ভােট দিল না ভারত

সংবিধানের ২০তম প্রস্তাবিত সংশােধনী অধিকার রক্ষার প্রধান প্রতিষ্ঠানগুলি এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ওপর নঞর্থক প্রভাব পড়তে বাধ্য বলে।

Written by SNS Kolkata | April 6, 2021 6:48 pm

ভারতের জাতীয় পতাকা (File Photo: IANS)

ভারত ১৯৮০ সালে শ্রীলঙ্কায় বসবাসকারী তামিলদের পক্ষ নিয়ে সে দেশের অভ্যন্তরীন ব্যবস্থায় নাক গলিয়ে ছিল। বিভিন্নভাবে সংখ্যালঘু তামিলদের সে দেশের সরকার হত্যা বা দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করেছে। দীর্ঘ সময় সেই গৃহযুদ্ধ চলার পর তা শেষ হয় ২০০৯ সালে।

কিন্তু ভারতের পক্ষে তামিলদের আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থায় সুবিচারের কোনও ব্যবস্থা করতে পারেনি। দেশে তাদের পক্ষে অঙ্গীকার এবং পুনর্বাসনেরও কোনও ব্যবস্থার সুফল ফলেনি।

অন্যদিকে চলতি সপ্তাহে জেনেভায় জাতি সংঘের তরফে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের প্রস্তাবনায় সমর্থনের পরিবর্তে ভারত সভায় অনুপস্থিত থাকার সিদ্ধান্ত ঘােষণা করায় শ্রীলঙ্কায় গৃহযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে সওয়ালকারীদের হতাশ করেছে। জেনেভায় ভারতের প্রতিনিধি অশােক মনি পান্ডে জানিয়েছেন, ভারত দুটি বিষয়ের ওপর তামিল সমস্যার সমাধানের বিষয়টি অঙ্গীকারবদ্ধ।

ভারত শ্রীলঙ্কার ভৌগােলিক ঐক্যবদ্ধতাকে সমর্থন করে এবং শ্রীলঙ্কায় বসবাসকারী তামিলদের সমানাধিকার, বিচার, শান্তি এবং মর্যাদার প্রত্যাশাকেও সমর্থন করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় দ্বিতীয় অঙ্গীকারের বিষয়ে ভারত সরকার হতাশাজনকভাবে নীরব।

শ্রীলঙ্কায় সমন্বয়সাধন, অঙ্গীকারবদ্ধতা এবং মানবাধিকারের উন্নয়ন শীর্ষক ইউএণএইচআরসি রেজলিউশন ৪০/১ ছয়টি প্রধান দেশের পক্ষে পেশ করা হয়েছে। ব্রিটেন, কানাডা, জার্মানি, মালাওয়ি, মন্টেনেগ্রো এবং উত্তর মেসিডােনিয়া নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আন্তজাতিক মানবাধিকার আইনের সার্বিক লঙঘন এবং সংঘটিত অপরাধের দ্রুত বিচার দাবি করা হয়েছে।

মানবাধিকার কাউন্সিলের ৪৭ সদস্যের মধ্যে ২২ জন সুপারিশের পক্ষে ভােট দিয়েছে এবং ১১ সদস্য বিপক্ষে ভােট দিয়েছে এবং ১৪ সদস্য ভােটদানে ব্রিত থেকেছে। কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম ভারত সরকারে ভােটদানে বিরত থাকার বিষয়ে অভিযােগ করে বলেছেন, এমন আচরণ তামিলদের সার্বিক ভাবাবেগের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা।

প্রস্তাবের সুপারিশগুলি অবিলম্বে কার্যকর হবে। ২০১৯ সালের নভেম্বরে গােটাবায়া রাজাপাক্ষ শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই সে দেশের প্রশাসন তামিল সংখ্যালঘুদের প্রতি পক্ষপাতমূলক আইন বলবৎ করে এবং নানা দমনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা শুরু করেছে।

প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মহীন্দা রাজাপাক্ষ সরকারে ২০০৫ এবং ২০১৫ সালে গােটাবায়া রাজাপাক্ষ প্রতিরক্ষা সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করেছেন। এখন মহীন্দা প্রধানমন্ত্রী এবং তার ভাই গােটাবায়া রাষ্ট্রপতি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সময়ে শ্রীলঙ্কার সামরিক বাহিনি এবং লিবারেশন টাইগারস অব তামিল ইলম গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং অসংখ্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটায়।

শ্রীলঙ্কার পূর্বর্তন সরকারের সমর্থনের আশ্বাস থাকা সত্ত্বেও গােটাবায়া সরকার সর্বসম্মত রেজলিউশন ৩০/১ থেকে তাদের সমর্থন অঙ্গীকার প্রত্যাহার করে ইউএনএইচআরসি’র প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। সংবিধানের ২০ তম প্রস্তাবিত সংশােধনী অধিকার রক্ষার প্রধান প্রতিষ্ঠানগুলি এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ওপর নঞর্থক প্রভাব পড়তে বাধ্য বলে বিশেষজ্ঞ মহল মন্তব্য করেছে।

নিরাপরাধ তামিল নাগরিকদের ওয়ান্টন হত্যাকান্ডে খতম করায় অভিযুক্ত এক সামরিক আধিকারিককে গত বছর ক্ষমা প্রদর্শন করা হয়েছে এবং যুদ্ধ অপরাধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধে অভিযুক্ত এক সামরিক আধিকারিককে অসামরিক প্রশাসনের এক প্রধান পদে নিযুক্ত করার ফলে শ্রীলঙ্কায় বসবাসকারী ভাষা ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় কুঠারাঘাত করা হয়েছে।

বন্দী তামিল যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার এবং তামিল। পরিবারগুলির দুর্দশার মতাে চরম বিষয়গুলি উপেক্ষা করা হচ্ছে বলে অভিযােগ। গণ নিরাপত্তামন্ত্রী সরথ ওয়েরাসেকারা সম্প্রতি জাতীয় নিরাপত্তায় অসুবিধা সৃষ্টিকারী হিসেবে দেশে বােরখা ও নিকাব ব্যবহার এবং দ্বীপরাষ্ট্রে মাদ্রাসা নিষিদ্ধকারী এক কেবিনেট সনদে স্বাক্ষর করেছেন।

ইসলামিক দেশগুলির বিভিন্ন সংগঠন শ্রীলঙ্কা সরকারের এই নিষেধাজ্ঞার ঘােষণাকে পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত বলে অভিযােগ করেছে। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে জাতি সংঘ মানবাধিকার কমিশনের প্রস্তাবে ভােটদানে বিরত থেকে গােটাবায়া সরকারের প্রতি সমর্থনের বার্তা দিতে চাইলেও, ভারতে শ্রীলঙ্কার দূতাবাসের অফিসটি দীর্ঘ পনেরাে মাস ধরে বন্ধই রয়েছে।