তৃণমূল নেতা খুন, ধৃত ২ জনের মধ্যে ১ জন কংগ্রেস প্রার্থী 

Written by SNS June 23, 2023 4:48 pm

পুরুলিয়া, ২৩ জুন –  পুরুলিয়ার আদ্রায় তৃণমূলের সভাপতি খুনে ২ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। এই দুই ব্যক্তির মধ্যে একজন কংগ্রেস কর্মী আরশাদ হোসেন, যিনি এবার বেকো গ্রামপঞ্চায়েতের কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা করেছেন। অন্য অভিযুক্ত মহম্মদ জামাল।বৃহস্পতিবার রাত থেকে এই খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত পুরুলিয়ার আদ্রা। শুক্রবার সকাল থেকে আদ্রা শহরে অঘোষিত বনধ হয় । রাস্তার উপর টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তৃণমূল কর্মীরা। বন্ধ রাখা হয় আদ্রা শহরের বেশিরভাগ দোকানপাট। যানবাহনও কম, অশান্তির আশংকায় থমথমে পরিস্থিতি। গ্রেফতারের পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়।  

ধৃতদের শুক্রবার রঘুনাথপুর মহকুমা আদালতে হাজির করানো হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতদের ১৪ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানানো হতে পারে। জেলা পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আদ্রা থেকে পুলিশ ও জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের আদালতে হাজির করিয়ে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হবে। তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তিন জনকে আমরা চিহ্নিত করেছি। বাকিটা ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যাবে।’’

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যে ৭টা নাগাদ পুরনো বাজারের তৃণমূল পার্টি অফিসে বসেছিলেন তৃণমূল নেতা ধনঞ্জয় চৌবে। সঙ্গে তাঁর নিরাপত্তারক্ষী হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন রাজ্য পুলিশের কনস্টেবল শেখর দাসও। আচমকা বাইকে করে তিন দুষ্কৃতী ওই পার্টি অফিসে আসে। পার্টি অফিসে ঢুকেই তারা ধনঞ্জয়বাবুকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে থাকে। মোট সাত রাউন্ড গুলি চালানো হয় বলে দাবি তৃণমূলকর্মীদের। ধনঞ্জয়বাবুর দেহে চারটি গুলি লাগে। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে কনস্টেবল শেখর দাসও গুলিবিদ্ধ হন। দু’জনকে রঘুনাথপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ধনঞ্জয়বাবুর মৃত্যু হয়। এদিকে দুর্গাপুর মিশন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন কনস্টেবল শেখর দাস। সেখানে তাঁর চিকিৎসা চলছে।

সূত্রের খবর, অভিযুক্ত আরশাদ আগে তৃণমূলকর্মী ছিলেন। দলের কাছ থেকে পঞ্চায়েতের টিকিট না পেয়েই তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন। এর আগেও ভোটের সময়ে আদ্রায় খুনের ঘটনা ঘটেছে। কয়েক বছর আগে এলাকায় জনপ্রিয় তৃণমূল কর্মী হামিদ আনসারি খুন হন। সেই খুনের কিনারা আজও হয়নি।

ভরসন্ধেয় দাপুটে নেতাকে গুলিতে ঝাঁজরা করে দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার থেকেই তুমুল উত্তেজনার সৃষ্টি হয় আদ্রায়। রাতেই মহম্মদ জামাল ও আরশাদ হোসেনের নামে পুলিশে লিখিত অভিযোগ করে মৃতের পরিবার। শুরু হয় তল্লাশি। গতকাল সন্ধে থেকে পুরুলিয়ার সবকটি নাকা পয়েন্টে চেকিং চালানো হয়। আনা হয় স্নিফার ডগ। দীর্ঘ তল্লাশির পর শুক্রবার ভোরে গ্রেপ্তার করা হয় ২ জনকে। 

তবে এই খুনের নেপথ্যে রাজনীতি, নাকি এর সঙ্গে সিন্ডিকেট ব্যবসার যোগ রয়েছে ,  নাকি পুরনো কোনও শত্রুতার জেরে প্রাণ গেল ধনঞ্জয় চৌবের, তা এখনও রহস্য। এ বিষয়ে পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার বলেন, “এফআইআরে নাম থাকা ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি তুলেছে কংগ্রেস। দলের জেলা সভাপতি নেপাল মাহাতো বলেন, ‘‘খুনের ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক। আমাদের দলের কেউ যদি সত্যিই এই ঘটনায় জড়িয়ে থাকেন, তাঁর অবশ্যই শাস্তি পাওয়া উচিত। কিন্তু এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। আর নিরপেক্ষ তদন্ত করতে পারে সিবিআই।’’