• facebook
  • twitter
Saturday, 25 January, 2025

বিবেক জাগ্রত হোক

আসলে আমরা এমন একটি সময়ে বাস করছি, যখন অনেককিছুই আমাদের দুর্দ্দশার কারণ হয়ে দেখা দিচ্ছে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অগ্নিমূল্য। সাধারণ মানুষের মাথায় হাত।

প্রতীকী চিত্র

২০২৪-কে ইতিহাসে রেখে নতুন বছর ২০২৫-এর আত্মপ্রকাশ। এই শুভ বছরটিকে নিয়ে আমাদের ভাবনা কী হওয়া উচিত? আশা, এই নতুন বছর শুরু হোক শুভ ভাবনা, কামনা নিয়েও ২০২৪-এ ভালো-মন্দ যাই ঘটুক না কেন, একে মন থেকে মুছে ফেলে আমদের সকলের বিবেক জাগ্রত হোক, শুভবুদ্ধির উদয় হোক। লোভলালসা থেকে আমরা যেন দূরে সরে থাকতে পারি। আমাদের মন পরিচ্ছন্ন থাকুক। আমাদের সাধের পশ্চিমবাংলা, আমাদের প্রিয় কল্লোলিনী তিলোত্তমা, আরও সুন্দর হোক। অতীতের সব মালিন্য দূর হয়ে যাক। জেগে উঠুক নতুন স্বপ্ন!। আমরা এই দিন শপথ নিই হিংসা যেন মাথা তুলতে না পারে। পশ্চিমবঙ্গ সম্প্রীতির রাজ্য। সব শ্রেণির লোকের, সব ধর্মাবলম্বীরা যেন তাদের নিজনিজ ধর্ম পালনে কোনও প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন না হয়। সব ভাষাভাষি লোকের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন আরও দৃঢ় হোক। বাংলাকে ভালবেসে তার সার্বিক উন্নয়নের জন্য আমরা যেন সচেষ্ট হই। নতুন বছর, ২০২৫ সালে এই ভাবনাগুলি আমাদের মনে জাগ্রত হোক। এই বাসনা নিয়েই নতুন বছর শুরু হোক। ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে আমরা যেন একে অপরকে ভালবাসতে পারি। কাছে টেনে নিতে পারি।

২০২৪-এর শেষের দিকে একটি হিংসার ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে সারা রাজ্য। নাগরিক সমাজ এবং বিশিষ্টজনেরা আরজি কর মেডিকেল কলেজে একজন কর্তব্যরত মহিলা চিকিৎসকের রহস্যজনিত মর্মান্তিক মৃত্যুর জন্য ক্ষোভে ফেটে পড়েন। জুনিয়র চিকিৎসকরা এই মৃত্যু রহস্য উন্মোচন করে যারা দোষী তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। তাঁদের দাবির প্রতি সমর্থন জানান বিশিষ্ট চিকিৎসকরা এবং অন্যান্য সরকারি হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকরাও। প্রতিদিন মিছিলে মিছিলে কলকাতা সরগরম হয়ে ওঠে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীও, মৃত চিকিৎসকের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়ে আশ্বাস দেন এই মৃত্যুরহস্য উ্ন্মোচন করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার। পরে সিবিআইকে তদন্তের ভার দেওয়া হয়—মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধে চিকিৎসকরা কাজে যোগ দেন। এই চিকিৎসকদের অভিযোগ, মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। কলকাতা পুলিশ এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত একজন সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেপ্তার করে।

