বিশ্বায়নের দুপুর ও ভারত

Written by SNS April 11, 2024 12:38 pm

শোভনলাল চক্রবর্তী

নতুন শতকের প্রথম এক-চতুর্থাংশ প্রায় কাটিয়ে ফেললাম আমরা৷ এই সময়পর্বে যা সবার আগে মনে হল, তা এই যে, বিশ্বায়নের সকাল আমরা পেরিয়ে এসেছি৷ বিশ্বায়নের এখন দুপুর বলা যেতে পারে৷ ভারতে বিশ্বায়নের চাকা ঘুরতে শুরু করে ১৯৯১ সালে, অর্থাৎ প্রায় তিন দশকের বেশি সময় অতিক্রান্ত৷ পেরিয়ে আসা সময়ে আমেরিকা এবং গোটা ইউরোপ জুড়েই রাজনীতির মূল সূরটি ছিল অভিবাসন-বিরোধী মানসিকতার তারে বাঁধা৷ তার সঙ্গে মিশে ছিল সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ (ইটালির প্রধানমন্ত্রী যাকে ‘ইউরোপে ইসলামি সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ’ বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে অভিবাসন ছিল আমেরিকান সমাজে ‘বিষবাষ্প’-এর সমতুল)৷ এরই মধ্যে অর্থনীতির জগতে সাম্প্রতিক অসাম্য এবং যথোপযুক্ত কর্মনিযুক্তির অভাবের ফলে জন্মানো ‘অসন্তোষ’ নিয়ে বিতর্কে এ সবের জন্য বিশ্বায়ন এবং ‘নব্য উদারপন্থা’কেই দোষারোপ করা হতে থাকে৷

পশ্চিমের দেশগুলির দিক থেকে দেখলে বোঝা যায়, উপরোক্ত বিষয়গুলিই বিশ্বায়ন-বিরোধীদের দাঁড়ানোর জায়গা এবং চাকরি কেড়ে নিয়েছে৷ আগে তাঁরা যে সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতেন, তা থেকে তাঁদের বঞ্চিত করেছে৷ কিন্ত্ত যে সব দেশ বিশ্বায়নের ফলে উপকৃত হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে কী বলা যায়? যেমন চিন এই সময়ের মধ্যেই ‘বিশ্বের কারখানা’য় পরিণত হয়েছে, ‘ব্যাক অফিস’ এবং গবেষণার কেন্দ্র হিসাবে ভারত পরিচিতি পেয়েছে৷ এই দুই দেশকেই আগের চেয়ে অনেক বেশি অন্তর্মুখী বলে মনে হচ্ছে৷ তাদের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)-এ বাণিজ্যের অংশটি কমে এসেছে৷ ভারতের ক্ষেত্রে অর্থনীতির আঙিনায় আগের চেয়ে অনেক বেশি রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ, রাষ্টের তরফে সুরক্ষা প্রদান এবং ভর্তুকি দেখা দিয়েছে৷ নীতি নির্ধারণের জগতে নতুন দৃষ্টান্তের উদয় ঘটেছে৷ ভুবনায়নের প্রথম ২৫ বছরে যে দ্রুততায় বিশ্বব্যাপী দারিদ্রের মাত্রা কমে এসেছে, সেই গতি কিন্ত্ত আগেকার কোনও কালপর্বে দেখা যায়নি৷ তার উপর এ-ও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, বিশ্বব্যাপী অসাম্যের মাত্রা কমতির দিকে৷ কারণ, বহু গরিব দেশ ধনী দেশগুলির তুলনায় অর্থনৈতিক উন্নতির ইতিবাচক দিকটিতে অগ্রগতির পরিচয় দিয়েছে৷ একটি হিসাব মোতাবেক বিশ্বব্যাপী ‘জিনি কোয়েফিশিয়েন্ট’ (অসাম্য পরিমাপের সুচক) গত ২৫ বছরে যথেষ্ট মাত্রায় সংশোধিত হয়েছে৷ যার ফলে গোটা বিংশ শতক জুড়ে থাকা অসাম্যের অনেকটাই অবসান ঘটেছে৷ অন্য দিকে, ওয়ার্ল্ড ইনইকুয়ালিটি রিপোর্ট অনুসারে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ থেকে পরবর্তী ৪০ শতাংশের আয় কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে এবং ৫০ শতাংশের নীচে আয় কমেছে৷ এই ছবিটি গোটা পৃথিবীর৷

