• facebook
  • twitter
Saturday, 13 December, 2025

খাড়গেকে দেখে শিখুন

প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের মতো মোদী জমানায় ধাপ্পাবাজির আর নমুনা ছড়িয়ে রয়েছে খয়রাতির রাজনীতিতেও। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে বাংলায় মহিলাদের জন্য ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প চালু করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। ফাইল চিত্র

একজন দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতার পরিচয় রেখেছেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। তিনি বলেছেন, যে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা যাবে সেটাই মানুষের সামনে ঘোষণা করা উচিত। তাঁর মন্তব্য ছিল, ‘যতটুকু খেতে পারবেন, ততটুকুই মুখে নিন।’ খাড়গে বলতে চেয়েছেন, যে কোনও, সরকারেরই নিজেদের আর্থিক সামর্থ্য বুঝে প্রতিশ্রুতি দেওয়া উচিত।

কংগ্রেস সভাপতির এই সদর্থক পর্যবেক্ষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর লজ্জা পাওয়া উচিত ছিল। কারণ গত দশ বছরে দেশের মানুষকে একের পর এক প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারপর যেভাবে তিনি তা ভঙ্গ করেছেন, তাতে এসব নিয়ে কোনও মন্তব্য করার আগে আয়নায়ে নিজের মুখটা দেখে নিতে পারতেন তিনি।

Advertisement

২০১৪ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সময় তিনি বছরে ২ কোটি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। যুব সমাজের সঙ্গে এমন নিদারুণ ঠাট্টার সময় আরও বলেছিলেন, ‘আচ্ছে দিন’ আসবে দেশে। বলেছিলেন, বিকশিত ভারতের কথা। ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’—এই গ্যারান্টিও দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর দু’দফা শাসনের নির্মম পরিণতি হলো, দেশের প্রায় প্রতিটি আর্থ—সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যর্থতার নজির গেড়েছে এই সরকার। তাঁর শাসনে ধনী ও দারিদ্রের মধ্যে আর্থিক ব্যবধান বৃদ্ধি, সম্পদ বণ্টনে সীমাহীন অসাম্য, অপুষ্টি, ক্ষুধাসূচক, বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধির ষাঁড়াশি চাপে গরিব-মধ্যবিত্তের আধমরা অবস্থা তৈরি হয়েছে। কালো টাকা ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে যে নেটাবন্দি করেছিলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা চূড়ান্ত ব্যর্থ ও হঠকারী সিদ্ধান্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে। তাই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগে মোদীর নিজেরই কাঠগড়ায় দাঁড়ানো উচিত।

Advertisement

২০২২ সালে বিরোধীদের ‘ডোল’ রাজনীতি, যা মোদীর ভাষায় ‘রেউড়ি সংস্কৃতি’, তার কড়া সমালোচনা করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। বলেছিলেন, ভোটে জিততে নগদ টাকা ছড়ানোর জল মোহিনী রাজনীতির কারণে রাজ্য সরকারগুলির আর্থিক হাল ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। এই খয়রাতির রাজনীতি বন্ধ হওয়া উচিত। এমন জ্ঞানগর্ভ ভাষণের পর এখন দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন রাজ্যে ভোটে জিততে মোদীর দল বিজেপিও সেই ‘রেউড়ি সংস্কৃতি’র পথেই হাঁটছে। এখন অবশ্য সেই খয়রাতি নিয়ে বিশেষ কিছু বলতে শোনা যাচ্ছে না মেদীকে।

প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের মতো মোদী জমানায় ধাপ্পাবাজির আর নমুনা ছড়িয়ে রয়েছে খয়রাতির রাজনীতিতেও। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে বাংলায় মহিলাদের জন্য ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প চালু করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফেরার প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠেছিল এই প্রকল্প। যা অনুকরণ করে পরবর্তীকালে মধ্যপ্রদেশের বিধানসভা ভোটে ‘লাডলি বহেনা’ প্রকল্প চালু করে বাজিমাত করেছিল বিজেপি। এছাড়া দেশের ১১ কোটি কৃষকের জন্য বছরে ৬ হাজার কোটি টাকার আর্থিক সাহায্য, ভোটের আগে দেশের ৮০ কোটি মানুষকে রেশনের মাধ্যমে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য বিতরণের ঘোষণা করে সেই খয়রাতির পথেই হাঁটতে হয়েছিল মোদী সরকারকে। এখন মহারাষ্ট্র বিধানসভা ভোটের আগেও ‘লড়কি বহিন’ প্রকল্পের ঘোষণা করে ভোটে জেতার ছক কষছে বিজেপির জোট সরকার। মুখে বিরোধীদের খয়রাতি রাজনীতির কড়া সমালোচক হলেও বিভিন্ন রাজ্যে নিজেরাই সেই পথ অনুসরণ করায় বিজেপি এখন হাসির খোরাক হয়ে উঠছে।

সত্যি কথা বলা বা তা স্বীকার করে নেওয়ার মতো সৎ সাহস নেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরা দেশের বহু মানুষের এমনটাই মত। গত দশ বছরে তিনি বার বার প্রমাণ করেছেন, ভোটে জেতার জন্য যা বলেন, তা রক্ষা না-করাটাই তাঁর রাজনীতির মূল চাবিকাঠি প্রতিশ্রুতি দেওয়ার আগে দু’বার ভাবা বা আলটপকা মন্তব্য থেকে বিরত থাকতে পারলেই মোদীর সম্মান রক্ষা হতো। আয়নায় নিজেকে দেখেই অন্যের সমালোচনা নামা উচিত। মল্লিকার্জুন খাড়গের মন্তব্যটা ধীর স্থিরভাবে প্রধানমন্ত্রী মোদীর একবার ভেবে দেখা উচিত।

Advertisement