নায়ীমুল হক: সহকারী শিক্ষক, হরিনাভি ডিভিএএস হাইস্কুল কিশোরদের মাঝে বিজ্ঞানমনস্কতা এবং তরুণদের মাঝে বিজ্ঞান চেতনা, বিজ্ঞানের ধারণা, এক কথায় বিজ্ঞান গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করতে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক জুনিয়র বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড। এবারের অলিম্পিয়াডের আসর বসেছিল রাশিয়ায়। ২২তম বর্ষে পা দিল এবারের এই বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড পরীক্ষা। এক অতি উন্নত মানের মর্যাদা সম্পন্ন এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় ১৫ বছর বা তার কম বয়সী শিক্ষার্থীরএই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে।
বিজ্ঞানের প্রতি তরুণ পড়ুয়াদের আগ্রহ, উৎসাহ ও দক্ষতা প্রদর্শনের এই অলিম্পিয়ার একটি সেরা সুযোগ বলে ধরে নেওয়া হয়। এই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র এমনভাবে নির্বাচন করা হয় যাতে বিশ্ব জুড়ে তরুণদের মধ্যে বিজ্ঞান শিক্ষায় আগ্রহ এবং সমস্যা সমাধানের প্রতি কৌতূহল বৃদ্ধি করা যায়। সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের পদার্থবিদ্যা, রসায়ন এবং জীববিজ্ঞানে তাদের তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক জ্ঞান প্রদর্শনের সুযোগ করে দেওয়া হয়।
Advertisement
এই অলিম্পিয়াডের চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছাতে গেলে কটি স্তর পেরোতে হয়: এ বছরের IJSO পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য, অংশগ্রহণকারীকে চারটি ধাপে উত্তীর্ণ হতে হয়েছিল— NSEJS (জুনিয়র সায়েন্সে জাতীয় স্ট্যান্ডার্ড পরীক্ষা), INJSO (ভারতীয় জাতীয় জুনিয়র বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড), OCSC (ওরিয়েন্টেশন কাম সিলেকশন ক্যাম্প), এবং PDT (প্রি-ডিপারচার ট্রেনিং বা প্রস্থান-পূর্ব প্রশিক্ষণ শিবির)। এই ধাপগুলি উত্তীর্ণ হওয়ার পরই একজন অংশগ্রহণকারী IJSO ২০২৫-এর জন্য নির্বাচিত হয়।
Advertisement
IJSO পরীক্ষা মূলত কয় রাউন্ডের পরীক্ষা: এটি তিনটি প্রধান রাউন্ডে বিভক্ত। বহুনির্বাচনী প্রশ্নে পরীক্ষা, তত্ত্ব পরীক্ষা এবং ব্যবহারিক পরীক্ষা। MCQ পদ্ধতিতে ধারণার স্বচ্ছতা পরীক্ষা করা হয় , তত্ত্ব পরীক্ষা গভীর চিন্তাভাবনা এবং ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা মূল্যায়ন করে। শেষ রাউন্ড, ব্যবহারিক পরীক্ষা। পরীক্ষামূলক দক্ষতার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে এবং গ্রুপ এক্টিভিটিস বা দলগত ফলাফলের দিকেও বিশেষ লক্ষ্য দেওয়া হয়। এবারের এই আন্তর্জাতিক জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২২ নভেম্বর থেকে এক ডিসেম্বর পর্যন্ত। রাশিয়ার সিরিয়াসে ২২তম এই অলিম্পিয়াডে মোট ২৪টি দেশ অংশগ্রহণ করে।
এই দেশগুলি থেকে নির্বাচিত ১৪০ জনের তরুণ শিক্ষার্থী অংশ নেয় এবারের অলিম্পিয়াডে। ভারতীয় দলে ছ’জন শিক্ষার্থী ছিল। হরিয়ানার আদিশ জৈন এবং পাঞ্জাবের আনমোল কুমার একটি করে স্বর্ণপদক জিতেছে। মহারাষ্ট্রের অস্মী ইনামদার, তেলেঙ্গানার সাই শ্রাবণ মুভালা, ভুবনেশ্বরের রুহান মোহান্তি এবং তামিলনাড়ুর তেজস এসভি প্রত্যেকে একটি করে রৌপ্য পদক জিতেছে। ভারতীয় দলের সাথে ছিলেন তিনজন নেতা– বিজ্ঞানী শিরীষ পাথারে, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক বেদব্যাস, অরবিন্দ এস এবং বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষক গীথা আরএস।
