সমস্যার যেন শেষ নেই। এখন ট্যাংরা সহ শহরের আরও তিন-চারটি জায়গায় বহুতল আবাসন একে অপরের পায়ে হেলে পড়েছে। ফলে আবাসিকদের মনে মহা আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। এই সব বহুতল আবাসন তৈরি হওয়ার সময় নিম্ন মানের মালমশলা ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। জলাশয় বুজিয়ে অনেক বহুতল বাড়ি নির্মিত হয়েছে। কিন্তু নির্মাণের সময় তা খতিয়ে দেখেননি পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের ইঞ্জিনিয়াররা। এখন প্রশ্ন উঠেছে, এইসব হেলে পড়া বাড়ির ভবিষ্যৎ নিয়ে। যদি সেগুলি ভেঙে পেলা হয়, তাহলে সেখানে বসবাসকারীরা কোথায় যাবেন? তাঁদের বসবাসের বিকল্প ব্যবস্থা করেই তবে বাড়ি ভাঙার কাজে হাত দেওয়া উচিত বলে মনে করেন অনেকেই। কামারহাটি এবং ট্যাংরার ক্রেস্টোফার রোড— এই দুই জায়গাতেই বহুতল বাড়ি হেলে পড়েছে। বিষয়টি নজরে আসতেই কলকাতা পুরসভা সংশ্লিষ্ট দু’টি বাড়ি ভেঙে ফেলার উদ্যোগী হয়েছে। কিন্তু এছাড়া আরও দুই-তিনটি অঞ্চলে বহুতল বাড়ি হেলে রয়েছে। সুতরাং সমস্যাটি খুব গভীরে। খোঁজাখুঁজি করলে আরও হেলেপড়া বহুতল বাড়ির নজরে আসবে।
বলা হয়েছে, বহুতল বা বহুতল ছাড়া বাড়ি নির্মাণের সময় প্ল্যান অনুযায়ী বাড়ি নির্মাণ হচ্ছে কিনা, তা দেখা পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারদের দায়দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। নির্মাণের বিভিন্ন স্টেজে তাঁরা কাজ যথাযথ ভাবে অর্থাৎ প্ল্যান অনুসারে হচ্ছে কিনা, তা খুঁটিয়ে দেখবেন। প্ল্যান বহির্ভূত নির্মাণকাজে তাঁরা বাধা দেবেন। নির্মাণ কাজে ভালো মানের মালমশলা ব্যবহার হচ্ছে কিনা, তা দেখাও তাঁদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। এই কাজে গাফিলতির সুযোগ নিয়েই প্রমোটারেরা বহুতল বাড়ি নির্মাণ করেছে। এখন সেগুলি হেলে পড়তে শুরু করেছে। ভবিষ্যতে দেখা যাবে। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বহুতল বাড়ি হেলে পড়ার মুখে। কলকাতা পুরসভার মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, বিষয়টি উদ্বেগের। তবে তিনি বলেছেন, বেআইনি বাড়ি নির্মাণ রোধে তিনি বদ্ধপরিকর। আবার সম্প্রতি তিনি বলেছেন, গোটা শহরের কোথায় কোথায় বেআইনি বাড়ি নির্মিত হচ্ছে, তা খুঁজে বের করা পুরসভার পক্ষে সম্ভব নয়।
সম্প্রতি একটি বহুতল বাড়ি বসবাসের পক্ষে বিপজ্জনক হওয়ায় তা ভেঙে ফেলার নোটিশ জারি করে পুরসভা। সেই বাড়ির বসিন্দাদের অভিযোগ হল, জল সরবরাহ এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং আবাসিকরা এখন অথৈ জলে পড়েছেন। মহানাগরিক অবশ্য বলেছেন, যাঁরা ফ্ল্যাট কিনেছেন, তাঁদের সবকিছু খতিয়ে দেখে কেনা উচিত। বিদ্যুৎ ও জল সরবরাহের ব্যাপারে বলেছেন, তিনি খোঁজ নেবেন। কীভাবে বিকল্প ব্যবস্থা করা যায়, তা দেখবেন। তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট বহুতল বাড়ির ব্যাপারে তিনি সেই বাড়ির আবাসিকদের সঙ্গে কথা বলবেন। তিনি বললেন, হেলেপড়া বাড়ির আবাসিকদের পুরসভা তাদের কথা অত্যন্ত সহানুভূতি সহকারে দেখবেন।
একের পর এক বহুতল হেলে পড়ার কারণে প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দারা। তাঁরা বলেছেন, বাড়িগুলি যখন নির্মিত হল, তখন পুরসভার ইঞ্জিনিয়াররা কি তাঁদের দয়িত্ব পালন করেননি? বাড়িগুলি যথাযথভাবে নির্মিত হচ্ছে কিনা, তাঁরা তা দেখেননি? এখন যাঁরা বহু টাকা খরচ করে ফ্ল্যাট কিনেছেন, তাঁরা কোথায় যাবেন। সুতরাং বিষয়টি জটিল আকার ধারণ করেছে। পুরসভার সিদ্ধান্ত বিপজ্জনক বহুতল আবাসনে বাস করার ঝুঁকি রয়েছে। তাই বাড়িগুলি ভেঙে ফেলা ছাড়া বিকল্প কোনও ব্যবস্থা খোলা নেই।
তবে এভাবে বহুতল বাড়ি হেলে পড়ার পর পুর কর্তৃপক্ষ বলেছেন, এখন থেকে বহুতল বাড়ি যেখানে নির্মাণ হবে, সেখানে পুরসভার ইঞ্জিনিয়াররা নির্মাণ কাজ ঠিকমতো হচ্ছে কিনা, তা খুঁটিয়ে দেখবেন। গাফিলতি পেলে কাজ বন্ধ করে দেবে। শহরের বহুতল বাড়ি যা হেলে পড়েছে, তাও খুঁজে বের করা হবে।
হেলে পড়া বাড়ির আবাসিকদের বক্তব্য, বেআইনি নির্মাণ হলে তা ঠেকানোর দায়িত্ব কলকাতা পুরসভার। শহরের যদি কোনও বহুতল বাড়ির খোঁজ মেলে, যা হেলে পড়েছে এবং আবাসিকদের বাস করার ঝুঁকি রয়েছে, তা দেখার দায়িত্ব এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে পুরসভা।
এ তো গেল কলকাতা শহরের হেলে পড়া বাড়ির কথা। কিন্তু রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে যে বহুতল আবাসন তৈরিক হয়েছে, তা যথাযথ হয়েছে কিনা, সে ভাবনাও করছে সরকার। তবে পুরসভাগুলির দায়িত্ব বহুতল বাড়ির নির্মাণ কালে যথাযথ ভাবে হচ্ছে কিনা, তা দেখা। অভিযোগ প্ল্যান বহির্ভূত বাড়ি হচ্ছে, পুরসভার অজ্ঞাতসারে। ইঞ্জিনিয়াররা বাড়ির নির্মাণের বিভিন্ন স্টেজে গিয়ে তা দেখবেন প্ল্যান অনুযায়ী তা হচ্ছে কিনা। বেআইনি নির্মাণ হলে তা বন্ধ করে দেবে। এই কাজ ঠিকমতো হয়নি বলেই কলকাতার বেশ কয়েকটি বহুতল বাড়ি বিপজ্জনক হয়েছে আবাসিকদের বাস করা নিয়ে। এদিকে সম্প্রতি মেটিয়াবুরুজে একটি বেআইনি বাড়ি ভাঙতে গিয়ে পুরসভার ইঞ্জিনিয়াররা নিগৃহীত হয়েছেন। এটাও ঠিক কাজ নয়।