রমাপ্রসন্ন দত্ত
ভারতের জনসংখ্যা ক্রমবর্ধমান। বিশ্বের মধ্যে জনবহুল দেশ হিসাবে ভারত বর্তমানে চিনকে অতিক্রম করেছে। ইউএনও-র জনসংখ্যার উপর যে রিপোর্ট পাওয়া যায় ১০ জুন, ২০২৫ তাতে দেখা যায় ভারতের জনসংখ্যা ১৪৬ কোটি অতিক্রম করেছে। ভারতের জনসম্পদ বিশ্বের সর্ববৃহৎ। এখন এই বিশাল জনসম্পদ আমরা কতটা উন্নয়নের কাজে নিয়োজিত করতে পারছি তার উপর আমাদের দেশের সার্বিক উন্নয়ন নির্ভর করবে। তার জন্য প্রতিটি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে গঠনমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। যার ফলে প্রতিটি সক্ষম মানুষকে দেশের বহুবিধ উন্নয়নের কাজে নিয়োজিত করতে পরিকল্পনা গ্রহণ ও কার্যে রূপায়ণ করা সম্ভব হবে। জনসংখ্যার সুষ্ঠু পরিকল্পিত ব্যবহার দেশের সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে।
Advertisement
আমাদের এই বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে এক বিরাট সংখ্যক মানুষ প্রবীণ-প্রবীণা৷ তাঁদের ভালো রাখার জন্য আমাদের বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। এর জন্য প্রতিটি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। ভারতবর্ষে আমরা প্রবীণ জনগোষ্ঠীর যে চিত্র পাই, তা নিম্নরূপ—
১৯৬১ সালে প্রবীণ জনসংখ্যা ৫.৬ শতাংশ। ২০১১ সালে প্রবীণ জনসংখ্যা ৮.৬ শতাংশ। ২০২১ সালে প্রবীণ জনসংখ্যা ১০.১ শতাংশ। ২০৩১ সালে প্রবীণ জনসংখ্যা হবে ১৩.১ শতাংশ।
Advertisement
এই প্রবীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে যদি নজর দিই প্রবীণ ও প্রবীণাদের শতাংশের হিসাব দেখতে পাব। মহিলা ৯ শতাংশ এবং পুরুষ ৮.২ শতাংশ। মহিলাদের মধ্যে বিধবা অথবা একাকী মহিলার সংখ্যা বেশি।
এখন আমাদের দেখতে হবে উন্নত দেশে সুষ্ঠু ও সুপরিকল্পিত ব্যবস্থার মাধ্যমে এই প্রবীণ জনগোষ্ঠীর মানুষরা কীভাবে ভালো থাকতে পারেন। আমাদের দেশে ৬০ বৎসরের ঊর্ধ্বে মানুষদের প্রবীণ নাগরিক রূপে গ্রহণ করা হয়। অনেক দেশে আবার এই বয়সসীমা ৬৫ বৎসর। প্রবীণ এই মানুষদের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির মধ্যে নিয়ে আসা প্রয়োজন।
প্রতিটি রোজগেরে মানুষকে এই সুরক্ষা যোজনার মাধ্যমে নিয়ে আসতে হবে। যার মাধ্যমে সারাটি জীবন সে সুরক্ষার মাধ্যমে থাকবে। বিশেষ করে আজীবন চিকিৎসা ও অন্য সকল সুবিধা সে ভোগ করবে। কাজে যোগ দেবার সময় থেকেই এই সুরক্ষা যোজনার সদস্য হিসাবে রোজগারের একটা অংশ তাকে জমা করতে হবে। এটির নাম সোশ্যাল সিকিউরিটি স্কিম। এটির মাধ্যমে বৃদ্ধ বয়সে বাঁচার সব সুযোগ-সুবিধা ও চিকিৎসা পাওয়া যাবে। এই ব্যবস্থা আমাদের দেশে অবিলম্বে চালু হওয়া প্রয়োজন। আমেরিকা, ইংল্যান্ডে এই ব্যবস্থা চালু রয়েছে। আমাদের প্রধান দাবি হওয়া প্রয়োজন প্রবীণদের সার্বিক কল্যাণ করার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ। তার উপর সকল প্রবীণ মানুষের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা একান্ত প্রয়োজন।
