রাজনৈতিক বিরোধ ভুলে মোদির মুখে নেহরুর স্তুতি 

Written by SNS September 18, 2023 7:58 pm

দিল্লি, ১৮ সেপ্টেম্বর – সোমবার শুরু হল সংসদের ৫ দিনের বিশেষ অধিবেশন। স্বাধীনতার ৭৫ বছরকে সঙ্গী করে নানা ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থেকেছে পুরোনো সংসদ ভবন। এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পুরোনো সংসদ ভবনের ইতিহাস ও ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের উল্লেখ করতে গিয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং তাঁর মন্ত্রীসভার প্রশংসা করেন। শুধু নেহরু নন, পাশাপাশি লালবাহাদুর শাস্ত্রী, ইন্দিরা গান্ধি এবং মনমোহন সিংয়ের অবদানের কথাও নিজের ভাষণে তুলে ধরেন  প্রধানমন্ত্রী। সোমবারই শেষবারের মতো অধিবেশন বসল দেশের পুরোনো সংসদ ভবনে।  প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন, সোমবারই ব্রিটিশ আমলে তৈরি সংসদ ভবনে শেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মঙ্গলবার থেকে অধিবেশন বসবে নতুন ভবনে। অধিবেশনে সোনিয়া গান্ধি, রাহুল-সহ সব দলের সাংসদেরাই উপস্থিত ছিলেন ।

সোমবার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীদের স্মরণ করতে গিয়ে মোদি প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর নাম উল্লেখ করে বলেন, দেশের জন্য ওঁর অনেক অবদান রয়েছে। গণতন্ত্রের বিকাশে তাঁর অবদান অনেক। বলেন, স্বাধীনতা প্রাপ্তির অন্তিম মুহূর্তে পণ্ডিত নেহরুর ভাষণ আমাদের প্রেরণা জুগিয়েছে। তিনি বলেছিলেন, মধ্যরাতে যখন গোটা পৃথিবী ঘুমিয়ে তখন স্বাধীন ভারত জেগে উঠবে।’ ইন্দিরা গান্ধিকে নিয়ে মোদি বলেন, ‘এই সংসদ বাংলাদেশের মুক্তির জন্য ইন্দিরা গান্ধির পাশে দাঁড়িয়েছিল।’ এরপর জরুরি অবস্থার উল্লেখ করে মোদি বলেন, ‘এই সংসদ ভবন যেমন জরুরি অবস্থা দেখেছে, তেমনই গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত হতেও দেখেছে।’ 
মোদী বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে ভারতকে অনেকে সন্দেহের চোখে দেখেছে।  কিন্তু সেই সব সন্দেহকে দূরে সরিয়ে রেখে ভারতকে বিশ্বের কাছে গ্রহনযোগ্য করে তুলেছে এই সংসদ ভবন। এই কাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে পণ্ডিত নেহরু, লালবাহাদুর শাস্ত্রী, ইন্দিরা গান্ধি , নরসিমা রাও, এবং অটলবিহারী বাজপেয়ী জি’র মন্ত্রিসভার।’      

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের নানা ক্ষেত্রে ব্যর্থতার জন্য পদে পদে প্রথম প্রধানমন্ত্রীর দিকে আঙুল তুলেছেন। মোদির এই সমালোচনা নিয়ে বারংবার সরব হয়েছে বিরোধীরা। সোমবার সংসদের ভাষণে প্রধানমন্ত্রীর মুখে নেহরুর অবদানের উল্লেখ আলাদা মাত্রা পেয়েছে। 

বাংলাদেশে মুক্তি যুদ্ধের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী পূর্বসূরি ইন্দিরা গান্ধির কথা উল্লেখ করেছেন। বলেন, ইন্দিরাজির নেতৃত্বে এই সংসদে বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ভারত মান্যতা দিয়েছিল। এদিন জরুরি অবস্থারও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। দুই প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই ও বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংয়ের নাম উল্লেখ করে মোদি বলেন, ওঁরা সারা জীবন কংগ্রেসে রাজনীতি করে কংগ্রেসকে হারিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। মোদি প্রশংসা করেন কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত নরসিংহ রাওয়ের। বলেন, উনি নয়া অর্থনীতি চালু করে ভারতকে অনেক দূর এগিয়ে দিয়েছিলেন।

তাঁর কথায়, পুরনো সংসদ ভবনের বহু শোকেরও সাক্ষী। যেমন, তিন প্রধানমন্ত্রীকে তাঁদের কার্যকালে হারিয়েছিল এই সংসদ ভবন।  প্রত্যেকেই কংগ্রেস সরকারের নেতৃত্বে ছিলেন। যথাক্রমে জওহরলাল নেহরু, লালাবাহাদুর শাস্ত্রী এবং ইন্দিরা গান্ধি।  তাঁর কথায়, অগুন্তি সংসদ সদস্যের অবদানে গড়ে উঠেছে এই দেশ, যা ভারতীয় গণতন্ত্রের গর্ব।
পুরোনো সংসদ ভবনে শেষদিন প্রধানমন্ত্রী নানা ঐতিহাসিক মুহূর্তের উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বিশ্বের সবথেকে বড় নিখিত সংবিধান তৈরির সাক্ষী থেকেছে ভারতের এই সংসদ ভবন। নেওয়া হয়েছে বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।  এই ৭৫ বছরে সংসদের উভয় কক্ষে ৭ হাজার সাংসদ নিজেদের অবদান রেখেছেন। পুরোনো ভবন দেশের বর্তমান ও আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা দেবে।   
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে এসেছে জি-২০ সম্মেলনের সাফল্য। জি সম্মেলনকে দেশবাসীর সাফল্য বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই সম্মেলনের সাফল্য কোন ব্যক্তি বা দলের সাফল্য নয়, এই শীর্ষ সম্মেলন প্রতিটি দেশবাসীর সাফল্য। বিশ্বের কাছে দেশের সম্মান বৃদ্ধিতে সমানভাবে অবদান রেখেছেন দেশের সমস্ত নাগরিক।

সোমবার থেকে শুরু হয়েছে সংসদের বিশেষ অধিবেশন। তার আগে লোকসভার বাইরে দাঁড়িয়েই মিনিট পাঁচেকের জন্য ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। একাধিক বিষয় উঠে আসে তাঁর বক্তব্যে। মোদি বলেন, “এই বিশেষ অধিবেশন হয়তো দৈর্ঘ্যে অনেক ছোট। কিন্তু এই বিশেষ অধিবেশনের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ এই অধিবেশনেই বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ”