রাফায়েলের গোপন তথ্য ফাঁস জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক হবে

রাফায়েল মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পুনর্বিবেচনার আবেদন ব্যাপকহারে প্রচারিত হয়েছে এবং তার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিরক্ষা দফতরের কিছু নথি প্রকাশ্যে এসেছে, যা দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে বিপজ্জনক।

Written by SNS March 14, 2019 8:54 am

রাফায়েল যুদ্ধবিমান (Photo: iStock)

নিজস্ব প্রতিনিধি – রাফায়েল মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পুনর্বিবেচনার আবেদন ব্যাপকহারে প্রচারিত হয়েছে এবং তার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিরক্ষা দফতরের কিছু নথি প্রকাশ্যে এসেছে, যা দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে বিপজ্জনক, তাই এই আবেদন খারিজ করুক বলে বুধবার শীর্ষ আদালতে এক হলফনামা জমা দিয়ে আবেদন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। মোদি সরকারের এই আবেদনে আরও বলা হয়েছে, যে তথ্যগুলি জমা পড়েছে, সেগুলি রাফায়েল ক্রয় চুক্তির সম্পূর্ণ ছবি তুলে ধরে না, কারণ তথ্যগুলি অসম্পূর্ণ এবং এর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে জাতীয় নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষার। সেই কারণে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে দেওয়া হোক এবং তথ্যগুলি সুপ্রিম কোর্টের রেকর্ড থেকে বাদ দেওয়া হোক। কেন্দ্রীয় সরকার আরও দাবি করেছে, যে প্রমাণ আদালতে পেশ করা হয়েছে, তা সরাসরি এবং সরকারের অনুমতি ছাড়া এগুলি আদালতে প্রশ্ন করা যায় না। প্রতিরক্ষা সচিব সঞ্জয় মিত্র আদালতকে জানিয়েছেন আবেদনকারী যে তথ্যগুলি আদালতে জমা করেছেন, সেটি ভারতের যুদ্ধ বিমানের ক্ষমতা সংক্রান্ত, এর ফলে জাতীয় সুরক্ষা বিপদগ্রস্ত হতে পারে। কেন্দ্রের তরফে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৌয়ের বেঞ্চকে জানানো হয়েছে প্রতিরক্ষা দফতরের তথ্যগুলি কীভাবে ফাঁস হল সে বিষয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু হয়ে গেছে। যারা তথ্য ফাঁসের সঙ্গে জড়িত, তারা ভারতীয় দণ্ডবিধির অধীনে শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। শুধু তাই নয়, যারা সেই তথ্যগুলির ফটোকপি করেছে, তারা জাতীয় সুরক্ষার প্রশ্নকে বিপদের সামনে দাঁর করিয়ে দিয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার আগের শুনানির সময় অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল রাফায়েল রায়ের পুনর্বিবেচনার আবেদনকে খারিজ করার অনুরধ পেশ করে বলেছিলেন আবেদনকারীর মামলার ভিত্তি হচ্ছে চুরি করা তথ্য। ব্রিটিশ আমলের অফিসিয়াল সিকরেট আইন তুলে তিনি বলেছিলেন, এটা একটা ফৌজদারি অপরাধ। তখন সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ অ্যাটর্নি জেনারেলকে প্রশ্ন করেছিল, সরকার কি জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নের আড়ালে মুখ লুকোতে চাইছে, যখন বিষয়টা হল গুরুতর অপরাধ এবং দুর্নীতির?

সুপ্রিম কোর্টে সরকারের অবস্থানকে কটাক্ষ করে কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধি বলেছিলেন, সরকারের নতুন মন্ত্র হল ‘গায়েব হো গয়া’ (হারিয়ে গেছে)। নরেন্দ্র মোদিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাহুল আরও বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর সৎসাহস থাকলে রাফায়েল নিয়ে তদন্তের মুখোমুখি হন। পরে আবার আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল বলেন যে, তথ্যগুলি নিরাপত্তা মন্ত্রক থেকে চুরি হয়ে যায়নি, সেগুলি মূল তথ্যের ফটোকপি। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যশবন্ত সিনহা এবং অরুণ শৌরি ও আইনজীবী প্রশান্তভূষণ রাফায়েল মামলায় সুপ্রিম কোর্টের সরকারকে ক্লিনচিট দেওয়ার রায়ের পুনর্বিবেচনা চেয়ে আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন। সেটি শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্টে গৃহীত হয়েছিল। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের রাফায়েল সংক্রান্ত যে তথ্যের উল্লেখ করা হচ্ছে, সেটি সিরিজ করে প্রকাশিত হয়েছিল দ্য হিন্দু সংবাদপত্রে। যার ফলে বিড়ম্বনায় পড়েছিল মোদী সরকার। দ্য হিন্দু গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান এন রাম পরিস্কার বলেছিলেন, তাঁরা জনস্বার্থে কাগজে বিষয়টা ছেপেছিলেন এবং তার সূত্র জানাতে তাঁরা বাধ্য নন। এর উত্তরে অর্থমন্ত্রী অরুন জেটলি বলেছিলেন, প্রেসের স্বাধীনতা জাতীয় নিরাপত্তার চেয়ে বড় হতে পারে না।