গর্বের পাহাড়ভেদী সড়ক

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী হিমাচলের লাহুল ও স্পিতি উপত্যকার মধ্যে ৯.০২ কিলােমিটার দীর্ঘ এমনই এক অটল টানেলের উদ্বোধন করেছেন। 

Written by SNS Kolkata | October 6, 2020 11:21 pm

অটল টানেলর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। (Photo: Twitter/BJP4India)

দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় যাতায়াতের সুবিধার জন্য পাহাড়ভেদ করে রাস্তা তৈরির ক্ষেত্রে ভারতের উদ্যোগ দেরিতে হলেও প্রশংসার দাবি রাখে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী হিমাচলের লাহুল ও স্পিতি উপত্যকার মধ্যে ৯.০২ কিলােমিটার দীর্ঘ এমনই এক অটল টানেলের উদ্বোধন করেছেন। 

ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে এটি এক দৃষ্টান্তমূলক কাজ। এর ফলে মানালি ও লেহ’র মধ্যে দূরত্ব ছেচল্লিশ কিলােমিটার কমে গেল। ফলে পাঁচ-ছয় ঘণ্টার পরিবর্তে মাত্র ত্রিশ মিনিটেই লাহুল থেকে স্পিতি উপত্যকায় পৌঁছানাে সম্ভব হবে। ভারত-চিনের মধ্যে সাম্প্রতিক স্নায়ুযুদ্ধের প্রেক্ষিতে পশ্চিম সীমান্তে সেনা মােতায়েন ও অস্ত্রশস্ত্র এবং সরঞ্জাম পরিবহণে এক কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। 

এই অঞ্চলে এমন আরও বহু পাহারভেদী সড়কের প্রয়ােজন রয়েছে। ভারতের সীমান্ত অঞ্চল চিন খুবই তৎপরতা দেখিয়েছে এমন পাহাড়ভেদী সড়ক নির্মাণে। এদিক থেকে তারা অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। এমনকী পাহাড়ের ওপর দিয়ে তারা রেললাইনও পেতেছে।

পরিকল্পিত চৌদ্দ কিলােমিটার জেজি টানেল এবং শিকুনলার অতিরিক্ত পরিকাঠামাে বাস্তবায়িত হলে লাদাখে যাওয়ার দুটি অত্যন্ত প্রয়ােজনীয় সড়ক যােগাযােগ স্থাপিত হবে। একটি মানালি থেকে এবং অন্যটি শ্রীনগর-দ্রাস-কার্গিল-লেহ হাইওয়ের দিকে। রােটাংপাশের জন্য প্রথম টানেল তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয় ষাট বছর আগে।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী ২০০০ সালে এলাকাটিতে স্বয়ং যান এবং টানেল নির্মাণের প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। সেকারণেই লাহুল টানেলের নামকরণে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর নাম ব্যবহারে প্রকৃতপক্ষেই শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হল। 

এই টানেল তৈরিতে ইঞ্জিনিয়ারদের নানান প্রতিবন্ধকতার মুখােমুখি হতে হয়েছে। অসহ্য শৈত্যপ্রবাহ ছাড়াও আট লাখ ঘনমিটার পাথর অপসারণ এবং প্রবল পাহাড়ি ঝর্নার মােকাবিলা করতে হয়েছে। টানেল নির্মাণের সময়ে ২০০৩ সালে ক্লাউড ব্রাস্ট ও ফ্ল্যাস ফ্লাডের ধাক্কায় বিয়াল্লিশ জন শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন। 

প্রাকৃতিক ও অন্যান্য কারণে প্রকল্পটি রূপায়ণে বিলম্ব হলেও দশ হাজার ফুট উচ্চতায় এমন দীর্ঘতম একটি টানেল তৈরি সম্পূর্ণ কার মধ্যে দিয়ে এক গৌরবময় ইতিহাসের সৃষ্টি হয়েছে। এতে এলাকার উন্নয়নেরও সহায়ক হবে। প্রচণ্ড তুষারপাতের সময়েও স্পিতি ও লাহুলের মানুষ অনায়াসে দেশের অন্যান্য অংশে যাতায়াত করতে পারবেন। 

এমন দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষ এখন সহজেই তাদের সন্তান সন্ততির লেখাপড়া ও চিকিৎসার জন্য কাছাকাছি সুবিধাজনক এলাকায় যেতে পারবেন। একদিকে পাহাড়ি অভিযান যেমন সহজগম্য হবে তেমনই এলাকার আর্থিক কাজকর্মও বহুগুনে বৃদ্ধি পাবে বলেই আশা। 

টানেলের মধ্যে দিয়ে দিনে তিন হাজার ছােট গাড়ি এবং দেড় হাজার ট্রাক দুটি লেন দিয়ে আশি কিলােমিটার গতিতে যাতায়াত করতে পারবে। টানেলে নিরাপত্তা রক্ষায় বিকল্প পথের ব্যবস্থা রয়েছে, রয়েছে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা, বায়ুর স্বচ্ছতা পরিমাপক ব্যবস্থাও। গর্বের এই টানেলের জন্য ভারত শ্লাঘা বােধ করতে পারে।