মনোনয়নের শেষপর্বে মৃত্যুমিছিল 

Written by SNS June 15, 2023 8:38 pm
উত্তর দিনাজপুর, ১৫ জুন – মনোনয়নের শেষ দিনেও রক্তাক্ত বাংলা। মনোনয়নকে কেন্দ্র করে একদিকে যেমন অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়, তেমনই রক্ত ঝরল উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় ৷ এদিন মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বোমা ও গুলি যথেচ্ছ ব্যবহারে প্রাণ গেল ২ জনের। চোপড়ায় মৃত্যু হল ১ সিপিএম কর্মীর, ভাঙড়ে প্রাণ গেল ১ আইএসএফ কর্মীর ও ১ তৃণমূল কর্মীর । চোপড়ায় গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ২ জন। অভিযোগ আহত হয়েছেন একাধিক বাম ও কংগ্রেস কর্মী।
এদিকে ভাঙড়ে অশান্তি নিয়ে আইএসএফকেই দায়ী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চোপড়ার অশান্তির সঙ্গে তৃণমূলের কোন যোগ নেই বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিকে ভোটকে কেন্দ্র করে হিংসার ঘটনায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে ফোন করে খবর নেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ পর্বে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়া। বৃহস্পতিবার চোপড়ায় বাম- কংগ্রেস জোটের মিছিলে হামলার অভিযোগ জেরে গুলিবিদ্ধ ৩ জন। অভিযোগ, তাঁরা মনোনয়ন পত্র জমা দিতে যাওয়ার পথে হামলা করে তৃণমূল কংগ্রেস। এই ঘটনার জেরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে চোপড়ার কাঠালগুড়িতে। গুলিবিদ্ধ ৩ জনকে ইসলামপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর একজনকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয় ।
মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে গোটা চোপড়া জুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করা হয়। ব্লক অফিসের সামনে ১৪৪ ধারা জারি । কিন্তু তা সত্ত্বেও বড় হামলা ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ বামেদের। হামলা হয় ব্লক অফিস থেকে কিছু দূরের রাস্তায়। বাম ও কংগ্রেস প্রার্থীরা চোপড়ায় মিছিল করে মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার সময় আচমকাই মিছিলের উপর গুলি চালানো হয় বলে অভিযোগ। এতে ছড়িয়ে পড়েন মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়া বিরোধী প্রার্থীরা। অভিযোগ, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই মিছিল লক্ষ্য করে গুলি চালায়।  বামেদের অভিযোগ, মনোনয়ন জমা দিতে না দেওয়ার জন্যই পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায় তৃণমূল কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীরা।  এই হামলার জেরে ৩ জন গুলিবিদ্ধ হন , আহত হন বেশ কয়েকজন। যাঁরা গুলিবিদ্ধ হন তাদের কাঁধে করে স্থানীয় চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে যাওয়ার পরে একজনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। তৃণমূলের চোপড়ার বিধায়ক হামিদুল রহমান দাবি করেন, বামেদের নিজেদের মধ্যে গোলমালের জেরেই গুলিচালনার ঘটনা ঘটেছে। তাঁর কথায়, ‘‘ ওরা নিজেদের মধ্যেই মারামারি করেছে। এখন তৃণমূলের নামে দোষ দিয়ে মানুষের সহানুভূতি কাড়ার চেষ্টা হচ্ছে। তৃণমূল গুলি-বোমার রাজনীতি করে না।’’
এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয় তীব্র রাজনৈতিক তরজা। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু দাবি করেন, হামলার ঘটনায় ২ সিপিএম কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘মনোনয়ন পর্বেই যদি এত অশান্তি, তাহলে শেষ পর্যন্ত কি হবে তা ভেবে শিউরে উঠছি। কমিশনের উচিত চেয়ারের মর্যাদা রাখা। কমিশন তার কাজ করছে না। মনোনয়নের শুরুতেই মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের একজন কর্মীকে খুন হতে হয়েছে। চোপড়ায় দুই জন সিপিআইএম কর্মী খুন হয়েছে। ভাঙ্গড়ে এক আইএসএফ কর্মীকে মারা হয়েছে। এখনও মনোনয়ন প্রত্যাহার বাকি, তারপর রয়েছে প্রচারপর্ব। চাপ দিয়ে বিরোধীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করানোর চেষ্টা করা হবে। সে কারণে বলছি, কমিশন তার নিজের কাজ করে দেখাক।’      
 সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “এটাই বাংলার আসল চেহারা।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীও ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন। বলেন, “অশান্তির শুরু হয়েছিল আগেই। চোপড়ায় এর আগেও কংগ্রেস নেতাদের অপহরণ করা হয়। একটি স্কুলে আটকে রাখা হয়। তৃণমূলই অশান্তিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমি চিঠি লিখে আগেই অশান্তির আশঙ্কার কথা জানিয়েছি। পুলিশ বিড়ালকে যদি মাছ পাহারা দিতে দেয়, তাতে যা হওয়ার তাই হচ্ছে।” তৃণমূল বিধায়ক হামিদুর রহমান, বিরোধীদের অভিযোগ নস্যাৎ করেছেন।

গুলিতে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিশাল পুলিশবাহিনী। আরও কঠোর করা হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। 

এদিকে বৃহস্পতিবারও রণক্ষেত্রের চেহারা নিল ভাঙড়। মনোনয়নের বলি দুটি তরতাজা প্রাণ। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষের দিন সকাল থেকেই থমথমে ছিল ভাঙড়ের পরিস্থিতি। ভাঙড়ের দু’টি বিডিও অফিসেই জড়ো হয়েছিলেন তৃণমূল এবং আইএসএফ-এর কর্মীরা। এরপরেই আচমকা অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। তৃণমূল এবং আইএসএফ-এর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে শুরু হয় বোমা ও গুলির লড়াই। রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজার।  দুই পক্ষের লাগাতার হামলার জেরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় এক আইএসএফ কর্মীর। বিপরীতে হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় ১ তৃণমূল কর্মীরও। মৃত তৃণমূল কর্মী রশিদ মোল্লা জীবনতলার বাসিন্দা। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কলকাতার চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। সংঘর্ষে জখম হন দুই তৃণমূল কর্মীও। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে কাঁদানে গ্যাসও  ছোড়ে পুলিশ। 

কাঁঠালিয়া মোড়ে তৃণমূল এবং আইএসএফের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। যথেচ্ছভাবে বোমাবাজি হয়। বোমার আওয়াজে সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা।  অভিযোগ ওঠে গুলি চালানোর। আইএসএফ নেতৃত্বের দাবি, গুলির বৃষ্টির মধ্যে পড়ে মৃত্যু হয় মহম্মদ মহিউদ্দিন মোল্লা নামে এক আইএসএফ কর্মীর। এরপরই বিজয়গঞ্জ বাজারে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে এলাকায় মোতায়েন করা হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। চলছে পুলিশি টহলদারিও।