দই আইএএসের পদত্যাগ

দু’জন আইএএস অফিসারের পদত্যাগ সর্বভারতীয় অন্যান্য সার্ভিসের অফিসারদেরও অবাক করেছে। অতীতে এই ধরনের ঘটনা বিরল।

Written by SNS Kolkata | September 17, 2019 5:10 pm

শশীকান্ত সেনথিল (File Photo: IANS)

সম্প্রতি দু’জন আইএএস অফিসার পদত্যাগ করলেন। দেশে যেভাবে গণতন্ত্র পদদলিত হয়, মূল্যবােধ লােপ পাচ্ছে, মানবিকতা বিরােধী কাজ অহরহ ঘটছে, তারই প্রতিবাদে তাঁদের এই সিদ্ধান্ত। তাঁরা মনে করেন, এই অবস্থা নিরীক্ষণ করে সহ্য করা যায় না, তাই এই সর্বভারতীয় সার্ভিস থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়ে শুদ্ধিকরণের কজে নামতে চান তাঁরা। তাঁদের মতে, এই সার্ভিসে থেকে তাঁরা এই কাজ করতে পারবেন না।

চাকরিতে বহাল থাকা এই দুই আইএএস অফিসার হলেন শশীকান্ত সেনথিল, তিনি কর্ণাটক ক্যাডারের। ২০০৯ সালের ব্যাচের। দক্ষিণা কানাডা জেলার তিনি ডেপুটি কমিশনার ছিলেন। অপরজন হলেন ২০১২ সালের ব্যাচের কান্নান গােপীনাথন, যিনি এক মাস আগেই এই সর্বভারতীয় সার্ভিস থেকে বিদায় নিয়েছেন। তাঁর অভিযােগ, ৩৭০ ধারা বিলােপের পর কাশ্মীরে যে ‘বেদনাদায়ক ঘটনা’ ঘটছে, যেভাবে মানুষকে তাঁদের মনের কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না, তা তাঁকে ব্যথিত করেছে। কিন্তু মুক্তমনে এখন তাঁদের কথা বলতে পারবেন। সেনথিল বলেছেন, তাঁর সিদ্ধান্ত একান্তই ব্যক্তিগত এবং এর সঙ্গে তাঁর চাকরিকালের কোনও ঘটনার যােগ নেই। তিনি বলেছেন, এই ‘কমফোর্ট’ জোনে থেকে কিছু মনের কথা বলতে না পেরে তিনি নিজের বিবেকের কাছে দায়ী হতে পারবেন না।

এইভাবে দু’জন আইএএস অফিসারের পদত্যাগ সর্বভারতীয় অন্যান্য সার্ভিসের অফিসারদেরও অবাক করেছে। অতীতে এই ধরনের ঘটনা বিরল। ভারতের মতাে এই বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে মানুষের মৌলিক অধিকার খর্ব হচ্ছে এবং প্রতিবাদ করলে ‘বিদ্রোহী’র পর্যায়ে পড়ে যাচ্ছে, তার জন্য তারা দুঃখিত ও মর্মাহত। উভয়েই বর্তমানে কাশ্মীরের মানবাধিকার লঙঘনের ঘটনাবলি সামনে তুলে ধরেছেন। সেখানে ৩৭০ ধারা বিলােপের পর যা দৈনন্দিন ঘটছে, তা আকাঙিক্ষত নয়। মানুষকে মুক্তমনে তাদের মনের কথা বলতে না দেওয়া অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। তাঁরা বলেছেন, সামনে আরও কঠিন দিন আসছে। এই অবস্থায় আইএএস অফিসারের পদ থেকে বেরিয়ে এসে মানুষের হিতের জন্য, মঙ্গলের জন্য কাজ করা অনেক সুখের ও স্বস্তির।

ওই দুই আইএএস অফিসারের পদত্যাগ যেমন সমালােচিত, তেমনি বিভিন্ন মহলে প্রশংসিতও। মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের প্রাক্তন সচিব অনিল স্বরূপ বলেছেন, গােপীনাথনের পদত্যাগই সেনথিলকে পদত্যাগের ব্যাপারে প্রভাবিত করেছে। যেভাবে এবং যে কারণে ওই দু’জন উঠতি আইএএস অফিসার পদত্যাগ করলেন তা দুঃখের। কারণ এই গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্মানজনক পদে থেকে তাঁরা দেশ সেবার অনেক সুযােগ পেতেন। এই সর্বভারতীয় সার্ভিস তাঁদের মানুষের হয়ে কাজ করার সুযােগ দিয়েছিল। সেই সুযােগের সদ্ব্যবহার তাঁরা করলেন না, যা হতাশার। প্রাক্তন সচিব আরও বলেছেন, কেন এই দু’জন আইএএস পদত্যাগ করলেন তা খতিয়ে দেখা দরকার। তাঁর মতে, এমন একটা ‘সেটআপ’ তৈরি করা উচিত, যা জুনিয়ার অফিসারদের কাজের মনিটরিং করতে পারে।

অন্যমতে, তাঁদের পদত্যাগপত্র বিচার বিবেচনা করে দেখতে বেশ কয়েক মাস সময় লাগবে। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযােগ আনা হতে পারে কারণ তাঁরা পদত্যাগের কারণ প্রকাশ্যে ব্যক্ত করেছেন, যা সরকারি সার্ভিস নিয়মাবলির পরিপন্থী।

কাশ্মীরের ঘটনাবলি ছাড়াও দেশে এখন অনেক কিছু ঘটছে যা দেখে বা শুনে, যে কোনও বিবেকবান মানুষের উৎকণ্ঠা বাড়বে। ৩৭০ ধারা বিলােপের পর, কাশ্মীরের ঘটনাবলি যে অনেকের কাছেই যন্ত্রণাদায়ক, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকসহ কাশ্মীরের রাজ্যপাল প্রতিদিন দাবি করছেন, অবস্থা স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে এসেছে। কিন্তু তা সঠিক নয় বলে অনেকেরই ধারণা। কেন ৩৭০ ধারা বিলােপের এতদিন পরও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরছে না, জনসাধারণের স্বস্তি মিলছে না, তা সরকারের ভেবে দেখা দরকার। দু’জন আইএএস অফিসারের পদত্যাগের অন্যতম কারণ যে কাশ্মীরের বর্তমান অবস্থা, যা সেকানকার মানুষকে স্বাধীনভাবে চলা, স্বাধীনভাবে কথা বলার সুযােগ থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে।