• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে এখনও সতর্ক না হলে সমূহ বিপদ দেশের

রাজ্যে ‘পরিবর্তনে’র পর বুদ্ধিজীবীদের একাংশ শাসকদলে যোগ দিয়ে ক্রমে দলীয় নেতা হয়েছেন হয়ত আপন ভবিষ্যতের হিসেব কষেই। কিন্তু বাকীরা?

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

শান্তনু রায়

দিল্লির লালকেল্লা মেট্রো ষ্টেশনের গেটের সামনে সোমবারের সন্ধ্যায় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটানো ভয়াবহ বিস্ফোরনের সাথে জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ জড়িত থাকায় প্রমাণ হল এই জঙ্গি সংগঠনগুলি রক্তবীজের বংশধর-শেষ হয়েও শেষ হয়না। ঐ ঘটনার কয়েক ঘন্টা আগেই ঐ সংগঠনের হয়ে প্রচারকার্যে লিপ্ত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া কাশ্মিরী চিকিৎসকের ভাড়াবাড়ি থেকে মজুতকরা যে বিপুল পরিমান রাসায়নিক-গোলাবারুদ উদ্ধার হয়েছে এবং এখনও দিল্লি সন্নিহিত বিভিন্নস্থান থেকে তা থেকে পরিস্কার দিল্লিতে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের মাধ্যমে সন্ত্রাস ঘটানোর ছক ছিল-কারণ ঐ উদ্ধারকৃত গোলা বারুদে একটি শহরই উড়ে যেতে পারত।

Advertisement

ধৃত চিকিৎসকের অনন্তনাগের সরকারি মেডিকেল কলেজের লকার থেকেও উদ্ধার হয়েছে একটি একে-৪৭ রাইফেল ও প্রচুর গোলাবারুদ।সকালে দিল্লির অদূরে ফরিদাবাদ থেকে ওই বিপুল পরিমান রাসায়নিক-গোলাবারুদ উদ্ধার হয়েছিল আর সন্ধ্যায় মাইল তিরিশেক দূরে দিল্লিতে বিস্ফোরন ঘটনার মধ্যে এক গোপন যোগসূত্রে পুলিশের অনুমান যে উদ্ধারকৃত বিপুল পরিমান বিস্ফোরক ও গোলাবারুদ সংগ্রহ মজুত ও বিভিন্নস্থানে পৌছে দেওয়ার নেপথ্যে রয়েছে জইশ-ই মহম্মদ এবং জামাত-উল-মোমিনাত।

