রানা ঘোষদস্তিদার
সম্প্রতি পহেলগামে ঘটে যাওয়া উগ্রপন্থী আক্রমণের বদলায় অপারেশন সিঁদুর ও সংশ্লিষ্ট সংক্ষিপ্ত ভারত-পাক যুদ্ধের যেমন কাটা-ছেঁড়াই হোক না কেন, ভারত এক বিষয়ে উল্লেখ্য পদক্ষেপ নিয়েছে যে, সে বিষয়ে ওয়াকিবহাল কারুর মনে কোন সন্দেহ থাকা উচিত নয়। কথা হচ্ছে উনিশশো ষাটে স্বাক্ষরিত সিন্ধু জলচুক্তি নিয়ে। আমরা বোধহয় জানি যে, চুক্তি অনুযায়ী সপ্তসিন্ধুর পুবদিকে প্রবাহিত তিনটি (ইরাবতী, বিপাশা, শতদ্রু) নদীর জলের পূর্ণ ভাগ পাওয়ার কথা ছিল ভারতের, বাকি সিন্ধুনদ সমেত পশ্চিমদিকে প্রবাহিত তিনটির (সিন্ধু, চন্দ্রভাগা ও বিতস্তা) জল বিনা বাধায় পাকিস্তানে যাওয়ার কথা। এর ফলে, সামগ্রিক ভাবে সিন্ধুর তিরিশ শতাংশ জলে ভারতের অধিকার স্থাপিত হয়, সত্তর শতাংশ পেয়ে যায় পাকিস্তান। দশ বছর পর চুক্তি খতিয়ে দেখার কথা থাকলেও, বাস্তবে কিছুই হয়নি। অবিভক্ত ভারতে পাঞ্জাবের দেশীয় রাজ্যগুলির মধ্যে নিরন্তর ঝামেলা লেগেই থাকত এই জলের ভাগ নিয়ে। উনিশ শো ষাটে সিন্ধুর জলসম্পদের সত্তর শতাংশে নিরংকুশ অধিকার পেয়ে পাকিস্তান সিন্ধুজলের সেচব্যবস্থা বহুদূর অব্ধি বিস্তারিত করে ফেলে বাসমতী চাল, তুলো বা দুধজাত পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বের প্রথম সারিতে পৌঁছে যায়।
সাম্প্রতিক অতীতে ভারত পশ্চিমে প্রবাহিত নদীগুলির উপর জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বা সেচপ্রকল্প তৈরি করবার চেষ্টা করে চলেছে এবং, পাকিস্তান তাতে আপত্তি জানিয়ে আসছে। এবার, ভারত চুক্তি বাতিল করেছে, এবং, দীর্ঘ বার্তালাপের পর যদি রফা হয়ও, বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ শেষ বা বহুদূর এগিয়ে যাবে, সন্দেহ নেই। মনে রাখতে হবে, পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও দিল্লির মধ্যে যমুনার জল নিয়ে বাদানুবাদ লেগেই আছে। ভারতের শস্যগোলা উত্তর ভারতের কৃষির সামনে এক বড় বিপদ উপস্থিত, নিরন্তর ভূজলস্তর নেমে যাচ্ছে। এখন, ভারত যদি সপ্তসিন্ধুর পশ্চিমের নদীগুলিতে প্রবহমান জলের এক বড় অংশ পুব মুখে বা দক্ষিণে ঘুরিয়ে নিতে পারে, তাহলে জম্মু থেকে শুরু করে উত্তর রাজস্থান হয়ে পাঞ্জাব-হরিয়ানা-দিল্লির জলচাহিদা অনেকটাই মিটে যাওয়ার কথা। কৃষি, শিল্প বা গৃহস্থালীর জন্য প্রয়োজনীয় জল ছাড়াও, অঢেল জলবিদ্যুৎ বা মৎস্য উৎপাদন, নৌ চলাচলে সহায়তা ইত্যাদি লাভ অনুমান করার জন্য পুরস্কার না রাখলেও চলবে। আর, পাকিস্তানের জন্য যে এই জলবিয়োগ কতবড় লোকসানের সওদা হয়ে দাঁড়াবে, সে বিষয়েও সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
