জনরোষে ম্লান চিনের সূর্য, ‘হয় স্বাধীনতা, নয় মৃত্যু’ দাবিতে রাজপথে হাজার হাজার মানুষ

Written by SNS November 29, 2022 6:08 pm

বেইজিং, ২৯ নভেম্বর– আগুন লাগিয়েছে কোভিড সংক্রমণ তার ওপর বিষফোঁড়া কঠোর বিধি নিষেধ। আর তাতেই উত্তাল চিন। আর কোনো বিধি -নিষেধ মানতে নারাজ চিনা জনগণ। রাস্তায় নেমে ‘হয় আমাকে স্বাধীনতা দাও, নয়তো মৃত্যু দাও’ স্লোগান দিতে শুরু করেছেন চিনা নাগরিকরা। বিক্ষোভকারীদের সিংহভাগই নবীন প্রজন্মের প্রতিনিধি। লকডাউন থেকে মুক্তিই কেবল নয়, তাঁদের দাবি সর্বক্ষেত্রে সেদেশের কমিউনিস্ট সরকার যেভাবে সেন্সরশিপ চালাচ্ছে, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করছে তা বন্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ইস্তফাও চাইছেন বিক্ষোভকারীরা।

এদিকে এই আন্দোলন রুখতে মরিয়া বেজিং প্রশাসন। ইতিমধ্যেই সেদেশের পুলিশবাহিনীও পথে নেমেছে বহু জায়গায়। অন্তত একজনের গ্রেফতারির খবরও পাওয়া গিয়েছে। সব মিলিয়ে আন্দোলনকে ঘিরে উত্তপ্ত চিন। প্রসঙ্গত, বেজিং-সহ একাধিক শহরে নতুন করে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার ছুঁইছুঁই।

তাছাড়াও দিন কয়েক আগে উরুমকি শহরের একটি বাড়িতে আগুন লেগে ১০ জনের মৃত্যু হয়। অভিযোগ, বহুতলটির চারপাশে লকডাউন থাকায় সেই বহুতলের বাসিন্দারা পালিয়ে প্রাণে বাঁচতে পারেননি। লকডাউন মানবেন না, এই অবস্থানে অনড় রয়েছেন চিনের নাগরিকরা। চিনা প্রশাসনের নীতির বিরুদ্ধে লাগাতার প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন তাঁরা।

চিন প্রশাসনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ অবশ্য নতুন নয়। গত শতাব্দীর আটের দশকের একেবারে শেষে তিয়েন আন মেন স্কোয়ারে যেভাবে পড়ুয়াদের উপরে নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছিল। কিন্তু সেই খবর বাকি বিশ্বের কাছে পৌঁছনো আটকাতে মরিয়া ছিল তৎকালীন সরকার। যদিও শেষ পর্যন্ত জানা যায়, হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন সেই ঘটনায়। এভাবেই বারবার চিনা প্রশাসনের জনতার কণ্ঠরোধের প্রবণতা সামনে এসেছে। উইঘুর মুসলমানদের উপরেও দমনপীড়নের অভিযোগ রয়েছে।

এবার কোভিড নিয়ন্ত্রণ করতে অতিরিক্ত কড়াকড়ি ও লাগাতার লকডাউন ঘোষণায় যেভাবে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে, তাতে নতুন করে রোষ ছড়িয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। এক বিক্ষোভকারীকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ”আমি মনে করি কোনও সমাজে কাউকে কথা বলার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা যায় না। একটা সমাজে কেবল একটাই কণ্ঠস্বর থাকবে তা হতে পারে না, আমরা চাই নানা কণ্ঠের সম্মিলিত আওয়াজ।” এই বক্তব্যই যেন গোটা দেশের সাধারণ মানুষের দাবি। যা প্রবল হয়ে উঠছে জিনপিংয়ের শাসনাধীন চিনে।