Advertisement

প্রসঙ্গত, অপারেশন সিঁদুর এর ফলে পাকিস্থানে মাসুদ আজাহারের জইশ-ই মহম্মদ এর ঘাঁটি সাময়িকভাবে ধ্বংস এবং মাসুদ আজাহারের প্রায় সব নিকট আত্মীয়রা মারা গেলেও ইতিমধ্যে ক্ষয়ক্ষতি সামলে একদিকে মাসুদ আজাহারের নেতৃত্বে জইশ-ই- মহম্মদ আবার শক্তি সঞ্চয় করে যথেষ্ট সক্রিয় হয়েছে অন্যদিকে মাসুদের বোন জামাত-উল-মোমিনাত নামে এক মহিলা জঙ্গি শাখা সংগঠন তৈরি করেছে যাদের নাশকতামূলক কাজে ট্রেনিং দিচ্ছে পাকিস্থানের আই এস আই, সংবাদে বোঝা যাচ্ছে পাকিস্তান আছে পাকিস্তানেই-সরাসরি যুদ্ধে পর্যুদস্ত হয়েও ভারতে সন্ত্রাসীকাজে জঙ্গিসংগঠনগুলিকে লাগাতার মদত দিয়ে যাচ্ছে- ইদানীং হয়ত বড়দাদা আমেরিকার সৌজন্যে বাড়তি উৎসাহে। লালকেল্লার কাছে জনবহুল এলাকায় ঐ ভয়াবহ বিস্ফোরনের ঘটনা ও তার কিছু আগে ফরিদাবাদে বিপুল বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় ধৃতরা প্রায় সবাই এবং বিস্ফোরনে নিহত বিস্ফোরক বোঝাই আই ২০ গাড়িটির চালক উমর নবিও ফরিদাবাদের একটি মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে যুক্ত বিশেষ একটি সম্প্রদায়ভুক্ত ডাক্তার যাদের সঙ্গে জইশ-ই-মহম্মদের সঙ্গে যোগ প্রমাণিত,এমনকি লালকেল্লার সামনে বিস্ফোরনের ঘটনায় সরাসরি যুক্ত থাকার অভিযোগে ধৃত শাহিন সিদ্দিকি নাম্নী মহিলা চিকিৎসক জামাত-উল-মোমিনাত এর মতো একটি জঙ্গী সংগঠনের মহিলা শাখার প্রধান-সকলেই নিজেদের মধ্যে গোপনে যোগাযোগ রাখত আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে উন্নত অ্যাপের মাধ্যমে। ধৃতদের মধ্যে পুলওমার একজন চিকিৎসকও জড়িত থাকায় ঘটনার সাথে পুলওমাযোগও সন্দেহ করা হচ্ছে।এবিধ তথ্য থেকে অনুমান করা যায় আন্তর্জাতিক ধর্মীয় জঙ্গীবাদ সমাজে চিকিৎসক এর মতো সম্মানিত উচ্চপ্রতিষ্ঠিত ও সেবামূলক পেশায় যুক্তদেরও দেশবিরোধী সন্ত্রাসীকাজে লিপ্ত করতে সক্ষম হয়েছে-পেশাগত কারণে সমাজে তাদের সহজ গ্রহণযোগ্যতার সুযোগ নিতে। ইদানীং অবশ্য বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনেই হোয়াইট কলার পেশার মানুষদের সামিল করার কৌশল নেওয়া হচ্ছে সংগঠনের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে। আসলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তেই ঐ আন্তর্জাতিক ধর্মীয় জঙ্গী সংগঠন অধীন বিভিন্ননামের শাখা সংগঠনের মাধ্যমে শিকড় গাড়তে সক্ষম হয়েছে/হচ্ছে যেমন প্রশাসনিক নজরদারির শৈথিল্য ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলির মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের কারণে তেমনই অনেক ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থে মদত পেয়ে যাওয়ায়। এ রাজ্যেও জইশ-ই-মহম্মদ বা বাংলাদেশের জামাতুল মুজাহিদিন এর (জেএমবি) মতো জঙ্গী সংগঠনের স্লিপা্র সেল যে যথেষ্ট সক্রিয় বহুদিন ধরেই তার বিভিন্ন প্রমান পাওয়া গেছে- এক দশক আগে বর্ধমানের খাগড়াগড়ের বিস্ফোরন কাণ্ডেও বাংলাদেশী জে এম বি জঙ্গী অনুপ্রবেশকারীরা জড়িত ছিল। আর এখন তো সেই পড়শিদেশে পাকিস্থান এবং আরও কোন কোন আন্তর্জাতিক শক্তির মদতে ক্ষমতাসীন এক দখলদারি মৌলবাদীশক্তি যাদের প্রশ্রয়ে জঙ্গী সন্ত্রাসীরা ওদেশে চোখ রাঙ্গাচ্ছে আবার দীর্ঘ অরক্ষিত সীমানার সুযোগে এরাজ্যে অনুপ্রবেশ করে ঘাঁটি গেড়ে ও মোটামুটি একই ভাষাভাষী হওয়ায় সাধারনের মধ্যে মিশে গিয়ে ও বিভিন্নভাবে জাল নথিপত্র প্রস্তুত করে রাজ্যে ও দেশে ক্ষমতাবিস্তার করতে ও অস্থিরতা সৃষ্টি করতে অতি সক্রিয়-যেহেতু প্রশাসনিক সতর্কতা সক্রিয়তা, সর্বোপরি রাজনৈতিক সদিচ্ছা হয়তো প্রশ্নাতীত নয় । একবার একটি বড় ঘটনা ঘটলে কিছুদিন হৈ চৈ, দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে পারস্পরিক দোষারোপ-তারপর সব থিতিয়ে যায় যে তিমিরে সেই তিমিরেই। আক্ষেপ করা ছাড়া এব্যাপারে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরও আর কিছু করার থাকেনা। আবার নাগরিকদের একাংশের এবং সমাজের বিশিষ্ট মহলেরও এই গুরুতর ব্যাপারেও শুধু যে কোন হেলদোল নেই তা নয় ,কেউ এই অপ্রিয় প্রসঙ্গটি জনপরিসরে বা কোন আলোচনায় উত্থাপন করলে দেশের সংহতি ও নিরাপত্তার পক্ষে বিপদজ্জনক সমস্যাটিও ধামাচাপা দিতে সেই স্পষ্টবাদী ব্যক্তিত্বকেও তারা গালমন্দ করে অসম্মানিত ও প্রান্তকায়িত করতে অত্যুৎসাহে ঝাঁপিয়ে পড়েন- বিশ্বের অন্যত্র অনুরূপ ঘটনার উল্লেখ করে এসব ছোট বিচ্ছিন্ন ঘটনা আখ্যায়িত করে কিংবা এরাজ্যে বা দেশের এবিধ ঘটনার উল্লেখ ‘বিভাজনে’র রাজনীতি বলে দাগিয়ে দিয়ে।

