বেরোজগারি ও মূল্যবৃদ্ধি

Written by SNS April 14, 2024 3:07 pm

২০২৪-এর লোকসভার ভোট প্রচারে অর্থনীতি এখন সামনের সারিতে চলে এসেছে. ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকা সিএসডিএস-লোকনীতির প্রাক-নির্বাচনী সমীক্ষা পেশ করেছে. এই সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, বিজেপি যতই নতুন মোড়কে রামমন্দির নির্মাণ, জাতীয়তাবাদকে গেলানোর চেষ্টা চালাক, ভোটারদের কাছে তা বিরাট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে না৷

আর মাত্র কয়েকদিন পরেই প্রথম পর্যায়ের ভোট৷ ভোট প্রচার ধাপে ধাপে যত গতি বাড়াচ্ছে, ভোটাররা নিজেদের মত কী হবে, তা স্থির করতে এখন মাথা ঘামাতে ব্যস্ত৷ এই অবস্থায় বিরোধীরা যত শাসক দলকে চাইছে অর্থনীতির প্রশ্ন তুলে কোণঠাসা করতে, বিজেপি চাইছে সেই অস্বস্তির প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে হিন্দুত্ব, জাতীয়তাবাদের দিকে ঝঁুকে পড়তে৷ বিরোধীরা বেরোজগারির প্রসঙ্গ তুললে মোদি বলছেন ৩৭০ ধারার কথা৷ আইআইটি থেকে পড়াশোনা শেষ করেও কেন চাকরি নেই, এই প্রশ্ন শুনলেই মোদি চলে যাচ্ছেন রামনবমী কিভাবে পালন করতে হবে, সেই প্রসঙ্গে৷ জিনিসের দাম কেন এত বেশি, প্রশ্ন উঠলে মোদির মুখে মুসলিম লিগ কিংবা ‘ঘর ঘর মে ঘুস কর’ মেরে আসার হুঙ্কার৷

গত এক সপ্তাহে দেশের ১৯টি রাজ্যের ১০০টি বিধানসভার ৪০০ ভোটকেন্দ্রের প্রায় ১১ হাজার মানুষের সঙ্গে কথা বলে সমীক্ষা চালিয়ে রিপোর্ট তৈরি করেছে সিএসডিএস—লোকনীতি৷ এই সমীক্ষার ফলাফলে ভোটরদের ‘মন কি বাত’-এ প্রাধান্য পাচ্ছে বেরোজগারি আর মূল্যবৃদ্ধি৷ তিন নম্বরে রয়েছে উন্নয়ন৷ প্রশ্ন ছিল, এবারের ভোটে আপনার কাছে সবচেয়ে বড় ইসু্য কী? এই প্রশ্নেমাত্র ২ শতাংশের কাছে হিন্দুত্ব এর ইসু্য৷ আর ৮ শতাংশের মত হল ভোটের ইসু্য হল বেকারত্ব বা বেরোজগারি৷ তেমনই ২৩ শতাংশের কাছে মূল্যবৃদ্ধি একটা বড় ব্যাপার৷ এটা এখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, মোদি ও গেরুয়াবাহিনী চেষ্টা করেও অর্থনৈতিক দুর্বলতার এই ইসু্যগুলিকে আডা.লে নিয়ে যেতে পারছে না৷

এই সমীক্ষা দু’টি বিষয়কে সামনে নিয়ে এসেছে৷ একটা হল, তাঁরা নিজেরা যে অর্থনৈতিক দুর্দশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, সে ব্যাপারে তাঁরা অবগত ও সচেতন৷ এই প্রাক-নির্বাচনী সমীক্ষা থেকে অন্য যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে এল, তা স্পষ্টতই শ্রেণির বিভাজন৷ অর্থনৈতিক দুর্দশার প্রভাব সব থেকে বেশি পড়ছে গরিব ও নিম্ন মধ্যবিত্ত অংশের উপর৷

চাকরি চাই৷ এটাই এখন সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয়. সমীক্ষায় যাঁরা অংশ নিয়েছেন, তাঁদের দুই-তৃতীয়ংশ (৬২ শতাংশ) মনে করেন গত পাঁচ বছরে চাকরি পাওয়া কঠিন হয়ে উঠেছে৷ শহরে ৬৫ শতাংশের মতে, পাঁচ বছরে কাজ পাওয়া অনেক কঠিন হয়ে গিয়েছে৷ গ্রাম ও মফস্বলে সেই হার যথাক্রমে ৬২ ও ৫৯ শতাংশ৷ কাজ পাওয়া নিয়ে উদ্বেগে ভুগছেন ৬৭ শতাংশই মুসলিম৷ হিন্দু, অন্যান্য অনগ্রসর অংশ ও তফসিলি জাতির মধ্যে এই চিন্তা ৬৩ শতাংশের৷ তফসিলি উপজাতি ও আদিবাসীদের মধ্যে ৫৯ শতাংশ মনে করেন, গত পাঁচ বছরে চাকরি পাওয়া আরও কঠিন হয়ে উঠেছে৷ কাজ পাওয়ার সুযোগ কমে যাওয়ার জন্য কেন্দ্রের সরকারকে দায়ী করেছেন ২১ শতাংশ৷ আর ১৬ শতাংশ দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলিকে৷ আবার ৫৭ শতাংশ উভয় সরকারকেই দায়ী করেছেন৷

একইভাবে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের উদ্বেগ বর্ধিত দ্রব্যমূল্য নিয়ে৷ প্রশ্ন ছিল, গত পাঁচ বছরে জিনিসের দাম বেড়েছে৷ না কমেছে? ৭১ শতাংশের জবাব বেড়েছে৷ ১৩ শতাংশের মতে একই আছে৷ শহরের মধ্যবিত্ত ও বড়লোকদের তুলনায় গরিব ও গ্রামের মানুষ এই বিষয়টিতে অনেক জোরের সঙ্গে মুখ খুলেছেন৷
মোদি যতই ‘দুর্নীতিমুক্ত ভারত’ গড়ার আস্ফালন করুন আসলে তাঁর নেতৃত্বেই যে দুর্নীতির প্রতিষ্ঠানিকরণ হয়ে গিয়েছে, তথ্যসমৃদ্ধ বিরোধীদের বক্তব্য এখন প্রভাব ফেলছে ভোটারদের মধ্যে৷ গত পাঁচ বছরে দুর্নীতি বেড়েছে বলে ৫৫ শতাংশ মানুষের মত৷ যা দুর্নীতি বৃদ্ধির এই তথ্যের সঙ্গে ইডি বা সিবিআইকে দিয়ে মোদি ‘সাফাই অভিযান’ চালানোর হুঙ্কার দিচ্ছেন, সেই কেন্দ্রীয় সংস্থার ভূমিকাও এই সমীক্ষায় প্রশ্নের মুখে পড়ে গিয়েছে. ইডি-সিবিআইকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে বা এই দু’টি এজেন্সি আইনের সীমারেখার মধ্যে কাজ করছে, এই প্রশ্নে উত্তরদাতারা অবশ্য কমবেশি সমানভাবে বিভক্ত৷