দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বৈজ্ঞানিক রিপোর্টে বেজায় চটেছেন গেরুয়া নেতারা। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ প্রয়াগের বিভিন্ন জায়গায়, যেখানে পুণ্যার্থীরা স্নান করেছেন পুণ্যলাভের আশায়, গঙ্গার জলের নমুনা সংগ্রহ করে বৈজ্ঞানিক গবেষণাগারে পরীক্ষা করে দেখেছে সেটা মুখে নেওয়া তো দূরের কথা স্নান করারও অযোগ্য। মানুষ ও পশুর মলমূত্র থেকে আসা ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা এতটাই বেশি যে সেই জলে স্নান করাও বিপজ্জনক। গঙ্গার জল পরীক্ষার এই রিপোর্ট পর্ষদ পেশ করেছে জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনালে। এমন বিষাক্ত গঙ্গার জলে কোটি কোটি মানুষের স্নান করার জন্য জল আরও দ্রুত ও অতিমাত্রায় দূষিত হয়ে পড়ছে। এই অবস্থায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞান সচেতন মানুষ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এমন দূষিত জল যেমন নানা ধরনের চর্মরোগের কারণ হতে পারে তেমনি পাচনতন্ত্রের নানা রোগ মহামারির আকার নিতে পারে। উত্তরপ্রদেশ সরকারের প্রচার করা হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৪০ কোটি মানুষ নাকি এমন বিষাক্ত, স্নানের অযোগ্য জলে স্নান করেছেন। ফলে দেশের সর্বত্র ঘরে ঘরে এইসব রোগের প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা থাকছে।
দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্ট পুণ্যার্থীদের মনে দ্বিধা ও ভীতি তৈরি করলেও একদিকে ভিড় কমার যেমন আশঙ্কা থাকে তেমনই কুম্ভস্নানের ধর্মীয় আবেগে টান পড়তে পারে। কুম্ভস্নানে পাপস্খলনের যে বাসনা থাকে এবং মহাপুণ্যের জোরে ইহজীবনে বিপুল ধনসম্পদ লাভ ও মৃত্যুর পর স্বর্গবাসের সনাতনী স্বপ্নও ফ্যাকাসে হয়ে যেতে পারে। তাই একটুও সময় ব্যয় না করে তড়িঘড়ি উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সরাসরি ধর্মের অস্ত্র হাতে নিয়ে বিজ্ঞান গবেষণার ফলাফলকে নস্যাৎ করতে ময়দানে নেমে পড়েছেন।
গঙ্গার জলের পরীক্ষাকে উড়িয়ে দিয়ে ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে তিনি ঘোষণা করে দিয়েছেন, কুম্ভের জল শুধু পবিত্র নয়, পুরোপুরি বিশুদ্ধ। এই জলে স্নান করায় কোনও অসুবিধা নেই। একই সঙ্গে জোর দিয়ে বলেছেন, কুম্ভের জল পানীয় হিসাবেও ব্যবহারযোগ্য। হিন্দুত্ববাদীরা যে যুক্তি ও বিজ্ঞান মানে না, তারা যে শুধু ধর্মের নামে বিশ্বাস করেন যোগী সেটা আবার দুনিয়ার সামনে প্রমাণ করে দিলেন। যোগীর ভাষ্য অনুযায়ী কুম্ভস্নানের পর যদি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন তবে তার ডাক্তারি চিকিৎসা না করিয়ে কুম্ভের জল খাওয়ালেই চলবে। যোগীরা এটাও মনে করেন যে, কুম্ভ স্নানের পর যাবতীয় অপরাধ ধুয়ে যায়। জীবনভোর অন্যায় অপরাধ করে একবার কুম্ভস্নান করলেই পুণ্যবান হওয়া যায়। তাই উত্তরপ্রদেশের সব কারাগারের বন্দিদের কুম্ভের জলে স্নান করিয়েছে যোগী সরকার। এবার হয়তো তারা পাপমুক্ত হয়েছে বলে জেল থেকে ছাড়া পাবে। এই বিশ্বাস থেকেই ধর্ষণ, খুনের আসামী জেলমুক্তির পর ধর্ষণ, খুন করে কুম্ভে যাবে স্নান করতে।
কুম্ভস্নানে সনাতনী উপকার বা বৈজ্ঞানিক অপকার কতটা সেটা নিয়ে অবশ্য মোদী-যোগীদের মাথাব্যথা নেই। তাঁরা মজে আছেন কুম্ভকে কেন্দ্র করে অখণ্ড হিন্দু ঐক্য গড়ে তাকে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খাতে ধাবিত করা। বিষাক্ত জলে স্নানের উন্মাদনা যদি ধর্মের নামে ভারতীয় সভ্যতার বর্তমান বাস্তবতা হয় তাহলে উন্নত ভারতের স্বপ্ন কোনওদিনই দৃশ্যমান হবে না। ধর্মান্ধতার পশ্চাদপদতার গাড্ডায় দেশ আরও বেশি করে তলিয়ে যাবে। উন্নত ভারত নয়, এটাই অধঃপতিত ভারতের নমুনা।
‘আচ্ছে দিন’ এবং ‘বিকশিত ভারত’ এইভাবে আরএসএস ও গেরুয়া ব্রিগেডের স্বপ্ন পূরণ করবে। আপামর জনগণের চোখে ধর্মের নামে কালো চশমা পরিয়ে হিন্দুত্ববাদী রাজ করবে দেশজুড়ে। ধর্মের নামে বিভাজন আরও বাড়বে। মনুষ্যত্ব ও মানবিক মূল্যবোধ হারিয়ে যাবে। মোদী-যোগী কুম্ভের নামে তাই চাইছেন। দেরীতে হলেও এখন সকলে তা বুঝতে পারছেন।