পড়শি দেশের জেএমবি জঙ্গীরা ২০১৪ সালের খাগড়াগড়ের ঘটনায় জড়িত প্রমাণিত হলেও চলতি আবহে এ রাজ্যেরই কোন ‘প্রাজ্ঞ’জন নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন এই ‘সুচিন্তিত’ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে যে অজ পাড়াগ্রামে ছোটবোমা বিস্ফোরনে কেবলমাত্র বোমা প্রস্তুতকারী দু’জন মারা যাওয়ায় ঐ ঘটনা অন্যত্র ঘটা সন্ত্রাসী ঘটনার তুলনায় অকিঞ্চিৎকর ।

আবার সপ্তাহ দুই আগে এক সুপরিচিত বৈদ্যুতিন চ্যানেলে এস আই আর বা ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন নিয়ে অনুষ্ঠিত এক টকশোয়ে সাহিত্যিকা তিলোত্তমা মজুমদারের কিছু অপ্রিয় কিন্তু সুস্পষ্ট বক্তব্যে বড়ই কুপিত এবঙ্গের ছদ্ম ‘সম্প্রীতি’র ধ্বজাধারীরা । তাঁর ওই শাণিত বক্তব্যে বাছাই প্রতিবাদে অভ্যস্ত সমাজপরিসরে যেন ভীমরুলের চাকে ঘা পড়েছে। বিশেষ ‘অনুপ্রেরণা’য় আত্মনিবেদিত আধো জাগরিত বঙ্গীয় বুদ্ধিজীবি সমাজের একাংশ এবং কিছু কলমচি রে রে করে ঝাঁপিয়ে পড়েলেন আনন্দপুরস্কার প্রাপ্ত সাহিত্যিকার মুণ্ডপাত করতে। অনুপ্রেরণার বাড়তি আনুকুল্য লাভের লোভে একটি সংবাদপত্রের উত্তরসম্পাদকীয়তে তো অত্যন্ত রুচিহীনভাবে শ্রীমতী মজুমদারকে আক্রমণ করতে গিয়ে কটাক্ষ করা হয়েছে এই ভাষায় যে বিজেপি সরকারের কাছ থেকে একটা বড়ো পুরস্কার পাওয়ার জন্য নাকি তিনি ‘আড়েদিঘে বাড়ছেন’। অথচ ওই অনুষ্ঠানে তিলোত্তমার ভাষণ যারা শুনেছেন বা তাঁর বক্তব্যের ক্লিপিংস যারা দেখেছেন তাঁদের অবশ্যই মনে হবে এই নিম্নরুচির আক্রমণ সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে আপন ‘পাণ্ডিত্য’ জাহিরের লক্ষ্যে। তিলোত্তমাকে ‘অবিদ্যার ধাড়ি’ বলে নজিরবিহীনভাবে আক্রমণ করে ‘বিদ্যাধর’ কলমচিই হয়ত নিজের শ্রেণি চিহ্নিত করে দিয়েছেন। এখানেই শেষ নয় ভাবতে আশ্চর্য লাগে এক হিংস্র আক্রোশে আক্রমণ করতে গিয়ে অনুপ্রবেশকারীদের দুশমন মনে হওয়ার অপরাধে ‘ঋ’এর মতো সাড়া জাগানো প্রথম উপন্যাস ছাড়াও আরও অনেক সার্থক কথাসাহিত্যের সৃজনকার সেই সাহিত্যিকার সাহিত্যকৃতী অস্বীকার করার মানসে ছাপার অক্ষরে উদ্গিরণ করা যায় এমন অসুয়া – বাংলা সাহিত্যের তথাকথিত বড়ো হাউসে সেসব লেখকদেরই লেখা ছাপা হয় যারা মূলত মুর্খ,অশিক্ষিত আর প্রকাশ্যে ও গোপনে সাম্প্রদায়িকতাকে বহন করে।

