• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

হাইপারথাইরয়েডিজম-কে হেলাফেলা নয়

হাইপারথাইরয়েডিজম, যাকে ওভারঅ্যাকটিভ থাইরয়েডও বলা হয়, শরীরের প্রায় প্রতিটি অঙ্গকে তো বটেই, এমনকী আপনার হৃদস্পন্দনের গতির উপরও প্রভাব বিস্তার করতে পারে। এই রোগ থেকে পরিত্রাণের উপায় জানাচ্ছেন ড. লক্ষ্মী দে, কনসাল্ট্যান্ট এন্ডোক্রিনোলজিস্ট, হেলথকেয়ার স্ক্যান ডায়াগনসটিক্স, কলকাতা।

হাইপারথাইরয়েডিজম কী?

আমাদের শরীরের থাইরয়েড গ্ল্যান্ড যখন ওভারঅ্যাক্টিভ হয়ে গিয়ে বেশি মাত্রায় থাইরয়েড হরমোন নিঃসরণ করে, সেই অবস্থাকে হাইপারথাইরয়েডিজম বলে। থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের কিছু আলাদা আলাদা অসুখ হাইপারথাইরয়েডিজম হিসেবে দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে কমন হল গ্রেভস ডিজিজ আর টক্সিক নডিউল।

Advertisement

এই অসুখ কীভাবে হয়?

Advertisement

এটি একটি অ্যান্টিবডিজনিত অসুখ। আমাদের শরীরে এমন কিছু অ্যান্টিবডি দেখা দেয়, যার কারণে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড অতিসক্রিয় হয়ে যায় এবং অতিরিক্ত পরিমাণে হরমোন তৈরি করে। টক্সিক নডিউল তখন হয় যখন থাইরেড গ্ল্যান্ডের ভিতরের কিছু অংশ অতিমাত্রায় অ্যাক্টিভ হয়ে গিয়ে বেশি পরিমাণে হরমোন তৈরি করতে থাকে ।

কোন পরিস্থিতিতে মানুষকে এই রোগের শিকার হতে হয়?

কিছু জেনেটিক প্রিডিসপোজিশন অর্থাৎ বংশানুক্রমিক প্রবণতা থাকলে, দুটি অসুখই দেখা দেয়। যেমন দেখা গেছে কোনও পরিবারে, বাবা-মা, ভাই-বোন, এমনকী মাসি-পিসি বা কাজিনসদের এই রোগ থাকলে, বাকিদেরও রোগটি হবার সম্ভাবনা বাড়ে। এছাড়া কিছু অভ্যাস যেমন স্মোকিং বা পরিবেশগত কারণ যেমন দূষণ, কিছু রাসায়নিকের প্রভাব, এগুলোও এই অসুখের সম্ভাবনা বাড়ায়।

কোন লক্ষণগুলি দেখা দিলে বুঝতে হবে যে শরীরে এই রোগ বাসা বাঁধছে?

খিদে থাকা সত্ত্বেও দ্রুত ওজন কমে যাওয়া, বুক ধড়ফড় করা, সাধারণ কাজ করতে গিয়ে খুব দুর্বল লাগা বা মাসল উইকনেস, সহজে ক্লান্ত হয়ে পড়া, অনেক সময় পেট খারাপ হওয়া, অতিরিক্ত গরম লাগা, ঘাম হওয়া- এসব হল এই অসুখগুলির লক্ষণ। বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে হার্ট ফেলিওর-এর কারণ হতে পারে এই অসুখ। গ্রেভস ডিজিজে থাইরয়েডের সমস্যা ছাড়াও, চোখ ও ত্বকের কিছু সমস্যা দেখা যায়। চোখ বিস্ফারিত হয়ে যায়, জল পড়ে।

সবার ক্ষেত্রেই কি এই রোগের ঝুঁকি আছে?

দুটি অসুখই মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। মহিলাদের ক্ষেত্রে মেনস্ট্রুয়াল ইরেগুলারিটি বা মিসক্যারেজেরও সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

এই পরিস্থিতিতে কী করা উচিত?

এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে অতি অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন এই কন্ডিশন কিন্তু বেশিদিন চাপা থাকে না। অর্থাৎ চিকিৎসায় দেরি করলে, শারীরিক কষ্ট ক্রমশ বাড়তে থাকবে। চিকিৎসকই আপনাকে গাইড করে দেবেন, কী কী টেস্ট করতে হবে, বা কী কী ওষুধ খেতে হবে। এই অসুখের সম্পুর্ণরূপে নিরাময় সম্ভব। ওষুধ দিয়ে এবং বর্তমানে রোডিও আয়োডিন থেরাপি দিয়ে বা খুব ব্যতিক্রমে সার্জারির মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা করা হয়।

অসুখ ধরা পড়লে কী সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে?

এই অসুখে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা প্রয়োজন, তাই নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। ডাক্তার যে-সব টেস্ট করতে বলেন, করুন। ওষুধ খাওয়া চালিয়ে যেতে হবে। এই অসুখে ধূমপান কিন্তু খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই স্মোকিং একেবারেই পরিত্যাগ করুন।

Advertisement