রম্যাঁ রলাঁ
পূর্ব প্রকাশিতর পর
Advertisement
এই সংঘর্ষের মধ্যে থাকিয়াও যে সকল হতভাগ্যের সংগ্রামের উন্মাদনা হইতে মুক্ত রহিবার সৌভাগ্য হইয়াছে তাহারা আপনার ও আপনার দেশের দিকে তাকাইতেছে। যুদ্ধরত জ্ঞাতি ভ্রাতাগণের কানে আপনার কণ্ঠস্বর যেন অবিলম্বে দৃঢ়ভাবে ও সত্যভাবে পৌঁছিতে পারে। এ-যুদ্ধে কেবল মাত্র যুদ্ধরত জাতিগুলির স্বার্থ বিজড়িত নহে; এই, অধর্ম যুদ্ধে সমগ্র সভ্যতা আজ বিপন্ন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আত্ম-বিস্মৃত ইউরোপকে আজ একথা স্মরণ করাইয়া দিক যে, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরিয়া মানুষের প্রতিভা ও পরিশ্রম যে প্রগতির বনিয়াদ গড়িয়া তুলিয়াছে, আপন দম্ভ ও ঘৃণার পরিতৃপ্তির জন্য তাহা ধ্বংস করিবার অধিকার কোনো জাতির নাই।’’
বলা বাহুল্য, হোয়াইট হাউস নিবাসী মানুষটি এ আবেদনের কোনো জবাব দিলেন না।
Advertisement
৬ই অক্টোবর আমি ভেবে হইতে জেনেভায় রওনা হই, সেখানে ইনটারন্যাশনাল রেডক্রসের কাজে আমি আত্মনিয়োগ করি। এবং রেডক্রস স্থাপিত যুদ্ধ বন্দী অফিসে কার্য করি। ঐ তারিখে আমি লিখিয়াছিলামঃ
মনুষ্য চরিত্র এবং সর্বোপরি বুদ্ধিজীবীশ্রেণী সম্পর্কে এই সংকটে আমার নূতন জ্ঞান লাভ হইল। এই আত্মাভিমান যুক্তি অভিমানী, স্বাধীনতা ও মানবতার সহায় আদর্শের ধ্বজাধারী চিন্তানায়কেরা কত ত্বরিতে, কত সম্পূর্ণভাবেই না তাহাদের সমস্ত বিশ্বাস ও আদর্শকে ধুলায় লুণ্ঠিত করিয়া দিতে পারে।
যখন আবার শান্তি ফিরিয়া আসিবে, যখন দেখিব আবার তাহারা তাহাদের আদর্শের উদারতা ও মানবতার দম্ভ করিতে শুরু করিয়াছেন, তখন এ দিনের কথা ভুলিব না। এই আকস্মিক মত পরিবর্তনে তাহাদের কোনো অসুবিধাই হইবে না। যদিও পশুশক্তির পুনর্জাগরণের দিনে এই দম্ভ এক মুহূর্ত রক্ষা করিবার সাহস তাহাদের নাই। ‘‘বন্ধুগণ তোমরা কত ভঙ্গুর।’’
এই কথাগুলি আজও খাটে, কারণ, শান্তিবাদ আজ আবার বেশ চালু হইতেছে। কারণ, ক্ষমতাধিষ্ঠিত শক্তির অর্থাৎ রাজনীতি ও স্বর্ণস্বার্থের অনুকূলে এই শান্তিবাদ আজ নিরাপদ শান্তির দিনে বসিয়া বণিকস্বার্থে পরিচালিত সরকারি ক্ষমতার আশ্রয়পুট হইতে শান্তি স্থাপন ও দেশপ্রেম সম্পর্কে যাহারা আজ আমাকে মুরুব্বির মত উপদেশ দিতেছেন তাহাদের কাহারও কাহারও আত্মসমর্পন নিজের চোখে দেখিয়া আমি ইতিমধ্যেই একটা তিক্ত সন্তোষ লাভ করিয়াছি।
অক্টোবর মাসে যুদ্ধবন্দীদপ্তরের কাজের মধ্যেই আমি দুইটি প্রবন্ধ লিখিলাম। একটির নাম ‘The lesser of Two Evils’ এবং অপরটির নাম ‘Iter Arma caritas’। আজ প্রবন্ধ দুইটিকে অত্যন্ত নিস্তেজ মনে হয়। সেদিন আমি যুদ্ধকে আক্রমণ করি নাই, আক্রমণ করিয়াছিলাম শুধু ঘৃণাকে, তাহাও কেবলমাত্র শত্রুপক্ষের।
মদগর্বিত জার্মানী তখন দাম্ভিক অপভাষণে আকাশবাতাস ভরিয়া তুলিতেছিল। তাহা ফ্রান্সে বহু বিশ্ববিখ্যাত মনীষীর স্বাক্ষরে তখন যে সকল কদর্য প্রবন্ধ, ইস্তাহার ও বিবৃতি প্রকাশিত হইতেছিল তাহা এত বড় হইয়া কানে আসিতেছিল না। এই সকল ব্যক্তির মধ্যে এমন অনেকে ছিলেন এই সংক্রামণে তাহারাও যে আক্রান্ত হইবেন, ইহা কেহই ভাবিতে পারে নাই।
স্তেফান জর্জের নামকরা শিষ্য, গ্যয়টের সাহিত্যের একজন প্রধান পণ্ডিত।
(ক্রমশ)
Advertisement