এই ভূমিকার প্রয়োজন ছিল আজকের সভ্যতায় জলের প্রয়োজন কীরকম, তা বোঝাতে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধলে জলের জন্য বাধবে, এখনো অব্ধি ধারণা তাই। জল, বিশেষ করে বিশুদ্ধ পানীয় জল হয়ে দাঁড়াচ্ছে এক অমূল্য সম্পদ। ভারতের জন্য তো বটেই। ধরুন না, বিশ্বের স্থলভূমির মাত্র দুই শতাংশ হল ভারত। তার কাছে আছে বিশ্বের সুপেয় জলের মাত্র চার শতাংশ। অথচ, ভারতের জনসংখ্যা হল বিশ্বের জনসংখ্যার ষোল শতাংশ! তাহলে, মাথাপিছু জলের লভ্যতার বিচারে ভারত নিতান্ত দরিদ্র দেশ কি না? মানলেন? তাহলে, বলুন দেখি, এমন জলদরিদ্র দেশের কি দেদার জলসম্পদ বিলি করা উচিত, না যথাসম্ভব সঞ্চয় করা উচিত? না, না, সিন্ধু বা গঙ্গা কোন জলচুক্তির কথা হচ্ছে না। জল খরচের আরো ব্যাপক রাস্তা আছে। ধরুন, জল সবচেয়ে বেশি কীসে ব্যয়িত হয় প্রশ্নের জবাব কী দেবেন? কৃষিতে,তাই তো? ঠিক। সত্তর শতাংশ জল ব্যয়িত হয় কৃষিতে। তারপর শিল্প ও গৃহস্থালীতে। এখন, কৃষির মধ্যেও রকমফের আছে। জানেনই তো, জোয়ার বাজরা চাষে জল লাগে খুব কম। পক্ষান্তরে ধান-গম- তুলো এসবে জল লাগে প্রচুর। বিদর্ভের চিরাচরিত জোয়ার আর অড়হর চাষ ছেড়ে তুলো আর আখ চাষ শুরু হতেই বিপত্তি শুরু, আপনারা জানেনই। খোদ পাঞ্জাবে স্লোগান উঠে গেছে, ঝোনা (ধান) হঠাও, খেতি বঁচাও। কেন? প্রতি কেজি চাল উৎপাদন করতে ব্যয় হয় তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার লিটার জল! গমের বেলায় একটু কম। এক কেজি গম উৎপাদন করতে চাই নয়শো থেকে দুহাজার লিটার জল! এক লিটার বোতলজাত জল কত টাকা দিয়ে কেনেন হিসাব করবেন দয়া করে। প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি, এক লিটার দুধ উৎপাদন করতে অন্যূন ছয়শো ত্রিশ লিটার জল লাগে। মাংস উৎপাদনে প্রয়োজন অনেক বেশি জল। এক কেজি গোমাংস উৎপাদনে ব্যয় হয় প্রায় সাড়ে পনেরো হাজার লিটার জল। এই বোধ আসার জন্যই প্রাচীন ভারত নিরামিষ ভক্ষণের দিকে ঝুঁকেছিল কিনা কে জানে!
