• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

হিংসাদীর্ণ মণিপুরে চার মাসে মৃত্যু ১৭৫ জনের, নিখোঁজ ৩৩

ইম্ফল, ১৫ সেপ্টেম্বর –  মণিপুরে গত চার মাসের হিংসায় মৃত্যু হয়েছে  ১৭৫ জনের , নিখোঁজ ৩৩ জন।  এই পরিসংখ্যান দিয়েছে মণিপুর সরকারের পুলিশ প্রশাসন। গত চার মাসে মোট ১ হাজার ১০৮ জন আহত হয়েছেন।  মোট ৪ হাজার ৭৮৬টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে এবং ৩৮৬ টি ধর্মীয় স্থান ও স্থাপত্য ধ্বংস করা হয়েছে। আইজিপি প্রশাসন কে জয়ন্ত বলেন,

ইম্ফল, ১৫ সেপ্টেম্বর –  মণিপুরে গত চার মাসের হিংসায় মৃত্যু হয়েছে  ১৭৫ জনের , নিখোঁজ ৩৩ জন।  এই পরিসংখ্যান দিয়েছে মণিপুর সরকারের পুলিশ প্রশাসন। গত চার মাসে মোট ১ হাজার ১০৮ জন আহত হয়েছেন।  মোট ৪ হাজার ৭৮৬টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে এবং ৩৮৬ টি ধর্মীয় স্থান ও স্থাপত্য ধ্বংস করা হয়েছে। আইজিপি প্রশাসন কে জয়ন্ত বলেন, ‘১৭৫ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে তাঁদের মধ্যে ৯ জনের দেহ এখনও চিহ্নিত করা যায়নি।  বাকি দেহগুলির মধ্যে ৭৯ জনের দেহ পরিজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।  বাকি ৯৬ টি দেহ শনাক্ত হলেও কেউ নিতে আসেনি।

তবে হিংসাদীর্ণ মণিপুরে পুলিশ-প্রশাসনের ঘুম কেড়ে নিয়েছে সন্ত্রাসবাদীরা। লুট হয়েছে সরকারি অস্ত্র। মণিপুরে বিভিন্ন থানা,  জেলা পুলিশের অস্ত্রাগার থেকে ৫,৬৬৮টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং প্রায় ৫ লক্ষ গোলাগুলি লুট হয়েছে । পুলিশ রিপোর্ট জানাচ্ছে, এর মধ্যে ১,৩২৯টি আগ্নেয়াস্ত্র, ১৫ হাজার ৫০টি কার্তুজ উদ্ধার হয়েছে। বাজেয়াপ্ত হয়েছে ৪০০টি বোমাও। রাজ্যে শান্তি ফেরানোর পথে এই সব উধাও হয়ে যাওয়া আগ্নেয়াস্ত্র বড় অন্তরায় বলে মনে করছে মণিপুর পুলিশ। এই পরিস্থিতিতে মেইতেই এবং কুকি অধ্যুষিত এলাকায়  ১২৮টি চেকপোস্ট বসিয়ে শুরু হয়েছে কড়া নজরদারির কাজ। মণিপুরের আইজিপি অপারেশনস আই কে মুইভা বলেছেন, ‘মণিপুর কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।  আমরা সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করছি, পুলিশ-প্রশাসন, কেন্দ্রীয় বাহিনী সারাক্ষণ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে চেষ্টা চালাচ্ছে।’ মণিপুর পুলিশের ওই আধিকারিক জানান, পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর ১ হাজার ৩৫৯টি আগ্নেয়াস্ত্র খোওয়া গেছে , পাল্টা সন্ত্রাসবাদীদের কাছ থেকে ১৫ হাজারেরও বেশি অস্ত্র উদ্ধার করেছে বাহিনী।
এই হিংসাত্মক পরিস্থিতির মধ্যেও কেন্দ্রীয় বাহিনী অসম রাইফেলসকে শান্তিরক্ষার কাজ করতে দিতে নারাজ মণিপুরের সংখ্যাগুরু মেইতেইরা।

Advertisement

মণিপুর থেকে অসম রাইফেলস সরানোর দাবিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ দ্বারস্থ হয়েছে মেইতেই সংগঠনগুলি। তাদের অভিযোগ, ওই কেন্দ্রীয় বাহিনী ধারাবাহিক ভাবে কুকিদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে। মেইতেই জনগোষ্ঠীর নাগরিক সংগঠনগুলির যৌথমঞ্চ বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করে মণিপুর থেকে অসম রাইফেলস প্রত্যাহারের দাবি তুলেছে।
প্রসঙ্গত, অগস্ট মাসে মণিপুরের ৪০ জন মেইতেই বিধায়ক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে পাঠানো চিঠিতে অসম রাইফেলসের বদলে মণিপুরে কোনও ‘বিশ্বাসযোগ্য নিরাপত্তা বাহিনী’ মোতায়েন করার দাবি জানান। মেইতেইদের অভিযোগ, কুকি জনগোষ্ঠীর সদস্যরা পাহাড় থেকে হামলা চালাচ্ছে। তাদের গুলিতে বহু কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু এরপরও কুকিদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না। মণিপুর হিংসার গোড়ার দিন থেকেই বার বার বিতর্কে জড়িয়েছে অসম রাইফেলস। তাদের বিরুদ্ধে কুকিদের মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে মেইতেইরা। মেইতেই সংগঠনগুলির অভিযোগ, অসম রাইফেলসের প্রত্যক্ষ মদতেই মায়ানমার সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ চলছে রাজ্যে।
কিছু দিন আগে মণিপুর পুলিশও অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছিল অসম রাইফেলসের বিরুদ্ধে। মেইতেইদের উপরে অত্যাচারে অভিযুক্ত কুকি সংগঠনগুলিকে আড়াল করায় অভিযুক্ত হয়েছেন অসম রাইফেলসের আধিকারিকেরা। যদিও তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে অসম রাইফেলস। ইতিমধ্যেই মণিপুরের কয়েকটি এলাকা থেকে অসম রাইফেলস প্রত্যাহার করে সিআরপিএফ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। কোকোমির মুখপাত্র খুরাইজাম অথৌবা জানিয়েছেন, এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছেও একই দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, এর আগেও মেইতেই জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা কমপক্ষে তিনবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। মণিপুরে মেতেই মহিলারা এর আগে একাধিকবার অসম রাইফেলস বাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, মণিপুরে অশান্তি রুখতে মোতায়েন থাকা অসম রাইফেলস সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকার, মণিপুর পুলিশ ও মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের কাছে রিপোর্ট জমা দেন। গত মাসেই অসম রাইফেলস এক মণিপুরী নেতাকে কুকি জনগোষ্ঠীর দুষ্কৃতীদের পক্ষ নেওয়ার অভিযোগে আইনি নোটিস পাঠিয়েছিল।

Advertisement

Advertisement