রম্যাঁ রলাঁ
পূর্ব প্রকাশিতর পর…
Advertisement
জার্মানীর প্রতি আমার পুরাতন সহানুভূতির কথা তুলিয়া কোয়েলনিসে ৎসাইতুং আমার নিকট আবেদন জানাইলেন।
Advertisement
১৪ই মে তারিখের একখানি খোলা চিঠিতে আমার জবাব দিলামঃ ‘‘যে জার্মানীকে আমি ভালবাসিতাম সে জার্মানী ছিল তাহার মহান বিশ্বনাগরিকগণের জার্মানী— যাহারা অন্য জাতির সুখদুঃখকে নিজের সুখদুঃখের মত অনুভব করিতেন, বিভিন্ন জাতির ও বিভিন্ন মনের সহিত সংযোগ সাধনের যাহারা চেষ্টা করিতেন। স্বস্তিকাধারিগণের পায়ের তলায় সেই জার্মানী আজ দলিত, রক্তাক্ত, মথিত। নিজেদের নৈতিক অবনতি ও পাপের দ্বারা এই স্বস্তিকার ধ্বজাধারিগণ তাহাদের স্বদেশকে কলংকিত করিয়াছে। ১৯১৮ সালের বিজয় লাভের পর মিত্রশক্তিগণ জার্মানীর প্রতি যে চরম অবিচার করিয়াছিল তাহার বিরুদ্ধে আমি প্রতিবাদ জানাইয়াছি।
তাহার উপর জোর করিয়া যে ভের্সাই-এর সন্ধি চাপাইয়া দেওয়া হইয়াছিল আমি তাাহার পরিবর্তন দাবী করিয়াছি। অন্যান্য জাতির সহিত জার্মানীর সমতার দাবীও আমি জানাইয়াছি। আপনারা কি মনে করেন এইসব দাবী আমি করিয়াছি আরও বড় অবিচারের জন্য। আপনারা কি মনে করেন এইসকল দাবী আমি তুলিয়াছি সেই জার্মানীর জন্য জার্মানী নিজে সমস্ত জাতির সমান অধিকারের নীতিকে এবং মানুষের নিকট পবিত্র মানুষের সমস্ত অধিকারগুলিকে নিজে পদদলিত করিয়াছে? হিটলারের জাতীয় সোশিয়ালিজম্ আসল জার্মানির নিকট আমি আবেদন জানাইতেছি।
বিপদ কেবল একদিক দিয়াই আসিল না। ফ্রান্সে সেই পুরাতন জাতিবিদ্বেষ আবার জাগিয়া উঠিল। হিট্লারের নিপীড়নের ফলে যে ক্ষোভ ও ক্রোধের সৃষ্টি হইল তাহার সুবিধা গ্রহণের চেষ্টা চলিতে লাগিল। ফরাসী গণতন্ত্রের প্রত্যেক রূপের মধ্যেই যে ফ্যাশিস্ট ও সামরিক চক্রান্ত লুক্কায়িত ছিল এই সুযোগে তাহা ধুমায়িত করিয়া তুলিবার চেষ্টা চলিতে লাগিল। ১৯৩৩ সালের ১৭ই মে তারিখে ‘যুবকগণের নিকট একটি আবেদন’ আমরা প্রকাশ করিলাম (ফ্যাশিজম ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুবসম্মেলনের উদ্দেশ্যে ইহা রচিত হইয়াছিল। ইহাতে কেবল হিট্লারবাদকে আক্রমণ করিয়াই আমি ক্ষান্ত রহিলাম না। কি গণতান্ত্রিক, কি ধনতান্ত্রিক, কি মধ্যযুগীয়, কি সামরিক সর্বপ্রকারের ফ্যাশিজমএক আমি আক্রমণ করিলাম। আমি শ্লোগান তুলিলাম জাতীয়তাবাদই শত্রু।
জনসাধারণের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রশ্ন এখানে নহে, যুদ্ধ তাহাদের ডুচে ও ফুয়েরার কোম্পানির বিরুদ্ধে—যাহারা তাহাদের অন্ধ করিয়া রাখিয়াছে, বিভ্রান্ত করিয়াছে, নিপীড়ন করিয়াছে। ‘‘দুঃখ ও ক্লেশ বরণের মধ্য দিয়া আমরা সমস্ত দেশ, সমস্ত জাতির সহকর্মী; তাহাদের প্রতি আমরা আজ মৈত্রীর হস্ত প্রসারিত করিয়া দিতেছি যাহাতে সমস্ত পৃথিবী ব্যাপিয়া এমন একটি মাত্র গণসম্মেলন গঠিত হইতে পারে, যাহা প্রতিক্রিয়ার পবিত্র সম্মেলনের বিরুদ্ধে একটা কঠিন প্রাচীরের মত দাঁড়াইতে পারে; আমাদের ফ্রন্ট পৃথিবী ব্যাপী।’’ মঁদ এবং ফ্রঁ মঁদিয়াল পত্রিকায় এই আবেদনটি প্রকাশিত হয়। ১৯৩৩ সালের জুন মাসে আমি আন্তর্জাতিক ফ্যাশিস্টবিরোধী কমিটির সভাপতি মনোনীত হই। পারির সুলা প্রেসোয়ার-এ এই সমিতির প্রথম আন্তর্জাতিক অধিবেশন হয়।
১০
সেদিন হইতে আজ পর্যন্ত ফ্যাশিজমের বিরুদ্ধে আমাদের এই যুদ্ধ চলিয়া আসিতেছে।
(ক্রমশ)
Advertisement