আসলে তিলোত্তমা এস আই আর বা ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পড়শি দেশ থেকে বিপুল সংখ্যায় অনুপ্রবেশজনিত সমস্যা প্রসঙ্গে দীর্ঘ অরক্ষিত সীমান্তের সুযোগে এবং স্থানীয় রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে এক বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষজনের ব্যাপকহারে এদেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের ফলে(যা এখন বিতর্কাতীত সত্য)- এ রাজ্যের সামাজিক অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত সমস্যা এবং বিশ্বজোড়া এক বিশেষ বিপজ্জনক ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের বাড়বাড়ন্তের প্রেক্ষিতে অনুপ্রবেশকারীদের একাংশের জঙ্গী ও নাশকতামূলক কাজে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কার উল্লেখ করেছিলেন। এতেই যত গাত্রদাহ।

যদিও এস আই আর সমর্থন করলেও তিলোত্তমা বিজেপি্রও সমালোচনা করতে ছাড়েননি। তিনি এমনও প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপির হিন্দুত্ববাদ কি আল্টিমেটলি ভারতের জনগণের পক্ষে মঙ্গলজনক বা আশীর্বাদী।
বৈদ্যুতিন মাধ্যমে ঐ বিতর্কসভায় তিনি আরও যা বলেছিলেন তা হল -এই অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা ছদ্মবেশি ভারতীয় হয়ে মিশে যাচ্ছে এদেশের সমাজপরিসরে-স্থানীয় রাজনৈতিক ক্ষমতাধরদের সাহায্যে র‍্যাশন কার্ড ভোটার কার্ড আধারকার্ড প্রভৃতি নথিপত্র প্রস্তুত করে নিয়ে এদেশের বৈধ নাগরিকদের প্রাপ্য সমস্ত সুযোগ সুবিধা আদায় করে নিচ্ছে-জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করছে,আবার এদের অনেকে জঙ্গী কার্যকলাপেও যুক্ত হচ্ছে- যা চলতে পারেনা সেজন্য এস আই আর প্রয়োজন। কিন্তু একই সঙ্গে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে ভারতীয় মুসলিমদের সঙ্গে কোন বিরোধ নেই। বলেছিলেন- আমি কখনই বলব না ভারতবর্ষের মুসলিমরা যারা ভারতের আত্মার মধ্যে আছেন তারা কোন অসুবিধায় পড়ুন।আশা প্রকাশ করেছেন তেমন ঘটনাঘটলে সকলবিবেকবান সহ নাগরিকরা এর প্রতিবাদ করবেন।তিনি সমাপ্ত করেছেন এই আহ্বান জানিয়ে- আসুন সবাই মিলে ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে কথা বলি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলি যে দুর্নীতির জন্যই এস আই আর প্রয়োজন যে দুর্নীতি রুখতেই নাগরিকদের একটি স্বচ্ছ সৎ তালিকা- সঠিক তথ্যভাণ্ডার প্রস্তুত করা প্রয়োজন। দুর্ভাগ্য, এই বক্তব্যের পরেও তাঁকে কুরুচিকর আক্রমনের শিকার হতে হয়।