বর্তমানে প্রতিদিন আমাদের সংবাদপত্র ও মিডিয়ার মাধ্যমে প্রবীণ, নারী ও শিশুদের উপর বিবিধ অত্যাচার ও অবিচার দেখছি। এর ফলে জীবনের শেষ প্রান্তে মন ভারাক্রান্ত হয়ে যায়। অনেক সময়ে দেখি রক্ষক ভক্ষকের ভূমিকা গ্রহণ করে।
আমাদের প্রবীণ নাগরিক ও মাতাপিতার জন্য যে সুরক্ষা আইন আছে, তা বর্তমান আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তন সাধন করা একান্ত প্রয়োজন। এই আইনটি ব্যাপক হওয়া প্রয়োজন। আর যেটি প্রয়োজন প্রতি জেলায় বৃদ্ধাবাস স্থাপন করা অন্তত ১০০ জন মহিলা ও পুরুষের জন্য। এটি করতে হবে সরকারি ও বেসরকারি উভয়ের যৌথ উদ্যোগে। দেখতে হবে যাতে এটি লাভজনক ব্যবসায় পর্যবসিত না হয়। সেবার মনোভাব নিয়ে যেন স্থাপিত হয় তা দেখতে হবে। যদি প্রতিটি ব্লকে ৫০ বা ১০০ আসনের বৃদ্ধাবাস স্থাপন করা যায় অনেক ভালো হবে। সেটিও যেন সরকারের নজরদারিতে পরিচালিত হয়, তা দেখতে হবে।
রাজ্য সরকার প্রবীণদের জন্য অতি অবশ্যই স্টেট পলিসি ফর এল্ডার পার্সন করবেন এবং প্রবীণ মানুষের সুরক্ষা দেবেন। তা না হলে প্রবীণদের জন্য উন্নয়নের কাজ করা সম্ভব হবে না। কেন্দ্রের যে কেন্দ্রীয় পলিসি তারও সংস্কার সাধন করা প্রয়োজন।
আর বলতে হয় প্রতিদিন নানাভাবে অত্যাচোর ও উৎপীড়ন হয় প্রবীণদের উপর তা বন্ধ করা প্রয়োজন। এই কমিশন উপযুক্ত পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রবীণদের সুবিচার প্রদান করবেন।
আর একটি বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়া দরকার, সেটি হল সহায় সম্বলহীন প্রবীণদের বার্ধক্যভাতা প্রদান করা, কম করে মাসে ৩০০০ টাকা। এর কমে বর্তমানে একজন অসহায় বৃদ্ধ বা বৃদ্ধার জীবন নির্বাহ করা সম্ভব নয়।
বিভিন্ন কারণে অনেক প্রবীণ প্রবীণা একাকী জীবনে বাধ্য হন। তাঁদের মধ্যে অনেকে অবিবাহিত। যাঁরা নিঃসন্তান তাঁদের একজনের অবর্তমানে অপর জন একা হয়ে যান। এর ফলে অনেক অসুবিধার মধ্যে দিন যাপন করতে বাধ্য হন। শরীর যখন অচল হয়ে যায় তখন একাকী জীবন কষ্টসাধ্য। এই অবস্থায় তাঁদের ভালো বৃদ্ধাবাসে থাকাই শ্রেয়।
সবশেষে বলব, প্রতিটি রাজ্য সরকার প্রবীণদের জন্য যদি একটি বিভাগ খোলেন, ভালো হয়। তা হলে প্রবীণদের উন্নয়নের সকল বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়া সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে প্রবীণদের কল্যাণে ব্যবস্থা গ্রহণ ত্বরান্বিত হবে। রাজ্য সরকারের সঙ্গে কেন্দ্র অতি অবশ্যই প্রবীণদের কল্যাণ দপ্তর খুলবেন যাতে কেন্দ্র ও রাজ্যের সহায়তায় প্রবীণদের কল্যাণ ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। আগামী দিনে প্রবীণ নাগরিকরা যাতে সম্মানের সঙ্গে বাঁচাতে পারে তার ব্যবস্থা অবিলম্বে করতে হবে।
Advertisement



