• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

হঠাৎ নারী-দরদি মোদী

বিহারের মহিলা ভোটব্যাঙ্ক দখলের লড়াইয়ে এখন বিজেপি-নীতীশ জোট ও বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ জোট সম্মুখ সমরে। সময়ই বলে দেবে সাফল্য কোন দিকে ঝুঁকে থাকবে।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

শিয়রে বিহার বিধানসভার ভোট। স্বাভাবিকভাবে এখনই মহিলা ক্ষমতায়নের বিষয়টি সামনে আনা জরুরি বলে মনে করেছে বিহারের শাসক জোট। আর নরেন্দ্র মোদীর আমলে মহিলা ক্ষমতায়ন মানেই কিছু অর্থের ব্যবস্থা করে দেওয়া। দিল্লি থেকে ভার্চুয়ালি মহিলাদের ‘স্বনির্ভর করে তুলতে এবং জীবিকার সুযোগ সৃষ্টি’র প্রকল্পের নামে নতুন এক কর্মসূচির উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উপস্থিত ছিলেন বিহারে জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশকুমার। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, বিহারের ৭৫ লক্ষ মহিলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ১০ হাজার টাকা ঢুকে যাবে পরিবারপিছু।

এতদিন পরে হঠাৎ করে মহিলা ক্ষমতায়নের বিষয়টি কেন নীতীশকুমার সরকারের মাথায় এলো, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এনডিএ সরকারের এই উৎকোচের রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এনডিএ সরকারের ম হিলাদের ক্ষমতায়ন সম্পর্কিত ঘোষণাকে কটাক্ষ করে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেছেন, ‘এদের শুধুই ভোটের রাজনীতি। উল্টোদিকে আমরা মহিলাদের সম্মান জানানোয় বিশ্বাস করি।’

Advertisement

নীতীশকুমার সরকারের এই প্রকল্প ৭৫ হাজার কোটি টাকার। রাজ্যে বেকারত্ব চরমে, গ্রাম-শহরের যুবকরা রোজগারের আশায় পাড়ি দিচ্ছেন ভিনরাজ্যে, সরকার বিরোধিতার পারদ ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী— এমন পরিস্থিতিতে মহিলা ক্ষমতায়নের প্রশ্ন সামনে আনার বিষয়টিকে ভোটের রাজনীতি ছাড়া আর কিছু নয় বলেই মনে করছে অভিজ্ঞ মহল। প্রকল্প ঘোষণার সপক্ষে রাজ্য সরকারের দাবি, ‘মহিলাদের স্বনির্ভরতা এবং জীবিকার সুযোগ তৈরি’ করে দেওয়াই মূল লক্ষ্য। দিল্লিতে বসে মোদী প্রকল্প উদ্বোধন করলেও পাটনায় ভার্চুয়ালি হাজির ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশকুমার, উপ-মুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরী সহ বহু রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী।

Advertisement

প্রকল্প উদ্বোধনকালে মোদী জানিয়েছিলেন, এই প্রকল্পের কথা শুনে তিনি মুগ্ধ। তাঁর দাবি, প্রতিটি পরিবারের অন্ততপক্ষে একজন মহিলা উপকৃত হবেন এই প্রকল্পে। এই প্রকল্প নিয়ে এতটাই মুগ্ধ যে তিনি বলেই দিলেন, ওই টাকা হাতে পেয়ে মহিলারা কী কী করতে পারেন। তাঁর মতে, বিহারে মহিলারা ওই টাকা দিয়ে বাসনপত্র, মুদি মাল, সাজসজ্জা, খেলনা কিংবা স্টেশনারি দোকান খুলে রোজগার করতে পারবেন। মেনকি তাঁরা গবাদি পশুপালন কিংবা পোলট্রির ব্যবসাও করতে পারবেন বলে মনে করেন মোদী। বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন সেই একই—এতদিন রাজত্ব করে শেষে ভোটের মুখে কেন মনে পড়লো মহিলাদের স্বনির্ভরতার কথা।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কিংবা মুখ্যমন্ত্রী নীতীশকুমারের প্রকৃত ইচ্ছাটা কী, তা বিহারের মহিলাদের বিবেচনা করে দেখতে হবে। এই আবেদন রেখে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ‘উৎকোচ’ রাজনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন।

মহিলাদের স্বনির্ভর হতে বিহারে এককালীন ১০ হাজার টাকা অর্থ সাহায্যের প্রকল্প ঘোষণা করলেন মোদী। এর পাল্টা জবাবে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী প্রতিশ্রুতি দিলেন, বিরোধীদের জোট ক্ষমতায় এলে মহিলাদের প্রতি মাসে আড়াই হাজার টাকা দেওয়া হবে। সঙ্গে থাকবে ২৫ লক্ষ টাকার বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং ভূমিহীন পরিবারের জন্য ৩ খেরে ৫ ডেসিমিল পর্যন্ত জমি, যার মালিকানা থাকবে বাড়ির মহিলাদের নামে। বিজেপি ও নীতীশ সরকার কোনও দিনও মহিলাদের এই সম্মান দিতে পারবে না। বিশ বছর সরকারে থাকার পরে ঠিক ভোটের আগে কেন মহিলাদের ভোট কিনতে টাকা দেওয়া হচ্ছে, এই প্রশ্ন তোলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। এসব ভোটের আগে রাজনৈতিক চমক, কল্যাণমূলক প্রকল্প নয়।

বিরোধীদের অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদী আগে সাধারণ মানুষের হাতে টাকা বিলিকে খয়রাতি বলে ‘রেউড়ি বিলি’ তকমা দিয়েছিলেন। এখন বিজেপি ভোটের আগে টাকা বিলি করছে। মোদী কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে অর্থ বিলি করেছেন ‘ইন্ডিয়া’ জোটের ‘মাই বহেন’ যোজনার প্রতিশ্রুতি নকল করে। ভোটের পরেই এই অর্থবিলি বন্ধ হয়ে যাবে।

বিহারের মহিলা ভোটব্যাঙ্ক দখলের লড়াইয়ে এখন বিজেপি-নীতীশ জোট ও বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ জোট সম্মুখ সমরে। সময়ই বলে দেবে সাফল্য কোন দিকে ঝুঁকে থাকবে।

Advertisement