দেশে দেশে অসাম্যের চেহারাটি কেমন? বিশ্বব্যাঙ্কের দেওয়া তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, জিনি কোয়েফিশিয়েন্টের পতনমুখী প্রবণতা থ্যাচার-রেগন জমানা থেকেই বিপরীত দিকে হাঁটতে শুরু করে এবং ২০টিরও বেশি বৃহৎ রাষ্ট্রে, উন্নত (ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ফ্রান্স) এবং উন্নয়নশীল (চিন, ব্রাজিল, মেক্সিকো) উভয় প্রকার দেশগুলিতেই উন্নতি পরিলক্ষিত হয়৷ বৃহত্তর অর্থে তুরস্ক ও নাইজেরিয়ার মতো দেশে সার্বিক অর্থে তা অপরিবর্তিতই ছিল৷ কিন্ত্ত ভারত ও ইন্দোনেশিয়ায় তার অবনমন ঘটে৷ অসাম্যের তালিকায় ভারত তবু মাঝামাঝি থেকে খানিক উপরের দিকে রয়েছে৷ ইতিমধ্যে উন্নত দেশগুলির পারিশ্রমিক কাঠামো থেকে বোঝা যায়, শ্রমিকের অভাব বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পারিশ্রমিক (মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে আপস করেও) বাড়তে শুরু করেছে৷ আমেরিকা ও এবং এই মুহূর্তে কিছু ইউরোপীয় দেশের ক্ষেত্রেও এ কথা সত্য৷ এ থেকে বোঝা যায়, অসাম্য আরও খানিকটা কমে আসবে৷ বিশ্বায়নের অন্যতম লক্ষণ হল মানুষের গতায়াত বৃদ্ধি (পশ্চিমের অভিবাসন বিরোধিতার উল্টো দিকে)৷ অন্য যে কোনও দেশের চেয়ে ভারত এই বিষয়টি থেকে উপকৃতই হয়েছে৷ এ কথা সত্য যে, শিল্পোৎপাদনে ভারত চিনের সমান সাফল্য পায়নি৷ কিন্ত্ত সে দেশ বাদ দিলে বৈদেশিক বাণিজ্যে, বিশেষত খনিজ তেল ছাড়া অন্য পণ্যের ক্ষেত্রে ভারত বেশ সুবিধাজনক অবস্থাতে রয়েছে৷

