• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

প্রতিশ্রুতির বন্যা

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিহারের নির্বাচনে বিজেপির হয়ে প্রচারে নামছেন। তিনিও বিহারবাসীর জন্য উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া থেকে পিছিয়ে থাকবেন না।

ছবি: এএনআই

ভোট বলে কথা। যে রাজ্যের বিধানসভার ভোট, সে রাজ্যে ভোটের ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন দলের নেতা-নেত্রীরা জেগে ওঠেন। হয়তো সাংসদ ও বিধায়করা নির্বাচিত হওয়ার পর একবার কি দু’বার সে কেন্দ্রে গিয়ে মানুষের বিভিন্ন সমস্যার কথা জেনেছেন— তা মেটানোর আশ্বাসও দিয়েছেন। ওই শেষ— তারপর আর তাঁরা কেন্দ্রে যাননি। মানুষের যে সমস্যাদির কথা জেনে এসেছিলেন তার সমাধানও করেননি। কিন্তু পাঁচ বছর পরে আবার ভোট এলে, তাঁরা সেই কেন্দ্রের ভোটারদের সামনে গিয়ে জোড়হাত করে দাঁড়ান। দাবি— ভোটটা যেন পাই। শাসক দল ও বিরোধী দলগুলির প্রার্থীরা ওই একই কৌশল অবলম্বন করে ভোটের ময়দানে গিয়ে দাঁড়ান। ভোটের জন্য অনেক কিছু ত্যাগ করা যায়। ভোট হলে মানুষের কথা মনে পরে, যাঁরা ভোট দিয়ে তাঁদের নির্বাচিত করেছিলেন। তখন মনে পড়ে অনেক জনহিতকর কাজের আশ্বাস দিয়েছিল, তার কিছুই পূরণ হয়নি— বা পূরণ করার চেষ্টাও করেননি। মানুষের নানাবিধ সমস্যা, কেন্দ্রের উন্নয়নের কথা মনে করে, ভুল স্বীকার করে ভোট চাইতে আবার তাঁরা মানুষের কাছে যান। তাই মানুষের সমস্যা কিন্তু থেকেই যায়— থেকে যায় সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের কোনও উন্নয়ন যে হয়নি, বা করতে পারেননি তার কথা।

এই যেমন এখন ভোটের বাজনা বাজছে বিহারে। শাসক দল এবং বিরোধী দলের প্রার্থীরা এখন কোমর বেঁধে ভোটের আসরে নেমেছেন। প্রচার এখন তুঙ্গে। বিজেপি এখানে শাসক দলের শরিক— সুতরাং ক্ষমতায়। অপর শাসক দল নীতীশ কুমারের, যিনি বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধী দল, লালুপ্রসাদ যাদবের আরজেডি। সুতরাং বিহারে ক্ষমতায় আসার জন্য আরজেডি উঠেপড়ে লেগেছে। পিতার আশীর্বাদকে মাথায় নিয়ে পুত্র তেজস্বী যাদব এবার মুখ্যমন্ত্রী পদের প্রার্থী। বিহার এখন বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির বন্যায় ভাসছে। প্রতিশ্রুতিতে পিছিয়ে নেই তেজস্বী যাদবও। তিনি বলেছেন আরজেডি ক্ষমতায় এলে বিহার হবে দেশের মধ্যে একটি আদর্শ রাজ্য—বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন করে বিহারকে সেই লক্ষ্যে পৌঁছে দেবেন তিনি। তেজস্বী যাদব মুখ্যমন্ত্রী পদের প্রার্থী নিয়ে কংগ্রেসের প্রথমে আপত্তি ছিল, কিন্তু সে সমস্যা মিটে গেছে। বিরোধী সব দলই তেজস্বী যাদব মুখ্যমন্ত্রী হবেন দল জিতলে, তা নিয়ে কারওর আপত্তি নেই। সুতরাং তেজস্বী যাদব বলেছেন, বিহার উন্নয়ন সংক্রান্ত অনেক ব্যাপারে পিছিয়ে আছে, তাই তিনি ক্ষমতা পেলে রাজ্যের সেই সব সমস্যার সমাধান করবেন। তেজস্বী যাদব প্রচুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিহারের উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়ে। ক্ষমতায় আসীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি কালবিলম্ব না করে সেই সব সমস্যার সমাধান কল্পে মন দেবেন। বিহারবাসীকে আশ্বাস দিয়েছেন।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিহারের নির্বাচনে বিজেপির হয়ে প্রচারে নামছেন। তিনিও বিহারবাসীর জন্য উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া থেকে পিছিয়ে থাকবেন না। বিহার সরকারকে ঢেলে আর্থিক সাহায্য করেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। এবার নির্বাচনের প্রচারে তিনি সেই সব কথা জনসাধারণের কাছে তুলে ধরবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রাজ্যগুলির উন্নতি হলে, কেন্দ্রও শক্তিশালী হবে। তিনি স্বচ্ছ ভারত গড়ার যে পরিকল্পনা নিয়েছেন, তা বাস্তবায়িত হবে তখনই, যখন দেশের রাজ্যগুলির সার্বিক উন্নতি হয়। এবার বিহারের নির্বাচনে দেখা যাবে বিরোধী জোট কী ফলাফল করে। বিজেপি ও নীতীশ কুমারের দলও ক্ষমতায় আসীন থাকার জন্য সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় জন সমাগম হয় বেশি। সুতরাং তিনি সেই সুযোগ নিয়ে বিহারের উন্নতির জন্য ঢালাও অর্থের প্রতিশ্রুতি দেবেন। তেজস্বী যাদব তার সমালোচনা করেন।

Advertisement

বছর কয়েক আগেও রক্তপাতহীন বিহারের নির্বাচন হত না। প্রচার কালে যে সংঘর্ষ হত, তাতে অনেক মানুষের জীবনহানি হত। বিহারের নির্বাচনের নাম শুনলেই মানুষ আতঙ্কে কাঁপত। কিন্তু বিহারে সে দিন আর নেই। বিহারের গত নির্বাচন হয়েছে পরিপূর্ণ এবং সুষ্ঠুভাবে। রক্ত ঝরেনি। জীবনহানি হয়নি। নির্বাচনে মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেননি। আশা করা যায় বিহারের এবারের ভোটও ভালোভাবেই হবে।

Advertisement