বর্তমানে কোন দেশের বাণিজ্য পণ্যাদি খতিয়ে দেখে ভার্চুয়াল ওয়াটার ট্রেড হিসাব করা হয়। মানে, ধরুন, কোন দেশ যেসব ফসল, বস্ত্র, শিল্পজ পণ্য রপ্তানি করল, তাতে লুকিয়ে থাকা ব্যয়িত জলের হিসাব করে তার সঙ্গে তুলনা করা হল আমদানিকৃত তাবৎ পণ্যের উৎপাদনে ব্যয়িত আপাত লুক্কায়িত জলের পরিমাণকে। যদি দেখা যায় দেশটি রপ্তানি করছে মোট যে পরিমাণ জল, আমদানি করছে তার চেয়ে বেশি, তাহলে ধরা হবে দেশটি হল ভার্চুয়াল ওয়াটার ইম্পোর্টার। এর ফলে, ক্রমশ দেশটি জলসম্পদে ধনী হতে থাকবে। আর, উলটো হলে, দেশটি হল ভার্চুয়াল ওয়াটার এক্সপোর্টার। এভাবে চললে, অচিরেই, দেশটির জলসম্পদ কমে গিয়ে জলাভাব দেখা দেবে। দুঃখের কথা, ভারত এই দ্বিতীয় রাস্তায় চলেছে। ভারত বিশ্বের পয়লা নম্বর চাল রপ্তানিকারী হয়ে উঠে প্রতি বছর প্রচ্ছন্ন ভাবে প্রায় আঠারো বিলিয়ন ঘন মিটার জল রপ্তানি করে চলেছে। এর সাথে যোগ হবে গম বা মহিষের মাংস রপ্তানিতে পরোক্ষভাবে জল রপ্তানির হিসাব। অন্যদিকে, ভারত পাইকারী হারে আমদানি করে চলেছে ভোজ্য তেল বা ডাল, যার উৎপাদনে সবচেয়ে কম জল ব্যয়িত হয়। বোরো ধান চাষে নিরন্তর খেত প্লাবিত করে রাখতে অন্তত পনেরোশো মিলিমিটার জল ব্যয় হয় পুরো খেত জুড়ে। সর্ষে বা মুসুর, মুগ ডাল চাষে জলব্যয় তার এক দশমাংশ। এবার, ধান চাষ না করে তেল বা ডাল উৎপাদন বাড়িয়ে রপ্তানি করে সেই পয়সায় চাল আমদানি করলে নয় দশমাংশ জল ব্যয় না করে ভূগর্ভে সঞ্চিত রাখা যেত কি না? বলে রাখা ভালো। ফি বছর ভারত যে ভূগর্ভের জল পাম্প করে তুলে এই চাষবাসে খরচ করে যাচ্ছে এ আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের প্রাপ্য সম্পদ, যা আমরা বেহিসেবীর মত উড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছি। মানবেন?
ভারতের জল পরিস্থিতি যে ভয়াবহ পর্যায়ের দিকে যাচ্ছে তার একটা নমুনা এবছর সারা ভারতের জলাধারগুলির অবস্থা থেকে বোঝা গেছে। বিভিন্ন পরিকল্পনায় ভারতে জলসঞ্চয়ের জন্য নানা অঞ্চলে যে বড় জলাধারগুলি তৈরি হয়েছে, যথা বিভিন্ন ড্যামের জলাধারগুলি, তাতে সঞ্চিত জলের পরিমাণ নিরন্তর মেপে দেখা হয়, জলপরিস্থিতি বোঝার জন্য। গতবারের বর্ষা তেমন ভালো হয়নি, পক্ষান্তরে কৃষির উপর জোর বেড়েই চলেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে জলাধারগুলির জল ক্রমশ সেচের কাজে ব্যবহার করা ছাড়াও বাষ্পীভবন ইত্যাদি প্রক্রিয়ায় জলাধারে জল কমতে থাকে। এবছর প্রায় সব অঞ্চলের জলাধারেই জলের সঞ্চয় জলধারণ ক্ষমতার কুড়ি শতাংশের আশেপাশে নেমে গেছিল। বর্ষা আসতে দেরি করলে হাহাকার শুরু হয়ে যেত। সৌভাগ্যের কথা এই যে, বর্ষা সময়েই আসছে এবং, সুবর্ষা আসার অনুমান। তাতে হয়তো এবছরের পরিস্থিতিকে সামাল দেওয়া যাবে, কিন্তু, সবসময় তো আর ভাগ্যের ভরসায় থাকা যায় না! পাকা সমাধান চাই।
এজন্য, একদিকে জল খরচের ব্যাপারটিতে রাশ পরাতে হবে। যেমন, শুধু যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকুই ধান, গম ফলানো। জল ভর্তুকি দিয়ে দেশের সেরা কৃষিজমিতে রপ্তানির জন্য ধান, গম ইত্যাদি ফসল ফলানো এড়ানো। তার বদলে এমন ফসলের চাষ বাড়াতে হবে, ভারতে যার ফলন অপ্রতুল, বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে আমদানি করতে হয়, যথা ভোজ্য তেল ও নানাবিধ ডালশস্য। বলাবাহুল্য, এই ফসলগুলি অনেক বেশি পরিবেশবান্ধবও। জল বাঁচানো ছাড়া, ডালশস্য জমিতে নাইট্রোজেন যোগ করে আমরা জানি। দুই, কৃষিপদ্ধতিতে জল বাঁচানোর উপায় ধরতে হবে। যদি ফোয়ারা অর্থাৎ স্প্রিংকলার বা ড্রিপ ইরিগেশন পদ্ধতি চালু করা যায়, তাহলে একদিকে যেমন প্রতিবার চাষের আগে জমি তৈরি, সমতল করার কাজে প্রচুর শ্রম, অর্থ ও ডিজেল ব্যয় কমানো যায়, অন্যদিকে, অনেক কম জলে চাষ করা যায়। আরেক উপায় হল কম দিনের জাতি বিকাশ ও চাষ করা। ধরুন, এমন ভ্যারাইটি বিকশিত হল যা স্বচ্ছন্দে বর্তমান বোরো ধানের ফলন দিল অথচ, পেকে গেল দিন পঁচিশ আগে। তাহলে, অন্যূন তিনটি জলসেচ এড়ানো গেল তো!