জিডিপি-র নিরিখে ভারতে শিল্পোৎপাদনের মাত্রা পশ্চিমের দেশগুলির মতো কমে যায়নি৷ যে ক্ষেত্রে ভারতের খামতি থেকে গিয়েছে, তা হল, এখানে শিল্পোৎপাদন জিডিপি-র থেকে বেশি গতিতে বাড়েনি৷ অর্থনীতি ব্যাপারটা যে কঠিন, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই৷ কিন্ত্ত তার সবটাই যে নিমের পাচন তা-ও কিন্ত্ত নয়৷ অন্য অনেক বিজ্ঞানের মতো অর্থনীতিতেও কিছু সহজ প্রশ্নের জায়গা রয়েছে৷ যা উঠে আসে দৈনন্দিন জীবন থেকেই৷ যেমন, “আমাদের দেশ বিশ্বের অন্যতম বড় আর্থিক শক্তি হয়ে উঠেছে৷ তা হলে আমার রোজকার জীবন এত কষ্টের কেন?” উল্টো দিকে অনেকেই বলবেন, “কই আমার জীবন তো এত কষ্টের নয়!” তা হলে সাধারণ ঔৎসুক্য থেকেই আমরা যে প্রশ্নের দিকে এগোতে থাকব তা হল— দেশের কত জন মানুষের দৈনন্দিন জীবন আর্থিক ভাবে আমাদের সাধারণ ব্যাখ্যাতে স্বচ্ছল? এ জন্য আয়কর যাঁরা দিয়ে থাকেন আমরা তাঁদেরই বেছে নেব সেই শ্রেণি হিসাবে, যাঁদের কাছ থেকে ‘কই আমার জীবন তো এত কষ্টের নয়’ এই প্রশ্ন উঠে আসতে পারে৷ জানি অনেকের মনেই খচখচ করছে একটা প্রশ্ন৷ বছরে আট লক্ষ টাকা আয় (পারিবারিক) পর্যন্ত আর্থিক ভাবে দুর্বল শ্রেণি হিসাবে স্বীকৃত৷ তা হলে কি এঁদেরও এই অঙ্কে ধরা ঠিক হবে?
যৌক্তিক ভাবে আপনার তা হলে আরও একটা প্রশ্ন করা উচিত উন্নয়নের প্রেক্ষিতে৷ আর্থিক ভাবে যাঁরা দুর্বল হিসাবে গ্রাহ্য, তাঁদের কাছ থেকে কি আয়কর নেওয়া সমীচীন? উত্তরটা আমরা জানি৷ কিন্ত্ত তবুও আট লক্ষ টাকার কাছাকাছি যাঁদের আয়, তাঁদেরও কিন্ত্ত আয়কর দিতে হয় আর্থিক ভাবে দুর্বল হিসাবে সরকারের খাতায় নাম ওঠা সত্ত্বেও৷ অর্থাৎ, ঠিক বা বেঠিকের প্রশ্নকে পাশে সরিয়েই কোষাগারের স্বার্থ মেটাতেই এঁদের কর দিতে হচ্ছে যা উন্নয়ন বলবিদ্যার পরিপন্থী৷ ফেরা যাক বুনিয়াদি প্রশ্ন বলে ধরে নেওয়া আলোচনায়৷ ভারতে ১৩০ কোটি নাগরিকের মধ্যে মাত্র ১.৬ শতাংশ আয়কর দেন৷ এই সংখ্যার মধ্যে আছেন তাঁরাও, যাঁরা রিটার্ন দেন কিন্ত্ত নানান ছাডে়র সুবাদে করমুক্ত থাকেন৷ তা হলে ব্যাপারটা দাঁড়ায় এ রকম যে, ভারতের জনসংখ্যার একটা ‘হাতে গোনা’ অংশ যা আয় করেন তা করের আওতায় আসে৷ অর্থাৎ ভারতের জাতীয় উৎপাদন যতই বেশি হোক না কেন তা দেশের জনসংখ্যার একটা ক্ষুদ্র অংশেরই ব্যক্তি আয় বাডি়য়ে চলেছে৷ ভারতের তরফে এই ধরনের বৈষম্যের বিষয়ে সচেতন থাকা উচিত ছিল৷ এ কথা সত্য যে, তিন দশক আগেও যেখানে এ দেশের অর্ধেক মানু্ষের দৈনিক আয় ২.১৫ আমেরিকান ডলার (‘অ্যাবসোলিউট পভার্টি’ বিষয়ে বিশ্বের মাপকাঠি)-এর বেশি ছিল, সেখানে এখন আট জনের মধ্যে সাতজনের আয়ই এই মাপকাঠির উপরে৷ উপার্জন-পিরামিডের চূড়ায় গিয়ে দেখা যাচ্ছে, ২০১৮ সালে বিশ্বের সর্বোচ্চ উপার্জনকারীদের মধ্যে মাত্র ১.৫ শতাংশ মানুষ ভারতীয়৷ এক দশক আগে এই পরিসংখ্যানটি ছিল ১.৩ শতাংশ৷

