজের রস, সমপরিমাণ গরম পানি মিশিয়ে পান করলে পেট পরিষ্কার হবে। এটা দুপুরের খাবারের পরে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
আজকাল অনেকেরই অ্যাজমার সমস্যা থাকে। এক্ষেত্রে উপকার পেতে হলে নিয়মিত দুবেলা এক চা–চামচ করে পেঁয়াজের রস খেতে পারেন। রাতে শুতে যাওয়ার আগে এক কাপ গরম জলে এক চা–চামচের চার ভাগের এক ভাগ হলুদের গুঁড়া, এক চা–চামচ পেঁয়াজের রস মিশিয়ে খেলে অ্যাজমাজনিত সমস্যার উপকার পাবেন। শরীর গরম হয়ে অনেক সময় নাক দিয়ে রক্ত পড়ে। পেঁয়াজের রস নাকে টানলে রক্ত পড়া বন্ধ হবে।
প্রস্রাব ধারণক্ষমতা বাড়াতে এক চা–চামচ পেঁয়াজের রস আধ কাপ জলে মিশিয়ে রাতে ঘুমোনোর আগে খেতে হবে। টানা চার সপ্তাহ এই মিশ্রণ খেলে প্রস্রাবের ধারণক্ষমতা বাড়বে, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। পেঁয়াজের অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান রয়েছে। এই উপাদানগুলি যে কোনও ধরনের সংক্রমণের মোকাবিলা করে। এছাড়াও পেঁয়াজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সালফার, ফাইবার, পটাশিয়াম, ভিটামিন।
পেঁয়াজে ফ্যাট এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কম থাকায় জ্বর, ঠান্ডা লাগার সমস্যা কমে। গ্রীষ্মের মরশুমে পেট গরম হয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। যার জেরে গ্যাস-অম্বল, বদহজম লেগেই থাকে। কাঁচা পেঁয়াজ কিন্তু পেট ঠান্ডা রাখে। গ্রীষ্মে শারীরিক অস্বস্তি দূর করতেও পেঁয়াজের জুড়ি মেলা ভার। দিনে অন্তত ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম পেঁয়াজ খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন পুষ্টিবিদেরা। গ্রীষ্মকালে ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণ এড়াতে কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়া যেতে পারে।
অর্শ নিরাময়েও পেঁয়াজের জুড়ি মেলা ভার। এক চা–চামচ পেঁয়াজের রস সমপরিমাণ জলে মিশিয়ে খেলে ধীরে ধীরে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যাবে। দুপুরে সবজি, স্যালাডে পেঁয়াজ খেতে পারলে কোষ্ঠকাঠিন্য কমতে থাকবে এবং পায়ুপথের যে কোনও সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।