সম্পর্কের টানাপোড়েন

দ্রাবিড় মুন্নেত্রা কাঝাগাম (ডিএমকে)-এর সঙ্গে জোটবন্ধন ছিন্ন করে ভারতীয় কংগ্রেস তামিলনাড়ুতে আরেকবার হারাকিরি করতে চলেছে।

Written by SNS Kolkata | January 21, 2020 4:42 pm

ডিএমকে প্রধান এম কে স্ট্যালিন। (Photo: Kuntal Chakrabarty/IANS)

দ্রাবিড় মুন্নেত্রা কাঝাগাম (ডিএমকে)-এর সঙ্গে জোটবন্ধন ছিন্ন করে ভারতীয় কংগ্রেস তামিলনাড়ুতে আরেকবার হারাকিরি করতে চলেছে, যে জোট ২০০৪ থেকে শক্তপােক্ত অবস্থাতেই ছিল। হাইকম্যান্ড চালিত দল কংগ্রেসের তামিলনাড়ুতে কোনও স্বাধীন অস্তিত্বই নেই। সম্প্রতি তামিলনাড়ুর বিভিন্ন অংশে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলির নির্বাচনে ডিএমকে তাদের পর্যাপ্ত আসন দেয়নি বলে কংগ্রেসের অভিযােগ।

এরপর দিল্লিতে নাগরিকত্ব সংশােধনী আই (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি)’র বিরুদ্ধে কংগ্রেস আহত বিরােধী দলগুলির বৈঠক ডিএমকে’কে বয়কট করায় তামিলনাড় কংগ্রেসের কোমর ভেঙে গেছে। তামিলনাড়ু বিধানসভার নির্বাচন আর মাত্র এক বছর বাকি, এই অবস্থায় কংগ্রেসের পক্ষে একা নির্বাচনে লড়া বিলাসিতারই শামিল। একমাত্র কন্যাকুমারী জেলা (যেটা এখনও কংগ্রেসের দুর্গ) বাদ দিলে রাজ্যের বাকি অংশে কংগ্রেসের একটি আসনও নিজের থেকে জেতার ক্ষমতা নেই, যদিও রাজ্যের নানা স্থানে তাদের ছােটখাট ভােটব্যাঙ্ক রয়েছে।

ডিএমকে এক দশক হল ক্ষমতার বাইরে রয়েছে। তাই ২০২১-এ ক্ষমতা দখলের জন্য তারা বলেছে, মরিয়া হয়ে ঝাপাবে। প্রবীণ ডিএমকে নেতা এস দুরাই মুরুগান বলেছেন, কংগ্রেস তার দলের নতৃত্বাধীন জোট ছাড়লে ভালােই অথচ সম্প্রতি ভেলাের লােকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে দুরাই মুরুগানের পুত্র কাথির আনন্দ যখন ডিএমকে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন, তখন কিন্তু দুরাই মুরুগান কংগ্রেসের সমর্থন চাইতে ইতস্তত করেননি। ওই আসনে কংগ্রেসের একজন নির্দল হিসেবে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু তাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে নিরস্ত করার জন্য দুরাই মুরুগান কংগ্রেসকে বুঝিয়ে রাজি করান। জোট থাকলে দু’দলেরই লাভ, ডিএমকে’র যেমন কংগ্রেসের সমর্থন প্রয়ােজন, তেমনই কংগ্রেসেরও ডিএমকে’কে দরকার।

১৯৬৭ সালে ডিএমকের কাছে সামান্য ব্যবধানে হেরে ক্ষমতা হারানাের পর তামিলনাড়ুর কংগ্রেস শাখা পুনরায় ক্ষমতা দখলের আগ্রহই হারিয়ে ফেলে। কংগ্রেস এতটাই মনােবল হারিয়ে ফেলে যে, ১৯৭১-এ বিধানসভার পরবর্তী নির্বাচনে তারা একটি আসনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি। তারপর থেকে তাদের হয় এআইএডিএমকে অথবা ডিএমকের কাঁধে ভর করে নির্বাচনী লড়াইয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে।

এআইএডিএমকে এখন বিজেপি শিবিরে রয়েছে, ফলে তামিলনাড়ুর বর্তমান শাসক দলের সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক জিইয়ে তােলার কোনও সম্ভাবনা নেই। ১৯৬৭ সালে ধাক্কা খাওয়ার পর ঘাের কাটিয়ে উঠতে কংগ্রেসের দশ বছর সময় লেগে যায়। ১৯৭৭-এ তারা ফের বিধানসভা নির্বাচনে ফিরে এলেও তাদের লড়াই এআইএডিএমকে’র লেজুড় হিসেবেই সীমাবদ্ধ ছিল। তারপর থেকে তারা ক্ষমতার ভাগ ছাড়াই কখনও ডিএমকে, কখনও এআইএডিএমকে’র সঙ্গী হিসেবে নির্বাচনে লড়েছে। দুই বড় দ্রাবিড় দল প্রতিবারই যথেষ্ট সংখ্যক আসনে লড়াই করেছে, ফলে তাদের একার জোরে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে কোনও অসুবিধা হয়নি।

২০০৬ সালে একবারই কংগ্রেসের সামনে ক্ষমতার স্বাদ পাওয়ার সুযােগ এসেছিল, সেবার তাদের শরিক ডিএমকে একার জোরে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু সেবারও ক্ষমতার ভাগ পেতে উদগ্রীব রাজ্য কংগ্রেসের ইচ্ছাকে জলাঞ্জলি দিয়ে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড উদার মনােভাব দেখিয়ে বাইরে থেকে মন্ত্রিসভাকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেয়। এবারও ডিএমকে’র সুবুদ্ধির উদয় হলে নেতাহীন, কাণ্ডারিহীন এআইএডিএমকে’র ২০২১-এর নির্বাচন জিতে হ্যাটট্রিক করার সম্ভানা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।