কিমের প্রত্যাবর্তন

প্রকাশ্যে ফিরে এলেও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন এপ্রিল মাসের তিন সপ্তাহ কোথায় ছিলেন, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে আলােচনা অব্যাহত থাকবেই।

Written by SNS Kolkata | May 12, 2020 6:22 pm

কিম জং উন (Photo: AFP)

প্রকাশ্যে ফিরে এলেও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন এপ্রিল মাসের তিন সপ্তাহ কোথায় ছিলেন, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে আলােচনা অব্যাহত থাকবেই। তবে রবিবার উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে গুলি বিনিময় আবার সামরিক বাহিনীমুক্ত অঞ্চলকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে জল্পনা-কল্পনার ২০ দিন পর উত্তর কোরিয়া তার প্রকাশ্য উপস্থিতির কথা জানানাের সঙ্গে সঙ্গেই এই ঘটনা ঘটে।

কার্যকরণগত দিক থেকে বিচার করলে কিমের পুনরাবির্ভাব ও গুলির শব্দের মধ্যে দুই দেশের ঐতিহাসিক বিভেদ ছাড়া আর কোনও সূত্র নেই। পরিহাসের বিষয় হল এই বিষয়টিই জটিলতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

সুচনে একটি ফসফেট সার কারখানার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মাও জ্যাকেট পরিহিত কিমকে দেখা গেছে। ছবি দেখে বােঝা গেছে তাঁর কোনও শারীরিক সমস্যা নেই। উত্তর কোরিয়ায় প্রেসিডেন্টের এই উপস্থিতির ২৪ ঘণ্টা পর এই সংঘর্ষ অভিসন্ধিমূলক। পিয়ংইয়ং বা সিওল কেউই এই সংঘর্ষের বিস্তারিত বিবরণ দেয়নি।

দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী বলেছে, উত্তেজনাপূর্ণ সীমান্তে তাদের সেনারা উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে গুলির জবাব দিয়েছে। সিওলের জয়েন্ট চিফ অফ স্টাফ বলেছেন, রবিবার সকাল ৭:৪১ মিনিটে দু’দেশের প্রবলভাবে অস্ত্রসজ্জিত সীমান্তে উত্তর কোরিয়ার সেনারা কয়েক বার গুলি ছােড়ে। সামরিক বাহিনীমুক্ত অঞ্চলের উত্তেজক পরিবেশের বিচারে আমেরিকা ও চিন দূরে থাক রাষ্ট্রসংঘের পক্ষেও এই যুক্তির সঙ্গে একমত হওয়া সম্ভবনয় যে উত্তর কোরিয়া ভুল করে হঠাই গুলি চালিয়ে বসেছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর তারাও দু’রাউন্ড গুলি চালিয়েছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বিস্তারিত পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত হতে এবং ভবিষ্যতে যাতে আর এই ধরনের ঘটনা না ঘটে, তার জন্য আমরা আন্তঃকোরীয় যােগাযােগ সূত্রের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা একটা প্রয়ােজনীয় প্রস্তুতির মনােভাবও বজায় রাখছি।

এখন খুবই স্পষ্ট যে, কিম আবার ফিরে আসার পর উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া আবার তাদের অস্ত্রে শান দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। হঠাৎ গুলি বিনিময় সামরিক বাহিনীমুক্ত অঞ্চলের উত্তেজনারই ফল।

দুই কোরিয়া ২৪৮ কিলােমিটার সীমান্তের দ্বারা বিভক্ত। তার মধ্যে চার কিলােমিটার চওড়া বাফার জোন অর্থাৎ নিরপেক্ষ এলাকা রয়েছে। দীর্ঘ সময় পর সামরিক বাহিনীমুক্ত এই অঞ্চলই বিশ্বের সবচেয়ে অস্ত্রসজ্জিত সীমান্ত হয়ে উঠেছে। এই অঞ্চলের কাছে ও মধ্যে প্রায় চত্ম লক্ষ মাইল রয়েছে, যা কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে ঘেরা। তার দু’পাশে রয়েছে ট্যাঙ্ক ধরার ফাঁস ও লড়াকু সেনারা।

২০১৮ সালের শেষ দিকে দুই কোরিয়া সীমান্তবর্তী তাদের কিছু কিছু চৌকিগুলি ভাঙতে শুরু করে। সেই সঙ্গে শুরু হয় সামরিক বাহিনীমুক্ত অঞ্চল থেকে মাইন সরানাের কাজ। এসবই ছিল দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমানাের পদক্ষেপ। কিন্তু অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে উত্তর কোরিয়া পরমাণু অস্ত্রসম্ভার ত্যাগ করতে রাজি না হওয়ায় কিম ও ডােনাল্ড ট্রাম্প’এর মধ্যে আলােচনা ভেস্তে যায় এবং তার জেরে এইসব উদ্যোগ থেমে যায়।

আশা করা যায়, বিশ্বব্যাপী বিপর্যয়ের মধ্যে রবিবারের ঘটনা নিশ্চয় ঘড়ির কাঁটাকে উল্টো দিকে নিয়ে যায়নি। কিমের অনুপস্থিতির সময় যদি এই গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটত, তাহলে চিত্রটা সম্পূর্ণ অন্যরকম হত।