সামুদ্রিক মাছ শুধু স্বাদে ভালো নয়, এটি আমাদের শরীরের জন্যও খুব উপকারী। অনেকেই স্বাদু (মিষ্টি) জলের মাছ পছন্দ করেন, আবার অনেকে কেবল মুরগির মাংস বা খাসির মাংস খেতে অভ্যস্ত। কিন্তু সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার কিছু বিশেষ উপকারিতা রয়েছে, যা অন্য অনেক খাবারে পাওয়া যায় না। সামুদ্রিক মাছের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা‑৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন বি-১২, ভিটামিন-ডি, আয়রন, সেলেনিয়াম, জিঙ্ক ইত্যাদি উপাদান থাকে। এসব উপাদান আমাদের শরীরের নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে হৃদপিণ্ড, মস্তিষ্ক, চোখ ও হাড়ের সুস্থতায় এই মাছগুলোর জুড়ি নেই।
ওমেগা‑৩ আমাদের রক্তচাপ ঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমায়। ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। সামুদ্রিক মাছ খেলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে। যাঁরা নিয়মিত এই মাছ খান, তাঁরা বয়স বাড়লেও সহজে ভুলে যান না। শিশুদের বুদ্ধির বিকাশেও এই মাছ অনেক উপকার করে।
সামুদ্রিক মাছের মধ্যে থাকা উপাদান চোখের জন্য খুব ভালো। এটি চোখের শুকিয়ে যাওয়া বা ঝাপসা দেখার মতো সমস্যাও দূরে রাখতে সাহায্য করে। গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েরা সামুদ্রিক মাছ খেলে সন্তান সুস্থভাবে বেড়ে ওঠে। শিশুর মস্তিষ্ক, চোখ ও স্নায়ুর সঠিক গঠন হয়। এই মাছে থাকা ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়। ফলে ঠান্ডা-জ্বর, সংক্রমণ বা ছোটখাটো অসুখ সহজে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে না।
সামুদ্রিক মাছ রান্না করা যায় অনেকভাবে – ভাজা, ঝোল, ভাপা বা গ্রিল করে। সপ্তাহে অন্তত দু’বার এই মাছ খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা। শিশু ও বয়স্কদের জন্য ছোট মাছ যেমন সারডিন, ছোট টুনা, ম্যাকারেল খাওয়া ভালো। বড় মাছ যেমন শার্ক বা বড় টুনা মাঝেমধ্যে খেতে হয়, কারণ এতে অতিরিক্ত পারদ থাকতে পারে, যা ক্ষতিকর।
সামুদ্রিক ইলিশ খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনই এতে রয়েছে প্রচুর ওমেগা‑৩ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। ইলিশ খেলে হৃদরোগ ও চর্বি জমার ঝুঁকি কমে। ইলিশ ভাজা, ইলিশ ভাপা কিংবা সরষে ইলিশ – সবই খুব জনপ্রিয় এবং পুষ্টিকর। আজকাল বাজারে ওমেগা‑৩ সমৃদ্ধ বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ সহজেই পাওয়া যায়। টুনা, সারডিন, ম্যাকারেল, ট্রাউট, ক্র্যাব বা ঝিনুক জাতীয় খাবার অনেক শপিং মল বা মাছের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। দামও অনেক সময় মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে থাকে।
সামুদ্রিক মাছ স্বাদে যেমন সুস্বাদু, তেমনি পুষ্টিতেও ভরপুর। ছোট থেকে বড়, সবাই যদি সপ্তাহে অন্তত দু’দিন এই মাছ খাওয়ার অভ্যাস করেন, তাহলে শরীর অনেকটা ভালো থাকবে। হার্ট, চোখ, মস্তিষ্ক, হাড় ও রোগ প্রতিরোধ শক্তি – সব কিছুর উন্নতিতে সামুদ্রিক মাছের বড় ভূমিকা রয়েছে।