কিন্তু মৃতের পরিবার এবং চিকিৎসক সমাজের ক্ষোভ ৯০ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পরও সিবিআই এই কেসে চার্জশিট জমা দিতে পারেনি। আরজি কর এবং অন্যান্য মেডিকেল কলেজের জুনিয়র চিকিৎসকরা সিবিআইয়ের এই ব্যর্থতার প্রতিবাদে সম্প্রতি আবার রাস্তায় নেমেছেন। সিবিআই কেন এই তিনমাস সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরও এই কেসে তাদের চার্জশিট জমা দিতে পারল না, তাও একটি রহস্য। সিবিআইয়ের এই ব্যর্থতার জন্য জুনিয়র চিকিৎসকরা আবার আন্দোলনে। তাঁদের সমর্থন জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা এবং নাগরিক সমাজ। এটা অবশ্য অত্যন্ত নিন্দনীয় কেন সিবিআই এই দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও, কেসের কোনও কিনারা করতে পারল না। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে এই ব্যর্থতার জন্য সর্বশ্রেণির মানুষ ক্ষুব্ধ। এখন কোনও ধর্ষণের কিংবা অন্য কোনও ঘটনা ঘটলেই দাবি ওঠে সিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করার। এই ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সিবিআইয়ের ব্যর্থতাকে মেনে নিতে পারছে না কেউ। এরকম হলে মানুষ এই কেন্দ্রীয় সংস্থার প্রতি আস্থা হারাবে।

আমরা আশা করব, সিবিআই আরজি করের এই মর্মান্তিক ঘটনার যথাযথ তদন্ত করে অচিরেই চার্জশিট জমা দেবে। দোষী যারা তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হবে। কেন এই সংস্থা এ ব্যাপারে ব্যর্থ হল, তা য়ে সবাই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পুলিশের ওপর আস্থা হারানোর জন্যই সিবিআইকে তদন্তভার দেওয়া হয়েছিল।

আরজি করের ঘটনা বাদ দিলে ২০২৪-এর পশ্চিমবাংলা মোটামুটি শান্তই ছিল। কিছু কিছু রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা ঘটেছে, যা না ঘটলেই সুখের হত। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস সহ প্রধান বিরোধী দল বিজেপি ও অন্যান্য দলের নেতা-কর্মীরা নতুন বছরে হিংসা পরিহার করে রাজ্যের সার্বিক মঙ্গলের জন্য কাজ করবে—সেটাই আশা করা যায়। শাসক দল সমালোচনার যোগ্য কাজ করলে, তার সমালোচনা হোক, সেটা সবাই চায়। কিন্তু ঘটনার সত্যাসত্য বিচার না করে শাসক দলকে কাঠগড়ায় তোলা সংসদীয় সংসদীয় গণতন্ত্রের সঠিক পথ নয়। বিজেপি সহ অন্যান্য সব দলের ভূমিকা হবে হিংসার পথে না গিয়ে রাজ্যের উন্নয়নের জন্য কাজ করা। শাসক দলের জনহিতকর কাজের জন্য সাধুবাদ জানানো। হিংসার চোখে কোনও সমস্যার সমাধান হয় না— তা সব রাজনৈতিক দলগুলির বুঝতে হবে। ভালো কাজের সমালোচনা করা গণতন্ত্রের সঠিক কাজ নয়। আসলে শাসক দলের সঙ্গে অন্যান্য বিরোধী দলগুলির মতানৈক্য থাকবেই। তা সত্ত্বেও ভালোকে ভালো, খারাপকে খারাপ বলতে বাধা নেই।

আসলে আমরা এমন একটি সময়ে বাস করছি, যখন অনেককিছুই আমাদের দুর্দ্দশার কারণ হয়ে দেখা দিচ্ছে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অগ্নিমূল্য। সাধারণ মানুষের মাথায় হাত। বাজারে গেলে নিত্যপণ্যের দাম শুনে ভিরমি খেতে হয়। সবচেয়ে কষ্টের জীবনয়াপন করছে গরিব ও সমাজে পিছিয়ে পড়ারা। কর্মসংস্থানের অভাব। বেকারিত্ব দিন দিন বাড়ছে। উচ্চ ডিগ্রিধারীরা হন্যে হয়ে ঘুরছে তাদের উপযুক্ত কোনও কাজের জন্য। কিন্তু কোথায় কাজ? ভারী শিল্পের দেখা নেই, তাই কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হচ্ছে না। ঘরে ঘরে বেকার। তদের হাহাকার সরকারের কানে পৌঁছয় না। নতুন বছর আমাদের কাছে সুখের হোক। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা একটু সহজ হোক। তাদের মুখে হাসি ফুটুক। ২০২৫ নিয়ে আসুক শান্তি, সমৃদ্ধি।