এই প্রতিযোগিতায় পরীক্ষা কতক্ষণ ধরে হয়: IJSO প্রতিযোগিতায় দুটি তাত্ত্বিক এবং একটি পরীক্ষামূলক পরীক্ষা থাকে, প্রতিটি পরীক্ষা তিন ঘন্টা ধরে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি ধাপ কঠোর পদ্ধতিতে নির্বাচিত করা হয়। প্রথম ধাপে থাকে জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডে দেশব্যাপী একটি পরীক্ষা, যেখানে ৫০,০০০ এরও বেশি শিক্ষার্থী এবার অংশগ্রহণ করে। এই পরীক্ষাটি ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ ফিজিক্স টিচার্স (IAPT) দ্বারা সারা দেশের প্রায় ১২০০টি কেন্দ্রে পরিচালিত হয়।
পরবর্তী ধাপগুলিতে তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক উভয় ধরণের চ্যালেঞ্জিং প্রশ্ন নিয়ে নির্বাচন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।IJSO-এর জন্য প্রি-ডিপারচার ক্যাম্প (PDC) ব্যাঙ্গালোরের বিদ্যাবর্ধক সংঘে পরিচালিত হয়। টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ (TIFR) এর একটি জাতীয় কেন্দ্র, হোমি ভাবা সেন্টার ফর সায়েন্স এডুকেশন (HBCSE), দেশের সমস্ত বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড (পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, জ্যোতির্বিদ্যা এবং জ্যোতির্পদার্থবিদ্যা এবং জুনিয়র বিজ্ঞান) এবং গণিত অলিম্পিয়াডের জন্য নোডাল কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়।
জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াড সমন্বয়ের দায়িত্ব HBCSE-এর সহায়তায় ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ ফিজিক্স টিচার্স (IAPT)-এর ওপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে ভারতের প্রতিনিধিত্বকারী দলের নির্বাচন এবং প্রশিক্ষণের জন্যও IAPTকেই দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।আগামী বছরগুলিতে উৎসাহী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের প্রস্তুতি শুরুর আগে ভালো করে জেনে নিতে হয় সিলেবাস এবং প্রশ্নের ধরন।
দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিজ্ঞানের সমস্ত মৌলিক বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা গড়ে তোলার দিকে বিশেষ নজর দিতে হয়। দশম শ্রেণি এবং তার নিচের শ্রেণি থেকে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন এবং জীববিজ্ঞানের বিষয়গুলি হল সিলেবাস। এই সিলেবাস এর মধ্যে প্রতিটি ঘটনা কীভাবে এবং কেন ঘটে ও জিনিসগুলি কীভাবে কাজ করে তার একটা স্পষ্ট ধারণা তৈরি করতে হবে। স্পষ্ট ধারণা তৈরি হলে তবেই কঠিনতর প্রশ্ন সমাধান করা সম্ভব।বিগত বছরের পরীক্ষার ফরম্যাট ধরে অনুশীলন করলে দ্রুত প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব হয়। এমসিকিউ প্রশ্নের ক্ষেত্রে দ্রুততার সঙ্গে সঠিক উত্তর লেখার অনুশীলন রপ্ত করতে হয়। বারবার অনুশীলন ও পর্যালোচনার মাধ্যমে কীভাবে সহজে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয় এবং ফলাফল সঠিকভাবে রেকর্ড করতে হয়, সে ব্যাপারেও দক্ষতা অর্জন করা জরুরি।
Advertisement