প্রসঙ্গত, একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় অনেক খামতি এবং সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও ভারতবর্ষে গনতান্ত্রিক আবহ এখনও বর্তমান। অন্তত তৃতীয় বিশ্বে এমনকি এশিয়ার মধ্যেও ভারতবর্ষের গন্তাতান্ত্রিক কাঠামো দৃষ্টান্ত স্বরুপ। এই গনতান্ত্রিক বহুত্ববাদী সমাজ বিশিষ্ট ভারত ও আজ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের লস্খ্যবস্তু। অস্থিরতা সৃষ্টি করে ভারতকে একবার কোনভাবে কাবু করতে পারলে সমগ্র দক্ষিন পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত এই জঙ্গী গোষ্টির সামনে ফাঁকা মাঠ। আইসিএস তাদের পরিকল্পনার ছক ম্যাপ প্রকাশ করার পর ও কোন কোন মাননীয় পন্ডিত আবার তাদের কাজের সাফাই হিসাবে এই ইসলামি চরম পন্থাকে একটা প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখাতে চান। অথচ দেশে কোন জঙ্গিসন্ত্রাসের ঘটনা ঘটলে তারা প্রথমেই সরকারকে দায়ি করেন।

ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের অবস্থানের ফলে দেশের ও দেশবাসীর সম্ভাব্য বিপদের উল্লেখ করে তিলোত্তমা এক শ্রেণির জেগে ঘুমানো ‘বুদ্ধিজীবী’ ও কিছু মতলবী কলমচিদের রোষের লক্ষ্যবস্তু হয়ে পড়েছেন। অপ্রিয় সত্য আড়াল করতে এরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই স্পষ্টবক্তা প্রগতিশীল নারীবাদী লেখিকাকে বিশেষ একটি দল বা মতের দাগিয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। এদের আচরণ ও বক্তব্যে একথা বিশ্বাস করার কারণ আছে এঁরা আসলে চান না যে এদেশ অবৈধ অনুপ্রবেশকারী জঙ্গী মুক্ত হোক। এঁদের অবিবেচক অবিমৃষ্যকারী ও দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য সহায়ক হয় বিশ্বব্যাপী জঙ্গীবাদের ভারতে অস্থিরতা তৈরির গোপন এজেণ্ডারও।

বলাবাহুল্য, গনতন্ত্রে ভোটবাক্সে সংখ্যা খুব গুরুত্বপূর্ন। অতএব যে কোনভাবে সংখ্যা বাড়িয়ে (অনুপ্রবেশের দ্বারা বা কোন ধর্মীয় অজুহাতে হোক) মাথাপিছু একটি ভোটের সুযোগে দাদাগিরিকরে চলে প্রশাসন থেকে সর্বত্র প্রভাব বিস্তার । রাজ্যের শুধু সীমান্তবর্তী জেলাগুলি নয় অন্য জেলা এবং কলকাতা মহানগরীর জনবিন্যাসেও ব্যপক পরিবর্তন ঘটেছে গত কয়েক দশকে-এ আজ বাস্তব।

অনেকের হয়ত স্মরণে আছে যে ২০১৯ এর ডিসেম্বরে নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনীটি পাশের সাথে সাথে দেশের অনেক স্থানে,এই রাজ্যেরও কোথাও কোথাও হিংসাত্মক বিক্ষোভ অবরোধ চলেছিল, -প্রধানত মালদা ও মুর্শিদাবাদে বিনষ্ট করা হয়েছিল অনেক সরকারি সম্পত্তি-পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল সরকারি বাস ও রেল স্টেশন প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে। যদিও আইনের ওই সংশোধনের ফলে কারও আগেকার অধিকার কোনভাবে ক্ষুন্ন হয়নি। তখনও বুদ্ধিজীবীদের একাংশ মাঠে নেমেছিলেন ওই সংশোধনীর বিরুদ্ধে লোক ক্ষ্যাপাতে। প্রকৃতপক্ষে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই শাহিনবাগ বা পাকসার্কাসের মহিলাদের সামনে তখন আসল সত্যটা ইচ্ছাকৃতভাবেই গোপন রাখা হয়েছিল তাদের প্ররোচিত করতে। আবার তারই রেশ ধরে ২০২৪ এর ১১ই মার্চ সংসদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আইনটি বলবৎ করার ঘোষণা করার পর মেঘালয়ের ইছামতীতে ঐ বছরের ২৭শে মার্চ সুজিত দত্ত নামে একজন বাঙালি সহ দু’জন অনুপজাতীয়ের কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরার পথে শেষ বিকেলে আক্রান্ত হন সিএ এ আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভে হিংস্র উপজাতীয় দ্বারা যারা পাথর দিয়ে থেঁতলে মেরে ওই দু’জনের মৃত্যু ঘটায়। ঐ মর্মান্তিক ঘটনা শিলং টাইমস ও সর্বভারতীয় সংবাদপত্রে এমনকি এ রাজ্যেরও বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রে ভিতরের পাতায় এবং ছোটকরে হলেও প্রকাশিত হয়েছিল। সমাজসচেতন প্রতিবাদী এবং ‘বাঙ্গালীপ্রেমী’ বঙ্গীয় ‘বুদ্ধিজীবী’ মহলের কারোর তখন কোন প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পায়নি। মনিপুরের তুলনায় উল্লিখিত জনপদটি ভৌগলিক অবস্থানে এ মহানগর থেকে অধিক দূরবর্তী নাহলেও।

