• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

হাস্যকর, অযৌক্তিক

রাজ্য বিজেপি এবং অপর বিরোধী দল কংগ্রেস ও সিপিএম ধর্ষণ কাণ্ড নিয়ে সরকারের তথা পুলিশের অসক্রিয়তা নিয়ে মুখর হয়েছে।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

শমীক ভট্টাচার্য রাজ্য বিজেপির সভাপতি হওয়ার পরও বিজেপির শেষে উন্নতি হয়েছে বলে এখনও বোঝা যাচ্ছে না। সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার বদলে রাজ্য নেতা-কর্মীদের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রবল। তাদের মধ্যে সেই ঐক্য ও সমন্বয় গড়ে ওঠেনি। কর্মীদের মধ্যে দলাদলি অব্যাহত। নতুন সভাপতি দলের রাজ্য নেতা-কর্মীদের মধ্যে দলাদলি বন্ধ করে তাঁদের সমন্বয় ও সুসম্পর্ক তৈরি করতে ব্যর্থ। অথচ মুখে তাঁরা সর্বক্ষণ বলছেন আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে সরকার গড়বে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও তারা এমন রব তুলেছিল। কিন্তু কার্যত দেখা গেল তাদের ঝুলিতে মাত্র ৭৭ আসন। ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল। আবার ২৬-এর নির্বাচন নিয়ে তাঁরা স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন।

সমন্বয়বিহীন রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতারা শুধু শাসক দলের সমালোচনা করেই রাজ্যের সাধারণ মানুষের সমর্থন পাওয়া নিয়ে ব্যস্ত। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও কঠোর সমালোচনা করে যাচ্ছেন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ধর্ষণের কয়েকটি ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রীর সমালোচনা করে তাঁর পদত্যাগ দাবি করেছেন। এর আগেও আরজি কর কাণ্ড নিয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়েছেন। কিন্তু বিরোধী দলনেতা বললেই মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করবেন, এমন আশা করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। অনেকের মতে, বিরোধী দলনেতা বাজার গরম করতে এমন সব উদ্ভট দাবি তুলেছেন। রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। তাঁর জনকল্যাণমূলক কাজকর্মে রাজ্যের মানুষ উপকৃত। তাছাড়া তিনি রাজ্যের প্রশাসনের হাল শক্ত হাতে ধরে শাসনক কার্য পরিচালনা করছেন। সুতরাং বিরোধী নেতার মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি তোলা অবান্তর এবং হাস্যকর। তিনি এই দাবি তুলে নিজেকে উপহাসের পাত্র করে তুলেছেন।

Advertisement

কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে বিজেপি সহ অন্যান্য বিরোধী দলের নেতারাও তৃণমূল সরকারের সমালোচনায় মুখর। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও এই সব ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন এবং আশ্বাস দিয়েছেন দোষীরা কঠোর শাস্তি পাবে। কাউকে রেয়াত করা হবে না।

Advertisement

আরজি করের ঘটনা নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল সারা রাজ্য। চিকিৎসকদের আন্দোলন চলছিল অনেকদিন ধরে। তিলোত্তমার মহিলারা একদিন রাত জেগেছিল অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক সাজার দাবিতে। তারপর কলকাতার সন্নিকটে একটি আইন কলেজে ধর্ষণের ঘটনা এবং সর্বশেষ দুর্গাপুরের ধর্ষণের ঘটনা। কিন্তু প্রশাসন তথা পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছে। তবে পুলিশের এ ব্যাপারে আরও সচেতন হওয়া উচিত। আরজি কর ঘটনার মূল অভিযুক্তের আজীবন কারাবাসের সাজা হয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকার চেয়েছে অভিযুক্তর ফাঁসি হোক। মুখ্যমন্ত্রীরও সেই দাবি। এ ব্যাপারে রাজ্য বিধানসভায় একটি বিলও পাশ হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে ধর্ষণকাণ্ডে অপরাধ প্রমাণ হলে অভিযুক্তদের ফাঁসি হোক। এখনও পর্যন্ত ধর্ষণ কাণ্ডে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হয়নি। ফলে যারা এই অপরাধ করতে উদ্যত তারা ভয় পেত। আরজি কর কাণ্ডে আর যারা জড়িত তাদের সিবিআই ধরতে পারেনি।

কিন্তু রাজ্য বিজেপি এবং অপর বিরোধী দল কংগ্রেস ও সিপিএম ধর্ষণ কাণ্ড নিয়ে সরকারের তথা পুলিশের অসক্রিয়তা নিয়ে মুখর হয়েছে। ধর্ষণ কাণ্ডগুলি নিয়ে তারা ব্যাপক প্রচার এবং মিছিল-মিটিং করছে সরকারের মুণ্ডুপাত করে। রাজ্য বিজেপির নেতারা যদি ভাবেন, রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং ধর্ষণের মতো গর্হিত কাজ মানুষের কাছে তুলে ধরে ২০২৬ সালের বিধানসভায় ভোটে তাঁরা রাজ্যের মানুষের সমর্থন করবেন— তা হলে তাঁরা কিন্তু ভুল পথে চলেছেন। অন্য বিরোধী দুই দল কংগ্রেস ও সিপিএম বিধানসভায় কোনও আসন নেই। এই দুই দলের নেতারাও ভাবছেন আইনশৃঙ্খলার অবনতি, ধর্ষণের ঘটনা ফলাও করে প্রচার করে মানুষের সমর্থন পাবেন, তাহলে তাঁরাও ভুল পথে চলেছেন।

শুধু সরকারের সমালোচনা করে বিজেপি সহ অন্যান্য বিরোধী দল ভোটের বৈতরণী পার হবে— অর্থাৎ জয়ী হবে তা নিতান্ত ভুল। মানুষের সমর্থন পেতে হলে মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে হবে— তাঁদের সুখ-দুঃখের ভাগী হতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা করছেন, তা মানুষের হিতের জন্য, তাঁদের জীবন যাতে সুখের হয় তার জন্য। তাই শাসক দল রাজ্যের মানুষের সমর্থন পায় ভোটে।

Advertisement