ডবল ইঞ্জিন সরকারের চূড়ান্ত ব্যর্থতা আবার ধরা পড়ল। নিেজদের কৃষক দরদী বলে দাবি করা বিজেপির মুখোশ ফের খুলে গেল। মহারাষ্ট্রে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি থেকে মার্চ) সেখানে আত্মহত্যা করেছেন ৭৬৭ জন কৃষক। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ঢাকঢোল পিটিয়ে ‘কিষাণ নিধি সম্মান’ প্রকল্প চালু করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু বাস্তবে তা যে কতটা আন্তসার শূন্য এবার তার হাতেনাতে প্রমাণ মিলল বিজেপি শাসিত মহারাষ্ট্রে। প্রকাশ্যে এলো রাজ্যটিতে কৃষকদের মর্মান্তিক হাল। পরিসংখ্যান বলছে, এ বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে ঋণের দায়ে ৭৬৭ জন কৃষক মহারাষ্ট্রে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে। শুধু তাই নয়, ২০০ কৃষকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতেও অস্বীকার করেছে মহারাষ্ট্রের দেবেন্দ্র ফড়নবিসের সরকার।
মহারাষ্ট্র বিধানসভার অধিবেশন চলাকালীণ এনডিএ সরকারের কাছে রাজ্যের কৃষক আত্মহত্যা সংক্রান্ত তথ্য চেয়েছিল বিরোধী কংগ্রেস। দেনার দায় থেকে ফসলের সঠিক দাম না পাওয়া ইত্যাদি নানা কারণ রয়েছে এই আত্মহননের নেপথ্যে। বছরের শুরু থেকে কৃষক আত্মহত্যার ঘটনায় শীর্ষে দেখা গিয়েছে বিজেপি শাসিত মহারাষ্ট্র রাজ্যকে। এই শীর্ষে বিরোধী বিধায়করা প্রশ্ন তোলেন রাজ্য বিধানসভায়। এর পরই একটি রিপোর্ট সামনে আনে ফড়নবিস সরকার। যেখানে বলা হয়েছে, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত মহারাষ্ট্রে আত্মঘাতী হয়েছে ৭৬৭ জন কৃষক। আত্মঘাতী কৃষকদের মধ্যে বেশির ভাগই বিদর্ভ অঞ্চলের বাসিন্দা। সেই রিপোর্টেই স্বীকার করা হয়, মৃত কৃষকদের মধ্যে মাত্র ৩৭৬ জনের পরিবারকে ১ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে রাজ্যের বিজেপি সরকার। রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এখনও ১৯৪ টি আত্মহত্যার ঘটনার ক্ষেত্রে তথ্য যাচাই চলছে।
সব থেকে বড় কথা, চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে সরকার। আর তাতেই এই করুণ দৃশ্য।
আগামী যে মাসগুলির তথ্য এখনও প্রকাশ করা হয়নি, স্বাভাবিকভাবেই তা নিয়ে আশঙ্কা বাড়ছে।
Advertisement
বিরোধীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে মৃত কৃষকদের পরিবারকে অর্থ সাহায্য করছে না মহারাষ্ট্রের বিজেপি সরকার। অবশ্য বিরোধীদের এই দাবি মানতে চায়নি সরকার। তাদের সফাই, আত্মহত্যার ঘটনায় রাশ টানতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় সরকারের কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্পে কৃষকদের টাকা দেওয়ার কথা বলা হলেও, কৃষকদের অভিযোগ, এই প্রকল্প খাতায় কলমে থেকে গিয়েছে, বাস্তবে তা পাওয়া যায় না।
Advertisement
প্রসঙ্গত, মহারাষ্ট্রে ২০২৩ সালে কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছিল ২,৮৫১টি। ২০২৪ সালে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ২,৬৩৫টিতে। এরপরেও যে কোনও হুঁশ ফেরেনি দেবেন্দ্র ফড়নবিস সরকারের তা ফের স্পষ্ট মাত্র তিন মাসে ৭৬৭ কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনায়।
খোলা বাজারে ব্যবসায়ী হাঙরদের কবল থেকে খাদ্য উৎপাদক কৃষকদের বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে বহু লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে চালু হয়েছে ফসলের এমএসপি তথ্য ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের ব্যবস্থা। প্রতি বছর নানাদিক বিবেচনা করে সরকার কৃষকদের উৎপাদিত বিভিন্ন ফসলের এমএসপি ঘোষণা করে। এই ঘোষিত মূল্যে সরকার যেমন কৃষকদের কাছ থেকে সরাসারি ফসল কিনে নেয় তেমনই ব্যবসায়ীদের সেই দামে কৃষকদের কাছ থেকে ফসল কিনতে নির্দেশ দেয়। অবশ্য বাস্তবে সেটা সর্বক্ষেত্রে হয় না। কর্পোরেট নিয়ন্ত্রিত খোলা বাজার এমনভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় যে সেখানে ফসলের দাম এমএসপি থেকে অনেক কম। ধারদেনা করে চাষ করার পর ফসল উঠলে তা বেচে দেনা শোধ করার কথা। তাই ফসল বিক্রির তাড়া থাকে কৃষকদের। ব্যবসায়ীরা দাম কম রেখে কৃষকদের চাপ দিয়ে কম লাভে পণ্য বিক্রিতে বাধ্য করে। সরকারও কৃষকদের ন্যূনতম দামে ফসল বিক্রির কোনও ব্যবস্থা রাখেনি। বাস্তবে চাষের খরচ বৃদ্ধির সঙ্গে এমএসপি বৃদ্ধির কোনও ভারসাম্য রক্ষা করা হয়নি। ফলে কৃষকদের লোকসানের খরচ আরও বাড়তে থাকে। দেনার দায়ে মানসিক বিপর্যস্ত হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেয় কৃষকরা।
এক মহারাষ্ট্রেই শুধু চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ৭৬৭ জন কৃষকের আত্মহত্যার কথা বলা হয়েছে। সারা দেশে সংখ্যাটা অবশ্যই কয়েক হাজার ছাড়িয়ে যাবে। দেনার পাশাপাশি খরা, বন্যায় ফসল নষ্ট হলে কেন্দ্রের যৎসামান্য ক্ষতিপূরণ পেতে মাসের পর মাস চলে যায়। তখনই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় কৃষকরা। কৃষক স্বার্থবিরোধী বিজেপি সরকারকে উৎখাতের মধ্য দিয়েই এই সর্বনাশা পথ বন্ধ করতে হবে।
Advertisement