কয়েকমাস আগে ওয়াকফ আইনের সংশোধনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের নামেও এ রাজ্যের বিশেষ কিছু অঞ্চলে অনুরূপ হিংসাত্মক ও মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে-প্রাণ বাঁচাতে অনেক মানুষকে আশ্রয় নিতে হয়েছিল পাশ্ববর্তী জেলায় এমনকি পাশ্ববর্তী রাজ্যেও। এবিধ বারংবার ঘটা ঘটনায় জনমনে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে উল্লেখিত আইনী সংশোধনী কার্যকর হলে আসলে কাদের স্বার্থে আঘাত লাগে?কাদের মদতে এক বিশেষগোষ্ঠীর একাংশ এমন হিংস্র হয়ে ভাঙচুর লুঠতরাজ করে সরকারি সম্পত্তি বিনষ্ট করে বাড়িতে ঢুকে নিরীহ মানুষকে হনন করে এ রাজ্যের সমাজ পরিসরে এক সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে অপচেষ্টা করে? দুর্ভাগ্যের যে এমন পরিস্থিতিতেও এ রাজ্যের বৌদ্ধিক মহল হয় আশ্চর্যজনকভাবে প্রতিক্রিয়াহীন, না হয় একাংশ আবার রাজনৈতিক মতলববাজদের সঙ্গত করতে আইনের কোন সংশোধনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে দোষারোপ করতেই অত্যুতসাহী হয়ে পড়েন। নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থে এঁদের এ ভুমিকা যে রাজ্যের ও রাজ্যবাসীর-বাঙ্গালী সমাজের পক্ষে ক্ষতিকর হচ্ছে তা অনুধ্যানে এঁরা অনীহ।

এখন যেমন অপপ্রচার চলছে এস আই আর কি লাভ হবে? তরজা চলছে কার আমলে অনুপ্রবেশ ঘটেছিল-কোন সরকার কোন প্রশাসন দায়ী এর জন্য ইত্যাদি। ভীতিপ্রদর্শন চলেছিল এস আই আর হলে সবার সর্বনাশ হয়ে যাবে আসলে উদ্দেশ্য অবান্তর ও অপ্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গ উত্থাপন করে তরজার পুরো বিষয়টি গুলিয়ে ও চাপ দিয়ে এস আই আর সুষ্ঠ রূপায়নে বিঘ্ন সৃষ্টি করা। ফলত অনেকক্ষেত্রে সাধারনমানুষ এই অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে দিশেহারা।

