• facebook
  • twitter
Friday, 19 December, 2025

পারমাণবিক ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণ

এই বেসরকারিকরণ হলে দেশে ছোট, সহজে পরিবর্তনযোগ্য এবং প্রযুক্তিগতভাবে আরও উন্নত পারমাণবিক রিঅ্যাক্টর তৈরি করা সম্ভব হবে।

প্রতীকী চিত্র

অসামরিক পারমাণবিক ক্ষেত্রে বেসরকারি মালিকানার পথ খুলে দিতে চাইছে মোদী সরকার। শীতকালীন অধিবেশনের সংসদীয় বুলেটিন আগেই একথা জানানা হয়েছিল। এই প্রস্তাবে সায় দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা। মোদী সরকারের দাবি, ২০৪৭-এর মধ্যে ১০০ গিগাওয়াট (১ লক্ষ কিলোওয়াট) পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনের জন্য এই ক্ষেত্রকে ‘মুক্ত’ করা খুবই জরুরি।

এ বছরের বাজেট অধিবেশনেই দেশের পারমাণবিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির ‘একচেটিয়া’ খতম করার প্রস্তাব দেয় কেন্দ্রী? আদানি, আম্বানি সহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা ভারতে বেসরকারি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র খোলার জন্য মুখিয়ে রয়েছে। তবে দেশের আইন অনুযায়ী, পারমাণবিক ক্ষেত্রে বেসরকারি স্বার্থের অনুপ্রবেশ অবৈধ। কর্পোরেট ক্ষেত্রে বেসরকারি স্বার্থের অনুপ্রবেশ অবৈধ। কর্পোরেট প্রভুদের সুবিধা করে দিতেই, বাজেট অধিবেশনের পর থেকে এই সংক্রান্ত বিল আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

Advertisement

মার্কিন পারমাণবিক রিঅ্যাক্টর নির্মাতাদের এদেশে ব্যবসা করার বিশেষ সুযোগ দিতেই কেন্দ্রীয় সরকার এই নীতি গ্রহণ করেছে। এতে দেশের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার সঙ্গে সমঝোতা করা হচ্ছে। প্রতিরক্ষা, খনিজ উৎপাদন ও পারমাণবিক ক্ষেত্রের ঢালাও বেসরকারিকরণে দেশের সার্বভৌমত্ব ও সুরক্ষার সঙ্গে অন্যায়ভাবে সমঝোতা করা হচ্ছে।

Advertisement

মোদী সরকারের এই ‘সাস্টেনেবল হারনেসিং অ্যান্ড অ্যাডভান্সমেন্ট অব নিউক্লিয়ার এনার্জি ফর ট্রান্সফর্মিং ইন্ডিয়া’ বিল আইন আকারে পাশ হলে একাধারে বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত পারমাণবিক কেন্দ্রের বেসরকারিকরণের সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপরাশি, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে তাদের নিজস্ব পারমাণবিক কেন্দ্র খোলার অনুমতি দেওয়া হবে।

অসামরিক পারমাণবিক ক্ষেত্র বেসরকারিকরণের পথ খুলে দেওয়ার প্রকৃত উদ্দেশ্য, রাষ্ট্রায়ত্ত ‘নিউক্লিয়ার পাওয়ার কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড’ (এনপিসিআইএল)-কে আরও দুর্বল করা এবং ‘ইনিশিয়াল প্রাইস অফারিং (আইপিও)-র মাধ্যমে তা বাজারের দখলে সমর্পন করা। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পারমাণবিক কেন্দ্রের ঢালাও বেসরকারিকরণের পর, ইউরেনিয়াম সহ অন্যান্য তেজস্ক্রিয় পদার্থ ও বিরল ধাতু খননে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থাকে অনুমতি দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে দেশের সম্পদ আহরণে বিদেশি মুনাফাবাজদের আরও লোভনীয় সুযোগ দিয়ে, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় সুরক্ষার সঙ্গে সমঝোতা করা হবে।
পারমাণবিক ক্ষেত্রের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র বিকিয়ে দিয়ে হাস্যকরভাবে মোদী সরকার দাবি করেছে, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্যই নাকি এই ‘সংস্কার’ অত্যন্ত জরুরি। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মহাকাশ ক্ষেত্রের বেসরকারিকরণের তুলনা টেনে, পারমাণবিক ক্ষেত্রের বেসরকারিকরণের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন। তাঁর দাবি, বেসরকারিকরণের পর মহাকাশ ক্ষেত্রে নাকি ব্যাপক উন্নতি হয়েছে।

এই বেসরকারিকরণ হলে দেশে ছোট, সহজে পরিবর্তনযোগ্য এবং প্রযুক্তিগতভাবে আরও উন্নত পারমাণবিক রিঅ্যাক্টর তৈরি করা সম্ভব হবে। শুধুমাত্র পারমাণবিক ক্ষেত্র রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার দখলে থাকায় এই উদ্ভাবন আটকে আছে। এক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠে, দেশের পারমাণবিক ক্ষেত্রের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এনপিসি-এর দায় কি কেন্দ্রীয় সরকার এড়াতে পারে? ঘটনাচক্রে, কেন্দ্রের পারমাণবিক শক্তি দপ্তর খোদ প্রধানমন্ত্রীর অধীনে। অর্থাৎ পারমাণবিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার তথাকথিত উদ্ভাবনী গাফিলতির দায় খোদ মোদীর। এই দায় স্বীকার করে এনপিসিআইএল-এর উৎপাদনী উদ্ভাবনী সক্ষমতা বাড়াতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার বদলে, মোদী ফাটকাবাজির পথ অবলম্বন করেছেন। নিজের অধীন দপ্তরকেই গালমন্দ করে, দেশের পারমাণবিক ক্ষেত্র দেশি-বিদেশি মুনাফাবাজদের হাতে তুলে দিতে চাইছেন।

Advertisement