নীতি নির্ধারণের বিন্দু থেকে দেখলে ভারতের দারিদ্র এবং অসাম্যের একটি ভৌগোলিক প্রেক্ষিত রয়েছে৷ দেশের মধ্যভাগে অবস্থিত রাজ্যগুলির অর্থনীতির বৃদ্ধি উপকূলবর্তী মানুষের থেকে অনেকটাই কম৷ বিহার, ছত্তীসগঢ় প্রভৃতি রাজ্য অবশ্য অগ্রগতির শ্রেয়তর পথ খুঁজে নেবে৷ এর সঙ্গে শাসন পরিচালনার সম্পর্ক রয়েছে৷ সেই সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো পরিষেবার৷ এবং সেই রাজ্য বিনিয়োগকারীদের কী ভাবে আকৃষ্ট করতে পারে, তার সঙ্গেও৷ বিশ্বের প্রথম পাঁচটি আর্থিক ভাবে শক্তিধর দেশ ভারত৷ তা সত্ত্বেও কেন এত কম সংখ্যক লোক আয়কর দেওয়ার উপযোগী আয় করে থাকেন? এই প্রশ্নটা মাথায় এলে তা কি খুব অযৌক্তিক হবে? তার মানে কি এই যে, কোথাও গিয়ে সকলের কাছে সমান সুযোগ নেই? যদি থাকতই তা হলে কি এত কম সংখ্যক মানুষের কপালে আয়কর দেওয়ার খাতায় নাম তোলার সৌভাগ্য হত? যাঁরা আয়কর দেন তাঁরা সৌভাগ্য শুনে রাগ করতে পারেন৷ কিন্ত্ত আয়করের খাতায় নাম তোলা মানে আপনি কিন্ত্ত দেশের ১.৬ শতাংশ ‘বড়লোকের’ সঙ্গে এক পাতে! কিন্ত্ত তা তো হচ্ছে না! আপনি তো উন্নয়ন বলতে কোনও কঠিন তত্ত্বের মধ্যে না ঢুকে সোজা কথায় বোঝেন জীবনযুদ্ধের চাপ কমা৷

হাসপাতালে গেলে সহজে চিকিৎসা, সহজ পরিবহণ ব্যবস্থা, সন্তানের শিক্ষার সুযোগ, দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ, দক্ষতা অনুসারে আয়ের সুযোগ এবং বৃদ্ধ বয়সটা নিশ্চিন্তে কাটাতে৷ কিন্ত্ত সাম্প্রতিক তথ্য এবং দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা তো এই চাহিদার সঙ্গে মিলছে না৷

সন্তানের জন্য শিক্ষার সুযোগ সব নাগরিকেরই বুনিয়াদি চাহিদা৷ এই চাহিদা পূরণ করতে গেলে প্রয়োজনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করার সুযোগ আর সেখানে পড়ানোর খরচ বহন করার আয়৷ কিন্ত্ত যাঁরা মাইনে পান দেশে গত পাঁচ বছরে তাঁদের গড় মাইনে বৃদ্ধির হার ছিল ১০ শতাংশের কাছাকাছি৷ কিন্ত্ত সন্তানকে পড়ানোর খরচ বেডে়ছে ১১ শতাংশের বেশি হারে৷ এর মানে তো একটাই৷ মূল্যবৃদ্ধির গড় হারকে ৬ শতাংশ ধরলে, সংসারের দৈনন্দিন চাহিদা মিটিয়ে সন্তানের পড়ার খরচ মেটাতে গিয়ে আপনি গলদঘর্ম! তবে এটাও ঠিক, স্কুল পার করে সন্তানের উচ্চ বা কারিগরি শিক্ষার জন্য ব্যাঙ্ক থেকে আপনি ঋণ করতে পারেন৷ তার জন্য সরকার ঋণের নিয়ম অনেক সহজ করে দিয়েছে৷ আপনার আয়ে হয়তো সন্তানের শিক্ষার খরচ কুলিয়ে উঠতে পারছেন না, কিন্ত্ত আপনার আশা ঋণ নিয়ে সন্তানের শিক্ষার ব্যবস্থা করলে তার হয়তো আপনার দশা হবে না৷ চাকরি করে সে নিজেই তার ঋণ শোধ করে আপনাদের দেখাশোনা করবে৷ কিন্ত্ত সে গুডে়ও এখন দেখা যাচ্ছে অনিশ্চয়তার বালি৷ কারণ শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে! আপনার জায়গা থেকেই তাই প্রশ্ন হবে যে সব দেশকে হারিয়ে ভারত প্রথম পাঁচে উঠে এসেছে সে সব দেশেও কি সাধারণ নাগরিকের এত দুরবস্থা? শিক্ষা, যা এ দুনিয়ায় বাঁচার প্রাথমিক শর্ত, তা পেতেও এত দুর্ভাবনা করতে হয়? এর সোজা উত্তর হল, ‘না’৷

