• facebook
  • twitter
Saturday, 14 June, 2025

মুনাফাবাজদের স্বার্থে

দেশে রেশন ব্যবস্থা চালু নিয়ে দু’টি মত রয়েছে। প্রথমটি হলো, নির্দিষ্টভাবে গরিব পরিবারগুলিকে চিহ্নিত করে কেবলমাত্র তাদের জন্যই রেশনের ব্যবস্থা করা।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

খোলা বাজার থেকে চাল-গম কিনে দু’বেলা অন্ন সংস্থানের সামর্থ্য নেই এমন গরিব মানুষদের কথা মাথায় রেখেই রেশন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। এইসব দরিদ্র পরিবারগুলিকে চিহ্নিত করে সরকারের তরফ থেকে তাঁদের রেশনকার্ড দেওয়া হয়। সেই কার্ড দেখিয়ে সরকার অনুমোদিত রেশন দোকান থেকে প্রতি সপ্তাহে বরাদ্দ খাদ্য সংগ্রহ করে পরিবারগুলি। দেশের গরিব নাগরিকদের অভুক্ত থাকা থেকে রক্ষা করতে যে কোনও জনকল্যাণকামী রাষ্ট্রের এটা দায়। অর্থাৎ সরকার যেহেতু সব নাগরিকেদর সেই পরিমাণ রুজির ব্যবস্থা করে দিতে পারেনি তাই নিম্ন আয়ের মানুষদের বাঁচিয়ে রাখতে খাদ্যের জোগান দিতে বাধ্য। স্বাধীনতার পর থেকে দেশে এই রেশন ব্যবস্থা চালু আছে তবে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এই ব্যবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে।

বর্তমানে চালু রেশন ব্যবস্থায় ভরতুকি দিয়ে কম দামে পরিবারগুলিকে চাল-গম ইত্যাদি সরবরাহ করা হয়। এই ব্যবস্থার অন্য প্রান্তে জড়িয়ে রয়েছে কৃষক সমাজ। রেশন ব্যবস্থার জন্য গড়ে উঠেছে এক বিশাল নেটওয়ার্ক, পরিকাঠামো এবং জোগান শৃঙ্খল। দেশের সর্বত্র এমনকি একেবারে প্রান্তিক এলাকাতেও আছে রেশন দোকান। রেশনে সরবরাহের জন্য সরকারকে খাদ্যের মজুত ভাণ্ডার গড়া হয়। সব রাজ্যে প্রয়োজন মতো একাধিক গুদাম তৈরি করা হয়েছে। সেই গুদাম থেকে খাদ্য যায় রেশন দোকানে।

সরকার নির্ধারিত মূল্যে সরকারই কৃষকদের কাছ থেকে চাল-গম কিনে গুদামে মজুত করে রেশনে বন্টনের জন্য। ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে সরকারকে কৃষকের কাছ থেকে ফসল কিনতে হয়। খোলা পাইকারি বাজারে কৃষকরা ফসল বিক্রি করতে গেলে দাম পায় না। ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে দাম অনেক কমে যায়। সেই দামে চাষের খরচ ওঠে না। তাই সরকারকেই ন্যূনতম লাভজনক দামে কৃষকের কাছ থেকে চাল-গম কিনতে হয়। সেগুলিই দেওয়া হয় রেশনের মাধ্যমে। এইভাবে গড়ে উঠেছে সুবিশাল এক নেটওয়ার্ক। সরকারি, আধা সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ এই নেটওয়ার্কে যুক্ত।

দেশে রেশন ব্যবস্থা চালু নিয়ে দু’টি মত রয়েছে। প্রথমটি হলো, নির্দিষ্টভাবে গরিব পরিবারগুলিকে চিহ্নিত করে কেবলমাত্র তাদের জন্যই রেশনের ব্যবস্থা করা। আর দ্বিতীয় মতটি হলো, সর্বজনীন রেশন ব্যবস্থা। অর্থাৎ দেশের সকল পরিবারের জন্য রেশন ব্যবস্থা চালু করা। সর্বজনীন ব্যবস্থা হলে গরিবরা সস্তায় যেমন খাদ্য পাবেন, তেমনই মধ্যবিত্তরাও পুরোপুরি খোলা বাজারের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বেন না। যেহেতু খোলা বাজারে খাদ্যের দামের ওপর সরকারের কার্যকর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই, ব্যবসায়ীদের মুনাফার স্বার্থে সরকার কোনও ব্যবস্থা নেয় না। তাই মধ্যবিত্তদের উচ্চমূল্যের বোঝা বইতে হয়। সর্বজনীন রেশন ব্যবস্থা থাকলে খোলা বাজারের বিকল্প নিয়ন্ত্রিত মূল্যে খাদ্যের জোগান অব্যাহত থাকে। তার ফলে খোলা বাজারের খাদ্যমূল্য যথেচ্চ বাড়তে পারে না। খাদ্যের পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে সর্বজনীন রেশন ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এখন মোদী সরকার চাইছে এই গোটা রেশন ব্যবস্থাটাই তুলে দিয়ে সরকারের বরাদ্দ ভরতুকির টাকা রেশন গ্রাহকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিতে। অর্থাৎ রেশন দোকান আর থাকবে না। রেশন তুলতে আর হবে না। মাস গেলে অ্যাকাউন্টে কিছু টাকা এসে যাবে। কৃষকের কাছ থেকে সংগৃহিত ফসল সরকার খোলা বাজারে বিক্রি করবে। সেই ফসল ব্যবসায়ীরা উচ্চমূল্যে বিক্রি করে মুনাফা লুটবে। খাদ্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণ বলে আর কিছুই থাকবে না। সর্বোপরি এই গোটা ব্যবস্থার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত কয়েক কোটি মানুষ তাদের রুজি হারিয়ে সঙ্কটে পড়বে।