• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

শিল্পীর নবজন্ম

বুদ্ধিজীবী সুবিধাভোগী শ্রেণী; শোষণকারীরা তাহাদের যে সম্মান ও সুযোগ সুবিধা দেন তাহাতেই কৃতার্থ হইয়া তাহারা সাধারণ আদর্শের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করে।

ফাইল চিত্র

রম্যাঁ রলাঁ

পূর্ব প্রকাশিতর পর…

Advertisement

লাইফজিগের বিচার ও ডিমিট্রভের মুক্তিলাভ আমাদের প্রথম জয়লাভ, কিন্তু হিট্লারবাদের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ এইখানেই ক্ষান্ত হয় নাই। ট্রলার, থেলমান এবং জার্মানীর অন্যান্য রাজনৈতিক বন্দিগণের মুক্তিলাভের জন্য আমরা অভিযান শুরু করিলাম। ভিয়েনায় শ্রমিক বসতিতে বোমাবর্ষণের পরে (১৯৩৪ সালের ২১শে মার্চ ও ২০শে জুন) পরদিন ডলফাসকে আমরা তীব্রভাবে আক্রমণ করিলাম। সেকুর রুজ আঁতেরনাসিয়নাল-এর সদস্য হিসেবে আমরা মুসোলিনীর কারাগার হইতে মহাত্মা গ্রানস্কি ও তাহার সঙ্গিগণকে বাহিরে আনিবার চেষ্টা করিতে লাগিলাম (১৯৩৪ সালের সেপ্টেম্বর)। অস্টুরিয়ামের অপরাজিত বিপ্লবের প্রতি আমার এই অভিযান আমি ভারতবর্ষে পর্যন্ত প্রসারিত করিলাম, কারণ সেখানেও তাহাদের প্রচারকার্য বিষ ছড়াইতেছিল (১৯৩৩ সালের ২৭শে নভেম্বর ভারতীয় যুবকগণের প্রতি’’)।

Advertisement

পশ্চিমে ‘‘উদার’’ জাতিগুলির ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদকে আমরা আক্রমণ করিতে ছাড়িলাম না। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে (‘‘মীরাট মামলার বন্দিগণ’’ ১৯৩৩ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারী) ‘‘স্বাধীনতার সর্বশেষ দুর্গ’’ দালাদিয়েরের ফ্রান্সের বিরুদ্ধে (সাইগন বিচারের রায়ের বিরুদ্ধে’’, ১৯৩৩ সালের মে মাস) আমরা যুদ্ধ চালাইলাম। বুদ্ধিজীবী ও শ্রমজীবীদের সম্মিলিত প্রতিরোধের বিরুদ্ধে ৬ই ফেব্রুয়ারী তারিখে পারিতে ফ্যাশিজম্ চূর্ণ হইয়া গেল। আমি সতর্ক বাণী উচ্চারণ করিলাম (কলংক ধ্বংস কর, ১০ই ফেব্রুয়ারী, ১৯৩৪ সাল) যুবকগণের নিকট আবেদন জানাইলাম (১৯৩৪ সালের মে মাস) এবং বণিকস্বার্থের ফ্যাশিজমের সহিত আত্মপ্রতারক ফরাসী বুদ্ধিজীবীশ্রেণীর এ অপবিত্র সম্মিলনকে আমি তীব্র ভাষায় আক্রমণ করিলাম। ফরাসী বুদ্ধিজীবীশ্রেণী তখন ‘‘মনের বিপ্লব’’ এই ছদ্মনামে তাহাদের স্বার্থপরতাকে ঢাকিবার চেষ্টা করিতেছিল (১৯৩৪ সালের ১০ই জুন তারিখে সোভিয়েট সাময়িক পত্র The Scientific & Technical Front-এ প্রকাশিত হইবার জন্য এচাকএর নিকট লিখিত চিঠি)। আমি আমার সঙ্গীদিগকে, বুদ্ধিজীবীদিগকে আহ্বান করিলাম সংযুক্ত ফ্রন্ট গঠনের জন্য শ্রমজীবীদের মধ্যে নামিয়া কাজ করিবার জন্যঃ ‘‘তাহাদের দেহ হইতে আমাদের জন্ম, তাহাদের স্বাধীনতা আমাদের স্বাধীনতা, তাহাদের শক্তি আমাদের শক্তি। তাহারাই গাছের মূল কাণ্ড; বিজ্ঞান, সাহিত্য, কলা এইগুলি বিভিন্ন শাখামাত্র। কাণ্ড যদি দুর্বল হইয়া যায় তবে শাখাও শুকাইয়া যাইবে। বুদ্ধিজীবী সুবিধাভোগী শ্রেণী; শোষণকারীরা তাহাদের যে সম্মান ও সুযোগ সুবিধা দেন তাহাতেই কৃতার্থ হইয়া তাহারা সাধারণ আদর্শের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করে। যে গাছকে আমরা টবের মধ্যে আনিয়া বসাইয়াছি সেই গাছ হইতে ছিড়িয়া লওয়া ফুলের মত তাহাদের অবস্থা।

(ক্রমশ)

Advertisement