• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

‘নাম বাদ গেলে কমিশন অফিস ঘেরাও’: অভিষেক

অভিষেক আরও জানিয়েছেন, আগামী ১১ আগস্ট সোমবার বিরোধী সাংসদরা দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের সদর দপ্তর ঘেরাও করবেন।

এসআইআর-র বিরুদ্ধে সংসদে তৃণমূলের প্রতিবাদ।

বাংলায় হবে না ভোটার তালিকায় ‘বিশেষ নিবিড় সংশোধন’ বা ‘এসআইআর’। একজনেরও নাম বাদ পড়লে লক্ষ বাঙালি নিয়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের দপ্তর ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এসআইআর-র ফলে বিহারের ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ৬৫ লক্ষ নাম। বাংলাতেও এসআইআর বাস্তবায়নের সম্ভাবনা প্রবল। এই আবহে দিল্লি থেকে ফিরে কলকাতা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে সাংসদ অভিষেকের হুঁশিয়ারি, ‘‘যাঁরা ‘হ্যাঁ স্যার’ বলে নির্বাচন কমিশনকে বিক্রি করে দিয়েছে, আমরা তাঁদের সতর্ক করছি। যদি ভোটার তালিকা থেকে একজন বাংলার মানুষেরও নাম বাদ যায়, তবে এক লক্ষ বাঙালি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের অফিস ঘেরাও করব।’’ নির্বাচন কমিশনের তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি আরও বলেন, ‘‘দু’বছরের প্রক্রিয়া এক-দু’মাসে শেষ করবে কীকরে? এই ভোটার লিস্টের ভিত্তিতেই ২০২৪-এ কেন্দ্রে সরকার গঠিত হয়েছে। তাহলে তো প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর মন্ত্রিসভা অবৈধ! ২০১৪ সালে কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে একবারও বাংলায় জিততে পারেনি। এমতাবস্থায় সুকৌশলে বাংলার মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার পন্থাই হল এসআইআর।’

সেই সঙ্গে অভিষেক আরও জানিয়েছেন, আগামী ১১ আগস্ট সোমবার বিরোধী সাংসদরা দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের সদর দপ্তর ঘেরাও করবেন। তাঁর ভাষায়, ‘সংসদ থেকে আয়োজিত মিছিলে তৃণমূলের প্রতিনিধিরা থাকবেন। ওইদিন উত্তর দিনাজপুর এবং বহরমপুর নিয়ে আমার সাংগঠনিক বৈঠক থাকায় আমি উপস্থিত থাকতে পারব না।’

Advertisement

উল্লেখ্য, শুক্রবার সকালে সংসদ চত্বরে কমিশনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূলের লোকসভা এবং‌ রাজ্যসভার সাংসদেরা। বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন অভিষেক। ‘নির্বাচন কমিশন ছিঃ ছিঃ’ বলে উঠল স্লোগান। তাঁদের হাতে ছিল গেরুয়া রঙের পোস্টার, যাতে বাংলায় লেখা ‘ভোট চুরি’। অভিষেকের হাতে ধরা একটি ব্যানারে বাংলাতে লেখা ‘চুপি চুপি ভোট চুরি’। সঙ্গে ইংরেজিতে লেখা ‘সাইলেন্ট ইনভিসিবল রিগিং’ যেগুলির ইংরেজি আদ্যক্ষর যোগ করলে হয় ‘এসআইআর’।

Advertisement

প্রসঙ্গত, এই এসআইআর প্রশ্নে একই বন্ধনীতে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের প্রত্যেক শরিক দল। অভিষেকের ভাষায়, ‘রাহুল গান্ধীর ডাকা বৈঠকে এসআইআর-র বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে প্রত্যেক বিরোধী রাজনৈতিক দল। একই মানুষ বারাণসীতে ভোট দিচ্ছে, আবার কর্ণাটকেও দিচ্ছে। বিজেপির এই কারসাজিতে এখন তারাই ফেঁসে গিয়েছে। কর্ণাটকের মহাদেবপুরাতে প্রচুর কারচুপি হয়েছে। প্রয়োজনে এর প্রতিবাদে প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধেও আন্দোলনে নামতে হবে।’ এই প্রসঙ্গে বাংলার বিষ্ণুপুর, পুরুলিয়া এবং বালুরঘাটের ভোটের ফলাফল নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অভিষেক। তবে এদিনের বৈঠকে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে যে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের কোনো কথা হয়নি, তাও জানিয়ে দেন সাংসদ।

ভোট-ইস্যুতে জাতীয় রাজনীতিতে তৃণমূল এবং কংগ্রেসের সহাবস্থানে কোনো ইতিবাচক ইঙ্গিত রয়েছে কি? দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করে তিনি বলেন, ‘দল নির্বিশেষে বাংলার জন্য কেউ এক পা হাঁটলে, তৃণমূলও তার জন্য এক পা হাঁটবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিজেপির স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়ছি।’ প্রসঙ্গত, তৃণমূলের সংসদীয় দলের নেতা হওয়ার পরে বৃহস্পতিবার দিল্লিতে প্রথম বৈঠক করেন অভিষেক। সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় সতর্ক থাকা, অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত থাকা-সহ একাধিক বার্তা দলীয় সাংসদদের দিয়েছেন তিনি। এমনকি, লোকসভার সাংসদদের নিয়ে নতুন একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপও তৈরি করেছেন।

এরপর লোকসভায় তৃণমূলের নয়া চিফ হুইপ ডা. কাকলি ঘোষ দস্তিদার এবং ডেপুটি লিডার শতাব্দী রায়ের সঙ্গে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে গিয়ে নতুন দায়িত্বের বিষয়টি আনুষ্ঠানিক ভাবে নথিবদ্ধ করেছেন। পরে তিনি বলেন, ‘স্পিকারকে জানিয়েছি, কেন্দ্রের লুকোনোর কিছু না থাকলে এসআইআর নিয়ে সংসদে আলোচনা করছেন না কেন? নিশ্চয়ই লুকোনোর কিছু আছে! বাংলা-বাঙালির নির্যাতনের প্রতিবাদেও আলোচনা চেয়েছি।’ পাশাপাশি আবাস এবং জলজীবন মিশনে কেন্দ্রের বঞ্চনা নিয়েও সুর চড়িয়ে তাঁর ক্ষোভপ্রকাশ, ‘আদালতের অবমাননা করছে কেন্দ্র। শীঘ্রই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান এবং জলশক্তিমন্ত্রী সি আর পাটিলের সঙ্গে দেখা করবে তৃণমূলের প্রতিনিধিদল।’ বাংলায় টিকাকরণ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘আমি স্বাস্থ্য দপ্তরের মন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলব। কেন এমন হল, তা জানব।’

Advertisement