হয়ত এই ধরনের ‘বুদ্ধিজীবী’দের আচরণ লক্ষ্য করেই ফরাসী দার্শনিক জুলিয়েন বেন্দা তাঁর পুস্তিকায় ‘বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা বিশ্বাসঘাতকতা’কথাটি উল্লেখ করেছিলেন। রবি ঠাকুরও তো বলেছেন- শিল্পী সাহিত্যিকের মনকে হতে হবে ব্যাপ্ত-কেবল নিজেরটুকু নিয়ে থাকা বা নিজের স্বার্থভাবনায় নিমজ্জিত থাকা নয়। কিতু রূঢ় বাস্তবে, আপন স্বার্থে লক্ষ্যে অযাচিত আত্মসমর্পন আত্মবিপননও আজ অস্বাভাবিক নয়। বধ্যভূমিতে গুলিতে হাত দীর্ণ হলেও ‘বলেছিলুম কিনা আমার হাত শিকলে বাধাঁ থাকবে না’ (কবির মৃত্যু) কবির এ উক্তি চলতি সময়ে যেন বড় অবাস্তব ঠেকে যখন সততা বিশেষ গুণ নয় বা সৎ নাহওয়া লজ্জার নয়।

রাজ্যে ‘পরিবর্তনে’র পর বুদ্ধিজীবীদের একাংশ শাসকদলে যোগ দিয়ে ক্রমে দলীয় নেতা হয়েছেন হয়ত আপন ভবিষ্যতের হিসেব কষেই। কিন্তু বাকীরা? মতাদর্শ বা অন্য কোন কারণেই হোক বাছাই প্রতিবাদে সক্রিয় তাঁদের ভুমিকাও কি সমালোচনার উর্ধে? সমাজমনষ্ক নাগরিক হিসেবে গণতান্ত্রিক অধিকারে তিলোত্তমা মজুমদার তাঁর নিজস্ব অনুভব স্পষ্ট ও নির্ভীকভাবে ব্যক্ত করে কুরুচিকর আক্রমনের শিকার। অথচ লালকেল্লার সামনের বিস্ফোরণ ও ফরিদাবাদে বিপুল পরিমান উদ্ধারের ঘটনাসহ দেশে বিভিন্ন জঙ্গী কার্যকলাপে অনুপ্রবেশকারী জঙ্গীদের সাথে দেশের অভ্যন্তরের যোগসাজশের যে নীলনকশা প্রকাশ পায় বারবার, তাতে তিলোত্তমা মজুমদারের বক্তব্যে ব্যক্ত আশঙ্কাই যে সঠিক তা আরেকবার প্রমাণিত। তবু ‘সরব’ বুদ্ধিজীবী দাবিদাররাও নীরব এখনও ।আসলে ‘সরব’ হওয়ার দাবির কৌশলী প্রয়াসেও কিন্তু অনুক্ত রয়ে যায় মাঝেমধ্যে ‘সরব’ হওয়ার/না হওয়ার হিসেবটি।

উল্লেখ্য, এঁরা অনেকেই হয়ত অন্য এক সমীকরণে সচেতনভাবেই বিস্মৃত হন এক বিশেষ সাম্প্রদায়িক শক্তিকে তুষ্ট করতেই এরাজ্য থেকে রাতারাতি বিতাড়িত সাহিত্যিকা তসলিমা নাসরিন আজও এ রাজ্যে ব্রাত্য। তখনও হাতে গোনা বিশিষ্ট কয়েকজন মাত্র এর বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেছিলেন জনান্তিকে এবং এক বিবৃতি দিয়ে। সেই সময়েও অনেকে ভাবতেন ‘কি দরকার ঝামেলায় গিয়ে’।হেতু অননুমেয় নয়।
প্রসঙ্গত যে নোম চমস্কির বক্তব্য আজ প্রায়শ উদ্ধৃত হয় বিশেষত ‘বামপন্থা’র অনুগামীদের দ্বারা দিশার সন্ধানে,তিনি যে বৌদ্ধিক মহলে বহুল-আলোচিত তা তাঁর সত্য বলার সাহস ও সদিচ্ছার জন্যই। তাঁর এই সাহসকে কেউ দুঃসাহসও ভেবে এড়িয়ে যেতে পারেন নিজের অবস্থান গোপন রাখতে আপন ভবিষ্যত সুরক্ষায়। তবে মতাদর্শের আবিলতায় আচ্ছন্ন দৃষ্টিতে সুবিধাবাদী আখ্যান নির্মাণ গণতন্ত্রের পক্ষে স্বাস্থ্যকর হতে পারে না।

Advertisement