পৃথিবীর কক্ষপথের মায়া কাটিয়ে  ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট ১-এর পথে আদিত্য 

Written by SNS September 18, 2023 7:45 pm

বেঙ্গালুরু, ১৮ সেপ্টেম্বর –  ইসরোর সৌরযান আদিত্য এল ১ মহাকাশে তার কাজ শুরু করে দিল। ইসরোর সৌরযান পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে বিদায় নিয়ে সূর্যের দিকে ছুটছে।  তার আগেই বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করল আদিত্য। যান্ত্রিক সেন্সরগুলি  পৃথিবী থেকে ৫০ হাজার কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে সুপার-থার্মাল এবং শক্তিশালী আয়ন এবং ইলেকট্রন পরিমাপের্ কাজ শুরু করেছে। এই তথ্য বিজ্ঞানীদের পৃথিবীর চারপাশের কণার আচরণ বুঝতে সাহায্য করবে।  

আদিত্যযান উৎক্ষেপণের পর এখনও পর্যন্ত চারবার খুব সহজেই কক্ষপথ পরিবর্তনে সফল হয়েছে । এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ভোররাতে  সফল ভাবে কক্ষপথ বদল করে আদিত্য। এই আবহে পৃথিবীর মায়া অনেকটাই কাটিয়ে ফেলে ইসরোর এই মহাকাশযান। এরপর সোমবার শেষবারের মতো কক্ষপথ বদল করে নিজের গন্তব্যের দিকে ছুটবে আদিত্য। 

ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা ইসরোর তরফে জানানো হয়েছে, আপাতত সৌরযান স্বাভাবিক রয়েছে। সব যন্ত্রাংশ সঠিক ভাবে কাজ করছে। এই পরিস্থিতিতে এদিন বিনা বাধাতেই কক্ষপথ বদলের প্রক্রিয়া সফল হয়। ভারতীয় সময় গভীর রাতে কক্ষপথ বদল সম্পন্ন হলে ইসরোর তরফে সেই সংক্রান্ত আপডেট দেওয়া হবে।  ১৯ সেপ্টেম্বর ভোররাত ২ টোর সময় কক্ষপথ বদল করবে আদিত্য। 
 
বেঙ্গালুরু, মরিশাস ও আন্দামানে নিজেদের গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে কক্ষপথ বদলের বিষয়টির ওপর নজর রাখবে ইসরো। প্রসঙ্গত, সান-আর্থ সিস্টেমের হ্যালো অরবিটের ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট ১-এ পৌঁছতে এই আদিত্যকে মহাকাশে পাঠানো হয়েছে । পৃথিবী থেকে এই স্থান ১.৫ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে। এখান থেকে সূর্যের নানান তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হবে বলে আশা বিজ্ঞানীমহলের। এই ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট ১-এ পৌঁছলে সূর্যের ওপর নজরদারি চালাতে পারবে আদিত্য। গন্তব্যে পৌঁছতে আদিত্য এল ১-এর লাগবে  আরও প্রায় ১০৯ দিন।

আদিত্য এল-১ মিশনের  এই ‘এল-১’ পয়েন্ট হল ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট। পৃথিবী ও সূর্যের মাঝামাঝি এই পয়েন্টে গিয়ে পৃথিবী ও সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ব্যালান্স হয়ে যায়। এখানে গেলে স্পেসক্রাফট খুব কম জ্বালানিতে দীর্ঘসময় স্থির হয়ে থাকতে পারে। আর ওই পয়েন্ট থেকে সূর্যকে কাছ থেকে দেখা সম্ভব। এই ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট এমন এক মধ্যবর্তী জায়গা যেখানে সূর্য ও পৃথিবীর আকর্ষণ সরাসরি পড়বে না মহাকাশযানে । ফলে সেটি সূর্যের দিকে এগিয়ে যাবে না আবার পৃথিবীর দিকে পিছিয়েও আসবে না। সূর্যের গনগন আগুনে তেজ কোনও ক্ষতি করতে পারবে না । স্থির হয়ে সূর্যের ছবি তুলবে, সূর্যের করোনার খবর পাঠাবে পৃথিবীর গ্রাউন্ড স্টেশনে।

আদিত্য এল১ যানটিতে মোট সাতটি পেলোড আছে। এগুলি সূর্যের বিভিন্ন স্তর খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণের জন্য তৈরি করা হয়েছে। ফটোস্ফিয়ার থেকে ক্রোমোস্ফিয়ার কিংবা সূর্যের একেবারে বাইরের দিকের স্তর করোনা পর্যবেক্ষণ করবে এই পেলোডগুলি। ভিসিবল এমিশন লাইন করোনাগ্রাফি এবং সোলার আল্ট্রাভায়োলেট ইমেজিং টেলিস্কোপনামে দু’টি মূল পেলোড রয়েছে । ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট পৌঁছানোর পরে এই ভিইএলসি পেলোড প্রতিদিন ১,৪৪০টি ছবি তুলে পাঠাবে।

বিভিন্ন সৌর বিস্ফোরণ ঘটে থাকে বা সৌর ঝড় হয় তাও খতিয়ে দেখা হবে। উল্লেখ্য, এই সৌরঝড়ের জেরে অনেক সময়ই পৃথিবীর ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্যাটেলাইটের কাজ কর্মে সমস্যা তৈরি হয়। এই আবহে আদিত্যর এই পরীক্ষা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ হতে চলেছে।
মঙ্গলবার পঞ্চমবার কক্ষপথ বদলানোর সঙ্গে সঙ্গেই পৃথিবীর ‘মায়া’ কাটিয়ে মহাশূন্যে পাড়ি দেবে আদিত্য। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বাইরে বেরিয়ে সূর্যের দিকে এগিয়ে চলবে ১৫ লক্ষ কিমি দূরে এল ১ পয়েন্টে  ।