ডেনমার্ক জাতীয় উৎপাদনের নিরিখে বিশ্বের ৩৮তম দেশ৷ কিন্ত্ত মাথাপিছু আয়ে আমাদের থেকে অনেক এগিয়ে৷ শুধু তাই নয় দেশটি আমাদের থেকে বহু যোজন এগিয়ে নাগরিক সুবিধার নিরিখেও৷ উন্নয়নের দিশা খোঁজার তো এ সামান্য একটা দিক৷ স্বাস্থ্য পরিষেবার কথা বাদই দিলাম৷ বাদ দিলাম বার্দ্ধক্যের সমস্যার কথা৷ ভাবুন তো তাঁদের কথা, যাঁরা ‘দিন আনি, দিন খাই’ অবস্থায় আছেন৷ মিড ডে মিলের মতো প্রকল্প থাকা সত্ত্বেও সন্তানকে প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়ার সংস্থানটুকুও করে উঠতে পারেন না, তাঁদের কথা!

আপনার মনে যদি এই প্রশ্ন ওঠে যে, একেই কি আর্থিক বৈষম্য বলে? দেশের আয় বৃদ্ধি সত্ত্বেও নাগরিক সুবিধার ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকাকেই কি উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ বলে? তা হলে বোধহয় তা ভুল হবে না৷ এর পরের প্রশ্ন অবশ্যই হতে পারে, ‘‘দেশ নাকি দ্রুত তৃতীয় আর্থিক শক্তিধর দেশ হয়ে উঠতে চলেছে৷ তা হলে আমাদের আর্থিক পরিস্থিতির কবে সুরাহা হবে? কবে কমবে এই বৈষম্য?” এর উত্তর কিন্ত্ত বব ডিলানের সেই গানের লাইনেই ভাল বলা আছে “দি আনসার ইজ ব্লোয়িং ইন দ্য উইন্ড৷ “বরং বলা যায়, বিশ্বায়ন এবং তার আদর্শগত অনুষঙ্গের সঙ্গে এসবের কোনও সম্পর্ক নেই৷ এর পরে যা বাকি থাকে, তা হল বেকারত্বের সমস্যা৷ সরকারি পরিসংখ্যান জানায়, পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে৷ কিন্ত্ত বিশেষজ্ঞদের চোখে একই পরিসংখ্যান অন্য ভাবে প্রতিবিম্বিত হয়৷ সরকারের ‘প্রোডাকশন-লিঙ্কড’ বা উৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ইনসেন্টিভ (পিএলআই) স্থানীয় স্তরে নিয়োগ-নিবিড় ‘অ্যাসেম্বলিং’-এর ক্ষেত্রটিতে কর্মনিযুক্তি বাড়াতে পারে (আশা করা যায়, এই পথে এগিয়ে আরও গভীরে পৌঁছে শিল্পোৎপাদনেও নিয়োগ বৃদ্ধি সম্ভব হবে)৷ কিন্ত্তএটি আংশিক সমাধান৷ কঠিন সত্যটি এই যে, সুবেতন যুক্ত চাকরি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কী পদ্ধতি অনুসৃত হবে, তার কোনও সহজ উত্তর নেই৷ ভারতের কাছে এই প্রশ্নটি কিন্ত্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক সাবধানবাণী৷ বেকার মানুষের হাতে কাজ পৌঁছে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ শেষ পর্যন্ত সরকার বাহাদুরকেই নিতে হবে৷