সেনা সাফল্যের অপব্যবহার

Written by SNS April 12, 2019 1:22 pm

প্রত্যেক সামরিক বাহিনীরই বৈরিতা ও শান্তি উভয় সময়ের জন্যই সাহস ও উল্লেখযােগ্য অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া বা সম্মানিত করার বিস্তৃত ব্যবস্থা রয়েছে। রিবন, পদক ও অন্যান্য স্বীকৃতি চিহ্নকে সেনারা তাদের উর্দিতে ধারণ করে থাকে, যা তাদের মর্যাদা বাড়ায় এবং বহুস্তরীয় কাঠামােয় তাদের অবস্থানকে চিহ্নিত করে থাকে। সেইভাবে এই প্রশ্নও উঠে আসছে যে, গত মাসে সীমান্ত পেরিয়ে বালাকোটে সন্ত্রাসবাদী প্রশিক্ষণ শিবিরে বিমান হামলার বীরদের অথবা তার কয়েকদিন আগে পুলওয়ামায় শহিদ হয়ে যাওয়া ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ানের সম্মানে নতুন ভােটারদের প্রথম ভােটটি দেওয়ার আহ্বানকে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা গ্রহণ করেছেন কিনা। বাহিনীর অরাজনৈতিক সদস্যরা (হায় তাদের সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে) হয়ত এই ভেবে ক্ষুন্ন হবেন যে তাদের শৌর্যকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। কারণ তাদের রাজনৈতিক পরিবেশ থেকে দুরে থাকারই কঠোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যদিও সাম্প্রতিককালে তাদের কয়েকজন শীর্ষ অফিসার বর্তমান পরিস্থিতিটা বেশ উপভােগ করছেন। এখন উর্দিধারীরা অর্জন সিংয়ের মতাে আদশ তুলে ধরতে পারে না। অর্জন সিংয়ের নামের সঙ্গেই অনেক সম্মান ও পদক যুক্ত থাকলেও তিনি শুধু ‘ডিএফসি’ পদক ব্যবহার করতেন, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বার্মায় তরুণ পাইলট হিসাবে তিনি অর্জন করেছিলেন।

এবারের নির্বাচনে ইলেকট্রনিক প্রচার উচ্চগ্রামে পৌছনাের আগেই এক প্রাক্তন নৌসেনা-প্রধান নির্বাচন কমিশনের কাছে আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেছিলেন, এবারের নির্বাচনী প্রচারে জাতীয়তাবাদের অপব্যবহার হতে পারে। নির্বাচন কমিশন অ্যাডমিরাল এল রামদাসের উদ্বেগকে গুরুত্ব দিয়েছিল এবং সেনাদের কৃতিত্বকে নির্বাচনী সাফল্যের জন্য ব্যবহারের বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ করেছিল। কিন্তু এখন দুঃখজনক বাস্তবতা হল নির্বাচন কমিশনের হুঙ্কার এখন অনেক স্তিমিত হয়ে গেছে। আদর্শ আচরণবিধি যখন প্রবলভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে তখন তারা নখদন্তহীন হয়ে পড়েছে। কমিশনের একমাত্র কাজ হচ্ছে অভিযােগ গ্রহণ করা এবং তা বিবেচনা করা, কিন্তু উপযুক্ত ব্যবস্থা তারা নিতে পারছে না। স্থানীয় অফিসারদের কাছ থেকে রিপাের্ট নিয়েই তার দায় সারছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি যেদিন সেনাবাহিনীর সাফল্যের পক্ষে ভােট দেওয়ার আবেদন জানালেন সেদিনই গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিক মঞ্চ হিসাবে ব্যবহার করেন। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যােগী আদিত্যনাথ ‘মােদিজি কি সেনা’ বলে মন্তব্য করার পর এটা ভবিতব্যই ছিল। একটা সময় ছিল যখন রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সতর্ক করার সাহস ছিল সামরিক কর্তাদের। এখন সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক (রাষ্ট্রপতি) নিবার্য নির্বাচন কমিশনের কাজকর্মের ব্যাপারে নীরব দর্শক হয়ে আছেন। তাহলে আর কী রইল? সুপ্রিম কোর্টকে কি এখন অস্বাস্থ্যকর রাজনৈতিক প্রভাব থেকে আমাদের সেনাবাহিনীকে রক্ষা করার দায়িত্বও নিতে হবে?