অন্যদিকে, দেশে জলসঞ্চয়ের পরিমাণ বাড়াতে হবে, বাষ্পীভবন ইত্যাদি কমিয়ে জলধারণ বাড়াতেও হবে। আরো অনেক বেশি জলাশয় চাই। জনপদ প্লাবিত করে তেহরি ড্যামের মত কিছু চাই না। কিন্তু, যেখানে প্রকৃতির উপর উৎপাত না করে সম্ভব, সেখানে অবশ্যই স্বাভাবিক জলাবেগকে ধরে রেখে জলসঞ্চয় বাড়ানো উচিত। কয়েকটি উদাহরণ দিই। গঙ্গা বা যমুনার দূষণ এক বিরাট বড় জাতীয় সমস্যা। এর বড় কারণ, নদীগুলির তীরবর্তী শহরগুলির শিল্পজ বা গৃহস্থালী থেকে নির্গত দূষিত বর্জ্য জল কোনরকম পরিশোধন ছাড়াই ঢেলে দেওয়া হয় অভাগা নদীগুলির বুকে। এই দূষিত বর্জ্য জল যদি প্রাথমিক ভাবে পরিশোধন করে নদীতে না ফেলে ঘুরিয়ে দেওয়া হয় শহরগুলির কাছাকাছি নীচু এলাকায়, পরিত্যক্ত ইঁটভাটা, হেজেমজে যাওয়া বিল, পুকুর বা খনিতে, এবং, বিশেষ গাছ ও জৈব উপকরণ ব্যবহার করা হয়, তাহলে, এই জলই অনেকাংশে পরিশোধিত হয়ে মৎস্য চাষ, কৃষি থেকে শুরু করে ইন্ধন উৎপাদনে সাহায্য করতে পারে। কচুরীপানা দূষিত জল থেকে ক্ষতিকারক ভারী ধাতু বা অন্য দূষণকণা পরিশোধন করতে পারে, আমরা নিশ্চয়ই জানি। এও জানি যে বর্তমানে কচুরীপানা থেকে নানা পণ্য উৎপাদন সম্ভব, বিশেষ করে বায়ো-সিএনজি! আবার, দূষিত জল থেকে সরাসরি গ্রীন হাইড্রোজেনের মত ইন্ধন উৎপাদনও সম্ভব এবং অদূর ভবিষ্যতে সৌরশক্তির মত পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিকে সঞ্চয় করে রাখার জন্য এর ব্যবহার হবেই। এই অধম ভেবেই পায় না, দিল্লির পশ্চিমে, দক্ষিণে আরাবল্লীর খাঁজে খাঁজে, পরিত্যক্ত পাথুরে খাদানগুলিতে বর্ষায় যমুনার দুকূল ছাপানো বন্যার জলের এক অংশ কেন পাইপলাইনে করে নিয়ে গিয়ে সঞ্চয় করা হয় না! তাহলে কি অন্য সময়ে জলের চাহিদা সামাল দেওয়া ট্যাঙ্কার বেওসায় ক্ষতি হয়ে যাবে? কী জানি। যা আমাদের মত নন-হার্ভার্ড লোকের মাথায় ঘোরে, তা হয়তো বড় বড় কর্ণধারদের কর্ণে পৌঁছয় না!
