• facebook
  • twitter
Thursday, 11 December, 2025

তৃণমূলেই নারীর সম্মান

সারা দেশ থেকে লোকসভায় মোট ৭৪ জন মহিলা সদস্য নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। এর মধ্যে ১১ জনই বাংলা থেকে নির্বাচিত।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

সারাদেশের নিরিখে লোকসভায় মহিলা সাংসদের সংখ্যায় বাংলা রয়েছে শীর্ষস্থানে। এ তথ্য জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত ২৯ জন তৃণমূল সাংসদদের মধ্যে ১১ জনই মহিলা। শতাংশের হিসাবে এই পরিমাণ এক-তৃতীয়াংশের থেকেও প্রায় পাঁচ শতাংশ বেশি। ৩৭.৯৩ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ৩৮ শতাংশ।

নির্বাচন কমিশন এই তথ্য দিয়ে জানিয়েছে, সারা দেশ থেকে লোকসভায় মোট ৭৪ জন মহিলা সদস্য নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। এর মধ্যে ১১ জনই বাংলা থেকে নির্বাচিত। বিশেষ অধিবেশন ডেকে মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ করিয়েছিল নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার। ওই বিলে বলা হয়েছিল মহিলাদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণ করা হবে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও আইনের অপেক্ষা না করেই নির্বাচনে এক-তৃতীয়াংশের বেশি প্রার্থী দাঁড় করিয়েছিলেন। বাংলার ভোটাররা তাঁদের নির্বাচিত করে দিল্লি পাঠিয়েছেন।

Advertisement

বর্তমানে লোকসভার মোট ৫৪৩ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র ৭৪ জন মহিলা। শতাংশের হিসেবে ১৩.৬২। অন্যদিকে ৭৪ জনের মধ্যে ১১ জন, শতাংশের হিসেবে তা প্রায় ১৫ শতাংশ। নির্বাচন কমিশনের প্রকাশ করা পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উত্তরপ্রদেশের মোট ৮০ জন লোকসভা সাংসদের মধ্যে ৭৩ জন পুরুষ। পাশাপাশি আরও জানা গিয়েছে, দেশের মোট ১৫২টি লোকসভা আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করেননি কোনও মহিলা প্রার্থী। অথচ বাংলা থেকে শুধুমাত্র মহিলাদের প্রার্থী করাই হয়নি, তাঁরা জয়লাভ করে লোকসভার সদস্য হয়েছেন। এছাড়া রাজ্যসভাতেও উল্লেখযোগ্য হারে মহিলা সদস্য পাঠিয়েছে বাংলা। রাজ্যসভার মোট ১৩ জন তৃণমূল সাংসদের মধ্যে মহিলা রয়েছেন সাগরিকা ঘোষ, সুস্মিতা দেব, দোলা সেন, মমতা ঠাকুর, মৌসম বেনজির নুর—মোট ৫ জন।

Advertisement

শুধুমাত্র সংসদে নয়, বিধানসভা, রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে শুরু করে জেলা, ব্লক এবং পঞ্চায়েত স্তরেও মহিলাদের অগ্রাধিকার দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি। এই বিষয়ে তৃণমূল সাংসদ সুস্মিতা দেব বলেছেন, ‘মহিলা ক্ষমতায়নে বাংলার রেকর্ড রয়েছে। বুথ ব্লক, জেলা থেকে শুরু করে সর্বত্র মহিলা জনপ্রতিনিধি রয়েছেন তৃণমূল থেকে। এছাড়া সংগঠনের নেতৃত্বেও রয়েছেন মহিলারা।’

আমাদের দেশের সমাজের বৈপ্লবিক রূপান্তরের সবচেয়ে বড় অন্তরায় নারীদের অবস্থান ও ধারাবাহিক বৈষম্য আর জাতিভেদ প্রথা। এর বিরুদ্ধে সচেতনভাবেই ধারাবাহিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। যুগ যুগ ধরে নারী-পুরুষ সামাজিক বিভাজন-বৈষম্যের খেলা চলছে। তা দূর করতে হবে। মনে রাখতে হবে নারী মুক্তির প্রথম ভিত্তিই হলো সামাজিক উৎপাদনের পদ্ধতিতে তাদের অংশগ্রহণ। মেয়েদের অন্তঃপুরে বন্দি করে দাসত্ব প্রথা জিইয়ে রাখার মতো অবস্থা তৈরি করাই হলো আরএসএস-এর নীতি। তাদের আকরগ্রন্থ মনুস্মৃতিতে যে সামাজিক নিয়ম রয়েছে, তাতে নারীর সামাজিক অধিকার বা স্বাধীনতাকে স্বীকার করাই হয়নি। নারী শ্রমিকদের শ্রম থেকে আসে উদ্বৃত্ত, তাঁদেরই সমাজ থেকে বাদ দিতে চেয়েছে মনুস্মৃতি। আসলে পুঁজিবাদ ও সামন্ততন্ত্র নারীকে পণ্যে পরিণত করেছে। যে কর্পোরেট গোষ্ঠী নারী দিবসে ডিসকাউন্ট দেয়, তারাই তাদের কর্মচারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি দেয় না। তাঁদের জন্য ন্যূনতম শৌচালয়েরও ব্যবস্থা করে না। সাম্য ও সামাজিক অধিকারের কথা কর্পোরেটরা মুখে বললেও বাস্তবে তা মানে না।

বৈষম্য প্রতিরোধে নারী-পুরুষের শ্রামের মূল্যে আর্থিক সমতা আনতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে প্রথম দিন থেকেই রাজ্য মন্ত্রিসভা কাজ করে যাচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। সাহায্য বা ভরতুকি না বলে একে নারীদের স্বনির্ভর করার প্রকল্প অবশ্যই বলা চলে। এইরকম আরো অনেক প্রকল্প আনা হয়েছে শুধুমাত্র মহিলাদের কথা ভেবেই। কথায় আর কাজে এমন মিল আর দেশের অন্য কোনও রাজ্যে দেখা যাবে না। এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব অবশ্যই তৃণমূল ও দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

Advertisement