• facebook
  • twitter
Saturday, 13 December, 2025

বাড়ছে ঘৃণাভাষণ

রিপোর্টে হিন্দুদের নানা ধর্মীয় উৎসবকে কিভাবে ঘৃণা ছড়ানোর ঘটনায় ব্যবহার করা হয়েছে তার উল্লেখ আছে। যেমন গণেশ চতুর্থী, নবরাত্রি, রামনবমী, হোলি ইত্যাদি।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

মোদী সরকার তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর দেশে ঘৃণা সংক্রান্ত অপরাধ বেড়েই চলেছে। ক্ষমতার এক বছরেই দেখা গিয়েছিল ঘৃণা ভাষণ ও সেই ঘৃণা ছড়িয়ে হামলা এবং হত্যার মতো অপরাধের ঘটনা বাড়ছে। সম্প্রতি অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশান অব সিভিল রাইটস (এপিসিআর) তার প্রকাশিত রিপোর্টে একথা জানিয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলের চড়া সাম্প্রদায়িক সুর বেধেই সংখ্যালঘু মুসলিম, খ্রিস্টান, দলিত, আদিবাসীদের উপর চলেছে ঘৃণা সংক্রান্ত একের পর এক অপরাধের ঘটনা। ঘৃণা বিদ্বেষের হামলায় এ বছরে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন ২৫ জন। অনেকে জখম হয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘৃণা রাজনীতিতে বেশি ফয়দা তুলেছে শাসক বিজেপি দল। দেশের ঘৃণা সংক্রান্ত অপরাধের রিপোর্ট মোদী সরকারের তৃতীয় দফার প্রথম বছর শিরোনামে প্রকাশ করেছে এপিসিআর। তাতে জানানো হয়েছে, মোদী সরকারের ২০২৪ সালের ৭ জুন থেকে চলতি বছরের ৭ জুন অবধি এক বছর সময়ে দেশে ঘৃণা-হিংসার রাজনীতি কিভাবে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়েছে তা তুলে ধরা হয়েছে রিপোর্টে, যা খুবই উদ্বেগজনক বলে মনে করা হচ্ছে।

রিপোর্টে নির্দিষ্টবাবে ঘৃণা প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সক্রিয় ভূমিকার কথা বলা হয়েছে। ঘৃণা প্রচার নিয়ে সমীক্ষায় দেখা গেছে এতে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের ঘৃণা ছড়ানোর উদ্যোগ বেশি। এ প্রসঙ্গে ২০২৪ সালে মানবাধিকার ওয়াচের রিপোর্টের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এপিসিআর রিপোর্টে। মোদীর নির্বাচনী প্রচার সব সময়ে ছিল ঘৃণা ভাষণে ভরা। মোদী এবং বিজেপি শীর্ষ নেতাদের সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক উসকানি ছিল ভাষণের মূল বিষয়। গোটা নির্বাচন পর্বে মোদীর ভাষণে ইসলাম ফোবিয়ার উসকানিমূলক মন্তব্য ছিল ১১০টি। দেশের প্রধানমন্ত্রী নিজেই যেখানে ঘৃণা প্ররোচনা দিয়ে ভোটের প্রচার চালান সেখানে দলের একেবারে নিচুস্তরের প্রচারেও বিজেপি নেতাদের বেশ আগ্রহ লক্ষ্য করা গিয়েছে।

Advertisement

রাষ্ট্রসঙ্ঘ সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে যে ঘৃণা প্রচারকে অপরাধ বলে জানিয়েছে সেই জাতীয় ঘৃণা সংক্রান্ত অপরাধ দেশে বেড়ে চলেছে বলে জানাচ্ছে রিপোর্ট। তাতে বলা হয়েছে, দেশে এক বছরে ৯৪৭টি ঘৃণা ছাড়ানো অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ঘৃণা ভাষণের সংখ্যা হলো ৩৪৮টি এবং ৬০২টি হলো ঘৃণা ছড়িয়ে হামলা চালানোর মতো অপরাধের ঘটনা। এই অপরাধের মধ্যে ১৭৩টি হলো মুসলিমদের উপুর নৃশংস হামলা চালানোর ঘটনা। এই জাতীয় অপরাধের ঘটনায় বিভিন্ন সময়ে ২৫ জন খুন হন। তারা সকলেই মুসলিম। এদিকে ঘৃণা ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মোদী থেকে বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীরা, সাংসদ ও বিধায়করা এগিয়ে আছেন। তারা সকলে ১৭৮ টি ঘৃণা ভাষণ দিয়েছেন এক বছরে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী মোদী দিয়েছেন ৫টি, বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীরা দিয়েছেন ৬৩টি, বিজেপি সাংসদ ও নেতারা দিয়েছেন ৭১টি ভাষণ। এছাড়া ঘৃণা প্রচারের সঙ্গী হলো আরএসএস ও হিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন সংগঠন।

Advertisement

রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, শুধু লোকসভা-বিধানসভা নয়, বিভিন্ন পুরসভা, সমবায় ও আঞ্চলিক নির্বাচনেও ঘৃণাকে হাতিয়ার করে ভোটের প্রচার চালায় বিজেপি। গত এক বছরে এইভাবে হিন্দু ভোট সংহত করে নিজের পক্ষে টানতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মহারাষ্ট্রে বিজেপি জোটের শরিক নেতা মন্ত্রী নীতীশ রানের ভাষণ। রাণে তাঁর ভাষণে বলেছেন, এবারে মসজিদে ঢুকবো আর এক এক করে মুসলিমদের মারাবো। এই ঘৃণা প্রচার ছিল মহারাষ্ট্রে বিজেপির প্রচারের মূল সুর।
মোদী সরকারের পরোক্ষ সমর্থন থাকায় দেশে ঘৃণা প্রচার এবং এজাতীয় অপরাধের ঘটনা বেড়ে চলেছে। ২০২৪ সালের অক্টোবরে দেশে ঘৃণা সংক্রান্ত হামলার অপরাধের ঘটনা ছিল ৮০টি। চলতি বছরে এপ্রিলে সেই অপরাধের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯৬টি। সামনে নির্বাচন চলে আসায় বিহারে সাম্প্রদায়িক ঘৃণা প্রচার বেড়ে চলেছে।

রিপোর্টে হিন্দুদের নানা ধর্মীয় উৎসবকে কিভাবে ঘৃণা ছড়ানোর ঘটনায় ব্যবহার করা হয়েছে তার উল্লেখ আছে। যেমন গণেশ চতুর্থী, নবরাত্রি, রামনবমী, হোলি ইত্যাদি। এইসব উৎসবকে কেন্দ্র করে নানা হামলা, নানা অপরাধের ঘটনা ঘটানো হয়। তা নিয়ে ফের চলে ঘৃণা প্রচার।

Advertisement