এখন, দেশজুড়ে এই যে জলসঞ্চয়ের পরিকল্পনা, তাতে বাংলা অনায়াসে নেতৃত্ব দিতে পারে। ধরুন, রাণিগঞ্জ এলাকায় পরিত্যক্ত কয়লাখনি বা কয়লা শেষ হয়ে আসা খনিগুলি থেকে ওপেন কাস্ট মাইনিং করে কয়লা চেঁছেপুঁছে তুলে নিয়ে সেখানে পাইপলাইনে করে নিয়ে যাওয়া হল অধিক বর্ষায় ডিভিসির উপচে যাওয়া জলাধার থেকে। জমি অধিগ্রহণ করতে হলে হোক। কারণ, জলসঞ্চয় লাভের ব্যবসা। কীরকম? জলাশয় মানে মৎস্যচাষ, পর্যটন ইত্যাদি ধরে নিন। এবার তার সাথে যোগ দিন সৌরশক্তি উৎপাদনকে। জমির অপচয় এড়ানো গেল, সৌরশক্তি উৎপাদন হল। আবার, জলের উপর ভাসমান সোলার প্যানেলগুলি যে ভালো কাজ করে, তাও জানা যায়। আর, পুরুলিয়ার মত উঁচুনীচু অঞ্চলে এমন জলাধার তৈরি করতে পারলে তো পাম্পড ওয়াটার স্টোরেজ প্রকল্পের জন্য চমৎকার, যার প্রয়োজন বাড়ছে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির সঞ্চয়ের জন্য। এই ব্যাপারটি দক্ষিণবঙ্গে অনায়াসে করা যায় ইঁটভাটার ফলে সৃষ্ট গহ্বরে। দরকারে, সেগুলিকে সুগভীর করে খনিত মাটি ব্যবহার হোক নানা কাজে, গহ্বর ব্যবহৃত হোক জলাশয় হিসাবে। সৌরশক্তি উৎপাদন ইত্যাদি তো আছেই। উত্তরবঙ্গের বৃষ্টিপাতের সামান্য অংশও ধরে রাখতে লাগবে সুবিশাল জলাশয়। সাধারণ চাষবাসের তুলনায় জলাশয়ে মাছচাষ বেশি লাভজনক এই বোধ আসাতেই কিন্তু একদা অন্ধ্রপ্রদেশের কৃষ্ণা ও পশ্চিম গোদাবরী জেলায় বা হালে রাজস্থানে কোটা, মহাসামণ্ড জেলায় পাইকারী হারে কৃষিজমিকে জলাশয়ে পরিণত করা হয়। তাতে, অবশ্যই, মাছের সাথে সাথে আলাদা লাভ হয়েছে, কৃষিতে জলসেচের সুবিধা। ভূজলস্তর বাড়াই তো প্রথম লাভ।
এই ধরনের পরিকল্পনা শুনলেই অবশ্য চায়ের কাপে তুফান তোলা অনেকে নানা উক্তি শুরু করে দেন। তবে, বিশ্বের এক সত্যিকারের অর্থনৈতিক শক্তি হয়ে উঠতে গেলে, প্রথমেই ভারতের যা লাগবে, তা হল জলসম্পদ। যাঁরা সংশয়ী, তাঁরা চীনের থ্রি গর্জেস ড্যাম সম্বন্ধে পড়ে দেখতে পারেন। মার্কিন মুলুকেও এমন ড্যাম নির্মিত হয়ে রুখা ওয়েস্টের চেহারা পালটে দিয়েছে তা বোধহয় জানা কথা। তবে, উত্তর আমেরিকা বা রাশিয়ার কাছে যে পরিমাণ সুপেয় জলের ভাণ্ডার আছে তার কাছে ভারতের জলসম্পদ তুচ্ছ। গ্রেট লেকগুলি যথা সুপিরিয়র, মিশিগান, হুরন, ইরি, অন্টারিওতে বিশ্বের প্রায় একুশ শতাংশ সুপেয় জল সঞ্চিত আছে এ তো জানেনই। আবার, রাশিয়ার কাছে আছে লেক বৈকাল, সেখানেও সমপরিমাণ সুপেয় জল সঞ্চিত আছে। আবার বলি, এরকম বিশালকায় কিছু করার দরকার নেই। ভারতের জন্য সঠিক হল ক্ষুদ্র কিন্তু অজস্র সম্পদ। সে, অনেক ব্যাপারেই সত্যি।