এবার ভারতের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের অন্তত ৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করার হুকুম এল আমেরিকার কাছ থেকে। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত ‘শাঙরিলা সংলাপ’ বৈঠকে চিন-বিরোধী সামরিক জোট শরিকদের সঙ্গে আমেরিকার প্রতিরক্ষা দপ্তরের আধিকারিকদের একটি বৈঠক হয়। ভারত সহ দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ ওই বৈঠকে অংশ নেয়। ওই সমস্ত দেশের প্রতিনিধিদের কার্যত হুমকি দিয়ে পরবর্তী অর্থবর্ষ থেকেই প্রতিরক্ষা খাতে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের অন্তত ৫ শতাংশ ব্যয় করতে বলেন মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ।
চিন ও গণতান্ত্রিক কোরিয়া (উত্তর কোরিয়া) বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করার চক্রান্ত করেছ বলে অভিযোগ জানিয়ে হেগসেথ বলেছেন, ‘এশিয়ায় আমেরিকার শরিক দেশগুলিকে ইউরোপীয় শরিকদের থেকে শিক্ষা নিতে হবে। ন্যাটো শরিকদের প্রায় সবাই মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের অন্তত ৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করার আশ্বাস দিয়েছে। মার্কিন জোট শরিকদের ঐক্যবদ্ধ থেকে প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিতে হবে। চিন যদি তাইওয়ান ফিরিয়ে আনতে কোনওরকম সামরিক সক্রিয়তা দেখায়, তবে সবাইকে একসঙ্গে প্রতিরোধে নামতে হবে।’
Advertisement
প্রসঙ্গত, বর্তমানে ভারত মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ১.৯ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করে। মোটের উপর তা ৬ লক্ষ কোটি টাকা বা ৮ হাজার কোটি ডলারের কাছাকাছি। মার্কিন ফরমান অনুযায়ী ভারত যদি মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৫ শতাংশ প্রতিরক্ষায় ব্যয় করে, তবে তা হবে ১৫ লক্ষ কোটি টাকা বা ১৯ হাজার ডলারের কাছাকাছি। বর্তমানের তুলনায় তা প্রায় আড়াই গুণ বেশি। অর্থাৎ অন্যান্য খাতের থেকে অন্তত ৯ লক্ষ কোটি টাকা বা ১১ হাজার কোটি ডলার প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করার নির্দেশ দিচ্ছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব। মূলত ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার মতো ‘কোয়াড’ শরিকদের উদ্দেশ্য করেই মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব এমন ফরমান দিয়েছেন। এই তিন দেশেই গড়ে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ১.৭ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করে থাকে।
কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ভারতকে চাপে ফেলে হেগসেথের এই দাদাগিরি মোটেই বাঞ্ছিত নয়। দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি তা আঘাত। মোদী সরকার তা মেনে নিলে তবে পুরোপুরি মার্কিন আধিপত্যে গা ভাসিয়ে দেওয়া হবে। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের দেশগুলির কাছে আরও সহজে এবং আরও বেশি পরিমাণে আমেরিকার তৈরি অস্ত্র বিক্রি করার লক্ষ্যেই হেগসেথ এমন ফরমান দিয়েছেন।
Advertisement
অনেকে আবার প্রশ্ন তুলেছেন, প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় যদি আড়াই গুণ বাড়াতেই হয়, তবে তা অন্য কোনও খাত থেকে সরাতে হবে? বিশ্লেষকদের মতে, এই অতিরিক্ত ৯ লক্ষ কোটি জোগাড় করতে জিএসটি-র হার বাড়াতে হবে। এছাড়াও খাদ্য ও সারে ভরতুকি অন্তত ৫০ শতাংশ হারে কমাতে হবে। ১০০ দিনের কাজ বা রেগা প্রকল্প আগাগোড়া তুলে দিতে হবে। রাস্তা ও পরিকাঠামোগত উন্নয়নের বরাদ্দ ব্যয় ৩০ শতাংশ হারে কমাতে হবে। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতেও বরাদ্দ ব্যয় কমাতে হবে ৩০ শতাংশ হারে কমিয়ে ফেলতে হবে। অর্থাৎ কোয়াড চুক্তিতে থাকার শর্ত হিসেবে যদি মোদী সরকার এইসব ফরমান মেনে চলে, তবে দেশের খেটে খাওয়া মানুষ চরম বিপাকে পড়বেন। গ্রামীণ দারিদ্র্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ভয়াবহভাবে বেড়ে যাবে। কৃষকদের আয় কমবে। পরিকাঠামো খাতেও বেসরকারিকরণের পথে চলতে হবে। বিপন্ন হবে স্বাধীনতা।
Advertisement



