বাংলাদেশ থেকে শান্তি নির্বাসিত। এর মূলে বর্তমান তদারকি সরকারের চরম ব্যর্থতা। এই তদারকি সরকারের নেতৃত্বে আছেন প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে মহম্মদ ইউনূস খান, যিনি শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। আর এই নোবেল জয়ীর ১০০ দিনের বাংলাদেশ শাসনে তিনি শান্তি তো ফিরিয়ে আনতে পারলেনই না, উল্টো শান্তিশৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়ে এই দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভূক্ত মানুষদের দুর্দিনে ফেলে দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে বাধ্য করেছেন। শান্তির জন্য নোবেল জয়ী এই মানুষটি সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে শুধ্য ব্যর্থই হলেন না, ভারতের এই নিকটতম প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্কে একটি বিরাট ফাটল ধরাতে তিনি এখন একটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। শান্তির বদলে তিনি অশান্তি ছড়াচ্ছেন সারা বাংলাদেশে। সেই সঙ্গে ভারত যে বাংলাদেশ স্বাধীন করতে পাকিস্তানের সঙ্গে লড়াই করে, বেশ কয়েক হাজার ভারতীয় সেনার জীবন উৎসর্গের বিনিময়ে এই দেশকে পাকিস্তানের শোষণ ও পীড়নের অবসান ঘটালেন— সেই ইতিহাস বাংলাদেশের বর্তমান প্রজন্মকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন এই নোবেলজয়ী। এটা কি তাঁর শান্তির কাজ? সংখ্যালঘুদের ওপর যে ব্যাপক অত্যাচার চলছে, ভারত সরকার তার প্রতিবাদ করলে, বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক তার উত্তরে যা বলছে, তা বিশেষ উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। বলা হয়েছে, এই প্রতিবাদ উভয় দেশের মধ্যে যে সুসম্পর্ক বিরাজমান, তা নষ্ট করবে।
সম্প্রতি ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের জন্য সারা বাংলাদেশ জুড়ে চলছে প্রতিবদের ঢেউ। তাঁর অপরাধ? তিনি রংপুরে চার-পাঁচ লক্ষ সংখ্যালঘুদের সমাবেশে বক্তৃতায় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন! বলেছিলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে যে অত্যাচার চলছে, তাদের ঘরবাড়ি অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, মন্দির অপবিত্র করা হয়েছে, তা অবিলম্বে বন্ধ হোক। কারণ, সংখ্যালঘুরাও এই দেশের নাগরিক, তাঁদের নিজ নিজ ধর্ম যাপনের অধিকার রয়েছে। চট্টগ্রামের সংশোধনগারে এই সন্ন্যাসীকে অন্যান্য অপরাধীর সঙ্গে রাখা হয়েছে।
তাঁর মুক্তির দাবিতে সারা বাংলাদেশ যেমন উত্তাল, দাবি তাঁর নিঃশর্ত মুক্তি। তার ঢেউ এসে পড়েছে কলকাতাতেও। এখানেও বিভিন্ন সংগঠন বিক্ষোভে সামিল হয়েছে কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের অফিসের সামনে। সংগঠনের প্রতিনিধিরা ডেপুটি হাইকমিশনারের সঙ্গে দেখা করে তাঁর হাতে তাঁদের দাবিপত্র তুলে দেয়। তাতে বলা হয়েছে, অবিলম্বে চিন্ময় দাসের মুক্তি এবং বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর যে অত্যাচার চলছে, তা বন্ধ করা। কলকাতায় ইসকনের সহসভাপতি রাধারমণ দাস বলেছেন, সন্ন্যাসী চিন্ময় দাসকে জেলে অন্যান্য দুষ্কৃতীদের সঙ্গে রাখা হয়েছে। ফলে তাঁর জীবন বিপন্ন হতে পারে। তাঁর অভিযোগ, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর যে আক্রমণ, যেভাবে মন্দির অপবিত্র বা ধ্বংস করা হচ্ছে, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। ইসকন একটি অ-রাজনৈতিক সংগঠন, মানুষের সেবায় নিয়োজিত।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশের ঘটনাবলীতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। যে কোনও ধর্মের ওপর আঘাত নিন্দাজনক ও গর্হিত। বাংলাদেশ পররাজ্য— এ ব্যপারে যা বলার কেন্দ্রীয় সরকার বলবে। এবং কেন্দ্রীয় সরকারের যা বলে বা করে তার সঙ্গে তাঁরা সহমত পোষণ করে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের সঙ্গে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর যে লাগাতার আক্রমণ চলছে, তা নিয়ে আলোচনা করেন। সাউথ ব্লক একটি বিবৃতিতে বাংলাদেশের তদারকি সরকারকে অবিলম্বে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার বন্ধ করার আর্জি জানায়। দেখতে হবে দুই দেশের মধ্যে যে সুসম্পর্ক বিরাজমান তার আর কোনও আঘাত না পড়ে। বাংলাদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানের সময় ভারতে চলে আসেন তাঁর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায়। তিনি এখন ভারতেই অবস্থান করছেন। এক বিবৃতিতে হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে এখন যা চলছে তা নিন্দনীয়। তিনিও সন্ন্যাসীর মুক্তির দাবি করেন। তিনি বলেন, সন্ন্যাসীকে অত্যন্ত অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাছাড়া ইসকন বাংলাদেশে নিষিদ্ধ নয়।
ইতিমধ্যে ইসকনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার জন্য ডাকার হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের হয়। বিচারপতি তাঁর রায়ে বলেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব। বিচারপতি এই ধর্মীয় সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার দাবি খারিজ করে দেন। কলকাতায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ বন্ধ করার দাবি জানায়। বিজেপির তরফে একটি মিছিল বাংলাদেশ হাই কমিসনের সামনে বিক্ষোভ দেখায়।
সর্বশেষ খবরে জানা যায়, ভারত সরকার একটি বার্তায় বলেছে, সন্ন্যাসীকে গ্রেপ্তারের পর বাংলাদেশে যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে এবহং হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর যে পীড়ন, অত্যাচার চলছে, তার জন্য ভারতের শীর্ষ স্তর থেকেই সতর্ক করা হচ্ছে বর্তমান তদারকি সরকারের প্রধান ইউনূস খানকে। তারপরও যদি আগুন না নেভে, তা হলে কী হবে তা নিয়ে এখনই মুখ খুলতে চাইছে না প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। তবে অর্থনৈতিকবাবে ভারতের ওপর যথেষ্ট নির্ভরশীল বাংলাদেশ। ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি ভারত-বাংলাদেশ বিদেশ মন্ত্রকের সচিব পর্যায়ের বৈঠক হওয়ার কথা। এ ব্যাপারে দিল্লির সাউথ ব্লক বলেছে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, তার ওপর নির্ভর করছে এই সচিব পর্যায়ের বৈঠক।