• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

শিল্পীর নবজন্ম

১৯৩১ সালের ২৯ জানুয়ারী ভক্স পত্রিকায় লিখিত চিঠি ‘‘পিছু ফিরিবার পথ আমি নিজহাতে নষ্ট করিয়াছি’’ এই প্রবন্ধে এই কথা জানাইয়া আমি ঘোষণা করিয়াছিলাম।

ফাইল চিত্র

রম্যাঁ রলাঁ

পূর্ব প্রকাশিতর পর…

Advertisement

১৯৩১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের লা নুভ্যেল রেভু মঁদেল পত্রিকায় এই প্রবন্ধে আমি বুদ্ধিজীবিগণকে নিশ্চেষ্টতার আশ্রয় হইতে বাহিরে আনিবার চেষ্টা করি!

Advertisement

যে দ্বৈত সংগ্রাম শীঘ্রই শুরু হইবে তাহাতে পক্ষ নির্বাচনের জন্য আমি তাহাদের আহ্বান জানাই। এই দ্বৈত সংগ্রাম বলিতে আমি বুঝাইতে চাহিয়াছিলাম একদিকে সোভিয়েট ইউনিয়নের সহিত ইউরোপের পুঁজিবাদী ফ্যাশিস্টগণের সম্মিলিত শক্তির সংঘর্ষ; অন্যদিকে ইউরোপের সহিত বিদ্রোহী এশিয়া ও আফ্রিকার সংগ্রাম। আমার পক্ষ হইতে আমি জানাইতেছিলাম, ‘‘যদি সোভিয়েট ইউনিয়ন আক্রান্ত হয় তবে আক্রমণকারী যেই হউক না কেন, আমার স্থান সোভিয়েটের পার্শ্বে। সানইয়াৎসেন ও গান্ধীর এশিয়ার বিরুদ্ধে সভ্যতার কপট আচরণে আত্মগোপন করিয়া যাহারা অভিযান শুরু করিবে সেই ইউরোপীয় শোষণকারীদের পক্ষ লইয়া আমি কখনই যুদ্ধ করিব না। সেই প্রলয়ঙ্কর বর্বর সংগ্রাম যদি কখনও তুমি আরম্ভ কর তবে, হে ইউরোপ, তোমার বিরুদ্ধে, তোমার উদ্ধত স্বৈরাচার ও উন্মত্ত ব্যভিচারের বিরুদ্ধে আমি অভিযান শুরু করিতে দ্বিধা করিব না। ভারতবর্ষ, ইন্দোচীন, চীন এবং প্রাচ্যের নিরীড়িত শোষিত জাতির পাশে দাঁড়াইয়া আমি তোমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাইব।

১৯৩১ সালের ২৯ জানুয়ারী ভক্স পত্রিকায় লিখিত চিঠি ‘‘পিছু ফিরিবার পথ আমি নিজহাতে নষ্ট করিয়াছি’’ এই প্রবন্ধে এই কথা জানাইয়া আমি ঘোষণা করিয়াছিলাম। আমার ফরাসী লেখকবন্ধুদের অনেকে আমার পিছু পিছু সোভিয়েট ইউনিয়নের দিকে আগাইয়া আসিলেন। ‘‘আমার মধ্যে এখন একটি নূতন ইউরোপের অভ্যুদয়কে চোখ মেলিয়া তাহারা দেখুন যাহা তাহাদের দিকে আগাইয়া আসিতেছে।’’

১৯৩১ সালের ৬ই এপ্রিল ‘‘হে অতীত, বিদায়’’। ১৫ই জুন ইউরোপ পত্রিকায় প্রকাশিত এই প্রবন্ধটিতে আমার এই সময়কার মানসিক বিবর্তনের একটা পূর্ণ চিত্র পাওয়া যায়, কারণ, ১৯১৫ সালের যুদ্ধের সূচনাকাল হইতে সেদিন পর্যন্ত বিভিন্ন স্তর ও সংঘর্ষের একটা ছবি ইহাতে আছে। সংগ্রামের ঊর্ধ্বে পুস্তক হইতে কতদূরে আসিয়াছি এই প্রবন্ধটিতে তাহা বুঝা যায়।

ইহার মধ্যে মধ্যে সোভিয়েট লেখকদের সহিত খোলাখুলি আলোচনা চলে, সোভিয়েট পত্রিকাগুলিতে উহা সম্পূর্ণ প্রকাশিত হয় (৩শে ফেব্রুয়ারী তারিখে প্রকাশিত গ্ল্যাডকভ ও গেলভিলের নিকট লিখিত চিঠি এবং ‘‘স্বাতন্ত্র্যবাদ ও মানবীয়তা’’ ও বিতর্ক শুরু হয়ঃ বুদ্ধিজীবিগণের কঠোর অভিভাবক গোর্কির চিন্তাধারা বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা শুরু হয় ‘‘সত্য ও মিথ্যা ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ’’, ‘‘সৃষ্টির চরমমুহূর্তে জনগণের ইচ্ছা শক্তি’’ সম্পর্কে এবং সেখানে হইতে ব্যক্তিমানুষের মধ্যে যে বিপুল শক্তি সঞ্চারিত হয় তৎসম্পর্কে আলোচনা আরম্ভ হয়। এই আলোচনার ফলে আমার চিন্তাজগতে যেটুকু সন্দেহের মেঘ অবশিষ্ট ছিল তাহা অপসারিত হইয়া যায়; ব্যক্তি ও সামাজিক মানুষের মধ্যে যে মিল আমি বহুবৎসর ধরিয়া খুঁজিয়া ফিরিতেছিলাম এইবার তাহার সন্ধান পাইলাম।

এই যে ব্যাপক দৃষ্টি ও জ্ঞান আমি লাভ করিলাম তাহা আমার ইউরোপীয় বুদ্ধিজীবী সহকর্মীদের মধ্যে প্রচার করিবার চেষ্টা করিলাম। শান্তিবাদী, অহিংসাপন্থী, মানবতাবাদী এবং মিথ্যা প্রচারবিভ্রান্ত অথচ আন্তরিক আদর্শবাদী যাহারা মাক্সপন্থী-লেনিনপন্থী বিপ্লবের বাস্তব-আসক্ত সংকীর্ণতায় ভীত হইয়াছিলেন, তাহাদের সকলের মধ্যেই আমার নবলব্ধ জ্ঞানকে প্রচার করিবার চেষ্টা করিলাম। এই প্রসঙ্গে নিম্নলিখিত চিঠিগুলি লিখি।

(ক্রমশ)

Advertisement