দেশে বিদ্যালয়ে শিক্ষক শূন্য পদ বেড়ে হয়েছে ১০ লক্ষের উপর। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট শূন্যপদের সংখ্যা প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ। সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এই তথ্য প্রকাশ করেছে। কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশে কেন্দ্রীয় সরকারি এবং রাজ্য সরকার পোষিত বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৪ লক্ষ ৮০ হাজার। এতে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে, নবোদয় বিদ্যালয়ের সংখ্যা হবে ৩ হাজার। সেই কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে শিক্ষক শূন্যপদের হার হলো ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ। শিক্ষা সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সম্প্রতি তার রিপোর্টে বিদ্যালয়ে এই বিপুল শিক্ষক শূন্যপদের সংখ্যা উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে, প্রতি বছর শিক্ষক শূন্যপদের সংখ্যা বিপুল হারে বাড়ছে। বিদ্যালয়ে দ্রুত স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে শিক্ষাক্ষেত্রে বড় বিপর্যয় নেমে আসবে। এতে দেশে শিক্ষার মানের অবনতি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানানো হয়েছে ওই রিপোর্টে।
সারা দেশে বিদ্যালয়ে শিক্ষক শূন্যপদের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমে চলেছে। শিক্ষার মান বাড়াতে সর্বশিক্ষা অভিযান চালানো হলেও সেখানেও শিক্ষক নিয়োগ কমেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২৩-২৪ সালে দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বিদ্যালয়ে শিক্ষক শূন্যপদের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৭ লক্ষ ২৪ হাজার এবং ২ লক্ষ ৩৪ হাজার। সব মিলিয়ে মোট ৯ লক্ষ ৫৯ হাজার পদ খালি অবস্থায় পড়েছিল। কিন্তু ২০২৪-২৫ সালে তা বেড়ে হয়েছে যথাক্রমে ৫ লক্ষ ৭৩ হাজার এবং ৪ লক্ষ ৯ হাজার। মোট শূন্যপদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ লক্ষ ৮৩ হাজার। দেখা গেছে, এক বছরে শিক্ষক শূন্যপদের সংখ্যা বেড়েছে ২৬ হাজার।
Advertisement
এদিকে, দেশের সমস্ত শিশুদের শিক্ষার আঙিনায় নিয়ে আসা নিশ্চিত করা এবং তাদের কাছে উন্নতমানের শিক্ষা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে যে সর্বশিক্ষা অভিযান শুরু হয়েছে তা শিক্ষকের অভাবে কার্যত বানচাল হতে বসেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিভিন্ন রাজ্যে যেসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার প্রসারে সর্বশিক্ষা অভিযান প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, সেখানে শিক্ষক শূন্যপদে বার বার নিয়োগের সুপারিশ করা হলেও তা মানা হয়নি। বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে শিক্ষক অবসরের পর নিয়োগ না হওয়ায় তাতে শূন্যপদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এনিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে রিপোর্টে বলা, হয়েছে, সর্বশিক্ষা অভিযানের অর্থ বরাদ্দ হয়েছে যেসব বিদ্যালয়ে তাদের শিক্ষক শূন্যপদে নিয়োগের সুপারিশ করেছে কমিটি। কিন্তু দেখা গেছে ওই সুপারিশ মানা হয়নি।
Advertisement
কমিটি বর্তমান রিপোর্টে একই সুপারিশ জানিয়ে উল্লেখ করেছে, গত এক দশকে সর্বশিক্ষা অভিযানের অর্থ বরাদ্দ পাওয়া বিদ্যালয়গুলির শিক্ষার হাল শিক্ষকের অভাবে আরও খারাপ হয়েছে। সর্বশিক্ষা অভিযানের যে লক্ষ্য ছিল তা পূরণ হয়নি। কমিটি এনিয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রককে জানিয়েছে, যেসব রাজ্যের বিদ্যালয় সর্বশিক্ষা অভিযানে বরাদ্দের শর্ত মতো স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ করছে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সর্বশিক্ষা অভিযানের বরাদ্দ পাওয়া অর্থ নিয়ে বহু বিদ্যালয় শর্ত মতো স্থায়ী শিক্ষক নিযোগ না করে সামান্য অর্থে অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ করছে। এতে সরকারি নিয়োগে তফসিলি জাতি, আদিবাসী এবং আর্থিকভাবে দুর্বলদের জন্য সংরক্ষণের যে নিয়ম রয়েছে তা মানা হয়নি। এর ফলে শিক্ষক নিয়োগে সংরক্ষণের নিয়ম লঙ্ঘন করা হচ্ছে। সমস্ত বিদ্যালয়ে অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ করে স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ জানিয়েছে কমিটি।
কেন্দ্র পরিচালিত কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় (কেভি), নবোদয় বিদ্যালয়ে (এনভি) শিক্ষক শূন্যপদের সংখ্যা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সংসদীয় কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, কেন্দ্র পরিচালিত বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩ হাজার। কিন্তু শিক্ষকদের ক্ষেত্রে শূন্যপদের সংখ্যা ৩০-৫০ শতাংশ। বিদ্যালয়ে স্থায়ী নিয়োগের সুপারিশ করা হলেও তা মানা হচ্ছে না। একদিকে শিক্ষক শূন্যপদের সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের শূন্যপদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। রিপোর্টে কেন্দ্রের ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার্স এডুকেশনের (এনসিটিই) শূন্যপদের সংখ্যা উল্লেখ করে জানানো হয়েছে, কাউন্সিলে গ্রুপ ‘এ’ পদে ৫৪ শতাংশ, গ্রুপ ‘বি’ পদে ৪৩ শতাংশ এবং গ্রুপ ‘সি’ পদে ৮৯ শতাংশ পদ শূন্য অবস্থায় পড়ে আছে। গত ২০১৯ সাল থেকে কাউন্সিলে কোনও স্থায়ী নিয়োগ হয়নি। কাউন্সিলের কাজ নির্ভর করছে অস্থায়ী কর্মীদের উপর। এতে শিক্ষক প্রশিক্ষণের কাজও ব্যাহত হচ্ছে।
Advertisement



