নরেন্দ্র মোদীর শাসনে গত পাঁচ বছরে দেশে বন্ধ হয়ে গিয়েছে লক্ষাধিক ছোট-মাঝারি কলকারখানা। কাজ হারিয়েছেন প্রায় ৮ লক্ষ শ্রমিক-কর্মচারী। দেশের ছোট ও মাঝারি শিল্প রক্ষায় মোদীর মেক ইন ইন্ডিয়া, পণ্য পরিষেবা করের (জিএসটি) মতো দাওয়াই কোনও কাজে লাগেনি। ভোট টানতে মোদীর হাসি মুখের ছবি সহ ঢাউস বিজ্ঞাপনের ছবি বেরিয়েছে বিস্তর। ভোটপর্ব মিটে গেলেও বন্ধ হয়নি ছোট কারখানা বন্ধ হওয়ার মিছিল। মোদীর ডবল ইঞ্জিনের পাঁচ রাজ্যেই বন্ধ হয়েছে সবচেয়ে বেশি কল-কারখানা, আর কাজ হারিয়েছেন বেশি শ্রমিক। পশ্চিমবঙ্গে গত পাঁচ বছরে বন্ধ হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার ছোট-মাঝারি শিল্প এবং কাজ হারিয়েছেন ৪০ হাজারের উপর কর্মী। সংসদে কেন্দ্রীয় ছোট ও মাঝারি (এমএসএমই) শিল্পমন্ত্রী শোভা করণডালজে দেশের বন্ধ কলকারখানা সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে এই তথ্য জানিয়েছেন।
দেশে ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল— এই পাঁচ বছরে কত শিল্প বন্ধ হয়েছে ও তাতে কত শ্রমিক-কর্মচারী কাজ হারিয়েছেন এবং কাজ হারানো শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে কিনা বলে প্রশ্ন রাখা হয়। জবাবে স্বাভাবিকভাবে কাজ হারানো শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে কোনও জবাব মেলেনি। তবে গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন রাজ্যে কত কলকারখানা বন্ধ হয়েছে তার তালিকা প্রকাশ করেছেন মন্ত্রী।
Advertisement
প্রসঙ্গত, লকডাউন উঠে গিয়ে সব স্বাভাবিক হওয়ার পরের পাঁচ বছরে ছোট-মাঝারি শিল্প বন্ধ হওয়ার বেহাল অবস্থা মন্ত্রীর জবাবেই উঠে এসেছে। ওই জবাবি তথ্যে বলা হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবর্ষে দেশে মোট ছোট-মাঝারি শিল্প বন্ধ হওয়ার সংখ্যা ছিল ১৭৫টি। পাঁচ বছর তা ধাপে ধাপে ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে বন্ধ ছোট-মাঝারি কারখানার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে মোট ১ লক্ষ ২০ হাজার ৯৩৩। কাজ হারিয়েছেন মোট ৭ লক্ষ ৮০ হাজার ৮৩৩ জন শ্রমিক-কর্মচারী। বিজেপি শাসিত ডাবল ইঞ্জিনের সরকারের রাজ্যে তুলনামূলক শিল্প বন্ধ হয়েছে বেশি। যেমন দেশে মোট এক লক্ষের উপর কলকারখানা বন্ধের মধ্যে বিজেপি শাসিত মহারাষ্ট্রে বন্ধ হয়েছে ২৯ হাজার, রাজস্থানে ৯ হাজার, উত্তরপ্রদশে ৬ হাজার, মধ্যপ্রদেশে ৫ হাজার এবং গুজরাতে ১০ হাজার। ৫০ শতাংশের উপর কলকারখানা বন্ধ বিজেপি শাসিত রাজ্যে। এছাড়া অন্য রাজ্যের মধ্যে বেশি বন্ধ হয়েছে তামিলনাড়ুতে ১৪ হাজার, কর্ণাটকে ৬ হাজার ও তেলেঙ্গানায় ১৪ হাজার।
Advertisement
এদিকে পশ্চিমবঙ্গে ছোট-মাঝারি শিল্প বন্ধ হওয়ার হার পাঁচ বছরে বিপুল হারে বেড়েছে। তথ্যে জানানো হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবর্ষে রাজ্যে বন্ধ ছোট-মাঝারি শিল্পের সংখ্যা ছিল ১৭টি, তা ২০২১-২২ অর্থবর্ষে বেড়ে ১৫৩টি, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ৩৬৩টি, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ৬৮৬টি, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ১ হাজার ৫৭৮টি এবং ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে ১ হাজার ৯৫৪টি। পাঁচ বছরে রাজ্যে বন্ধ ছোট-মাঝারি কলকারখানার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে মোট ৪ হাজার ৭৫১টি। এতে পাঁচ বছরে কাজ হারিয়েছেন মোট ৪০ হাজার ৭৬৯ কর্মী।
প্রসঙ্গত, শিল্প বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দেশে সাধারণ মানুষের আয় কমে যাওয়ার ফলে বাজারে চাহিদা কমে গিয়ে বেশি সঙ্কটে পড়েছে ছোট-মাঝারি শিল্প। মহামারী করোনার পর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি এই ছোট-মাঝারি শিল্প। তাই গত পাঁচ বছরে ছোট-মাঝারি শিল্প বন্ধ হওয়ার সংখ্যা বেশি। অর্থমন্ত্রী বাজারে চাহিদার সঙ্কট মেটাতে জিএসটির হার কমানো, আয়করে ছাড় দেওয়ার মতো পদক্ষেপের কথা জানালেও তাতে ছোট-মাঝারি শিল্পের সেভাবে সুরাহা মেলেনি। শিল্প বন্ধ হওয়ার হারেই তা লক্ষ্য করা গিয়েছে।
এদিকে বাজারে শিল্প যেমন বন্ধ হয়, তেমনই একইভাবে নতুন শিল্প আবার গড়ে ওঠে। সমাজ বিকাশের গতিতে তা চলতে থাকে। শিল্পের বিভিন্ন তথ্য উল্লেখ করে মন্ত্রী দাবি করেছেন, নতুন যে হারে শিল্প হয়েছে তার তুলনায় কম হারে শিল্প বন্ধ হয়েছে। তাঁর দাবি, যত নতুন শিল্প রেজিস্টার্ড হয়েছে তা বন্ধ কলকারখানার মাত্র ০.১৭ শতাংশ। তবে রেজিস্টার্ড হলেও সেই কলকারখানার উৎপাদন শুরুর কোনও তথ্য মন্ত্রী জানাননি। এতে কত কর্মী কাজ পেয়েছেন তার কোনও তথ্য নেই। ২০২০ সালে রেজিস্টার্ড হওয়া নতুন ছোট-মাঝারি শিল্পের সংখ্যা ছিল ২৯ লক্ষ ২২ হাজার এবং ২০২৫ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১ কোটি ২ লক্ষ। এতে ভুয়ো শিল্পের সংখ্যাও রয়েছে। নতুন নথিবদ্ধ কারখানার সংখ্যা, নতুন কর্মী বা ছাঁটাই কর্মীর ফের নিয়োগের কোনও তথ্য নেই। ফলে ছোট-মাঝারি শিল্পের বিবর্ণ ছবি প্রকট হয়ে উঠেছে মন্ত্রীর দেওয়া তথ্যেই।
Advertisement



