• facebook
  • twitter
Thursday, 14 August, 2025

প্রত্যাঘাতের পূর্ণ স্বাধীনতা

ভারতের কাছে পাকিস্তানকে পহেলগাম কাণ্ডের প্রত্যুত্তর দেওয়া ছাড়া বিকল্প পথ খোলা নেই। ভারত সিন্ধু নদীর জল ছাড়া বন্ধ করে দিয়েছে।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

পহেলগামের বদলা নেওয়ার পথ এখন উন্মুক্ত। কিন্তু পহেলগামে কাশ্মীর উপত্যকায় হিন্দু পর্যটকদের গুলি করে হত্যা করার পিছনে থাকা পাকিস্তানকে সমুচিত শিক্ষা দেওয়া হবে তা ঠিক করার পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হল ভারতীয় সেনাবাহিনীকে। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে প্রতিরক্ষামন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর স্থল, জল এবং বায়ু সেনাপ্রধানদের সঙ্গে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনান্তে প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় সেনাবাহিনীকে এই ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দেন পাকিস্তানকে সমুচিত শিক্ষা দিতে। ভারতের ১৪০ কোটি দেশবাসী এখন তাকিয়ে আছে কীভাবে এই প্রত্যাঘাত সেনাবাহিনী করবে তার দিকে।

পহেলগামের ঘটনার পর গত তিন-চারদিন ধরে ভারতের সেনাবাহিনীর তিন শাখা এই প্রত্যুত্তর দেওয়ার জন্য প্রস্তুতিপর্ব শুরু করেছে। এই মহড়ায় অংশ নিয়েছে স্থল, জল ও বায়ু বাহিনী। যুদ্ধজাহাজ বিক্রম থেকে বিধ্বংসী গোলা বর্ষণ করা হয়েছে। রাজস্থানের মরু অঞ্চলে ট্যাঙ্ক লড়াইয়ের মহড়া দিয়েছে, যুদ্ধ বিমানগুলি আকাশে চক্কর দিয়েছে এবং স্থলবাহিনীর সেনারা দক্ষিণ কাশ্মীরের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিদের অনেকগুলি বাড়ি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে। সুতরাং ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রত্যাঘাতের প্রস্তুতি পর্ব শেষ করেছে। এখন সেনাবাহিনী ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ পেয়ে কীভাবে পাকিস্তানকে শিক্ষা দেবে, প্রশ্ন সেটাই। ভারতের সেনাবাহিনীর কাছে তিনটি অপশন রয়েছে। তা হল ভারতকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘ফুলস্কেল ওয়ারে’ যাবে, নাকি ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ করবে— নাকি প্রাণহানি কম রাখতে সীমান্ত বরাবর সেনা সমাবেশ করে সীমান্ত থেকেই জঙ্গিদের নিকেশ করবে, নাকি কাশ্মীর সীমান্তে চিরুনি তল্লাশি করে জঙ্গিদের আবাসস্থল খুঁজে বের করে তা ধ্বংস করে দেবে। কোনটা সঠিক পাকিস্তানকে জবাব দেওয়ার জন্য, তা ঠিক করবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধানরা। পাকিস্তান সেনাবাহিনীও ভারতের সঙ্গে লড়তে তাদের মহড়া শেষ করেছে। সুতরাং যুদ্ধের জন্য উভয় দেশ প্রস্তুত।

ভারতের অনেকগুলি বিষয় চিন্তা করারও আছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিছুদিন আগে বলেছিলেন ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই আমাদের বন্ধু। অপরদিকে ভারত পহেলগামের পর্যটক হত্যায় পাকিস্তানকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য তার সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত করার কথা শুনে চিন বলেছে, বেজিং এই কঠিন সময়ে পাকিস্তানের পাশে থাকবে। তা জেনে আমেরিকা তার অবস্থান পাল্টে বলেছে, তারা ভারতের পাশে আছে। তবে চিন তার সৈন্য পাঠিয়ে পাকিস্তানকে সাহায্য করবে না এটা ঠিক। কিন্তু সমরাস্ত্র পাঠাবে, দেবে আর্থিক সাহায্যও। চিন বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে ভারতকে কিছু বেগ দিতে পারে। চিন ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে বাংলাদেশে তারা আধুনিক মানের একটি হাসপাতাল তৈরি করে দেবে, যাতে জটিল রোগে আক্রান্ত বাংলাদেশীদের ভারতে আসতে না হয় চিকিৎসার জন্য। তবে ভারত বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদের কথা তুলে সম্প্রতি পহেলগামের পর্যটক হত্যার পিছনে পাকিস্তানের হাত আছে, তা জানিয়ে অন্য দেশগুলির সহানুভূতি আদায় করেছে।

ভারতের কাছে পাকিস্তানকে পহেলগাম কাণ্ডের প্রত্যুত্তর দেওয়া ছাড়া বিকল্প পথ খোলা নেই। ভারত সিন্ধু নদীর জল ছাড়া বন্ধ করে দিয়েছে। সুতরাং পাকিস্তান তার অঙ্গ রাজ্যে ‘ওয়াটার এমার্জেন্সি’ জারি করেছে। ভারতে বসবাসকারী সমস্ত পাকিস্তানি নাগরিক তাঁদের দশে ফিরে গেছেন। অপরদিকে পাকিস্তান থেকেও সকল ভারতীয় নাগরিক ভারতে ফিরে এসেছেন। ওয়াঘা বর্ডার পয়েন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং যুদ্ধের প্রস্তুতির সমস্ত কাজই সম্পূর্ণ করা হয়েছে। রাজনৈতিক দিক থেকে বিচার করতে গেলে দেখা যাবে পাকিস্তানকে পহেলগাম কাণ্ডের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া ছাড়া গত্যন্তর কিছু নেই। কারণ ভারতের ১৪০ কোটি দেশবাসী চাইছে ভারত পাকিস্তানকে তার অপকর্মের জন্য উচিত শিক্ষা দিক। প্রধানমন্ত্রী নিজেও পাকিস্তানের নাম না করে দু-তিনবার বলেছেন, শত্রুপক্ষকে এমন শিক্ষা দেওয়া হবে তা কেউ কল্পনা করতেও পারবে না। দেশের সব রাজনৈতিক দলের নেতারাও একসুরে পাকিস্তানকে প্রত্যাঘাত করার দাবি জানিয়েছে। পহেলগামের জঙ্গিদের বেছে বেছে হন্দু পর্যটকদের হত্যা করার পিছনে পাকিস্তানের মদত রয়েছে, এটা প্রমাণিত। তাছাড়া পাকিস্তান কাশ্মীর সীমান্তে জঙ্গিদের নাশকতামূলক কাজের জন্য অস্ত্র ও আর্থিক সাহায্য করে যাচ্ছে দীর্ঘদিন হল। এটাও কারওর অজানা নেই।

ভারতীয় সেনারা দক্ষিণ কাশ্মীরে প্রায় ডজনখানেক জঙ্গির বাড়িঘর বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে জঙ্গিরা এই দক্ষিণ কাশ্মীরে বাস করে নাশকতা চালাচ্ছে, তা জেনেও এতদিন তাদের বাড়িঘর ধ্বংস করে দেওয়া হয়নি কেন? কেন এই জঙ্গিদের এতদিন নাশকতামূলক কাজ করতে দেওয়া হল? পহেলগামে পর্যটক হত্যা নিয়ে আলোচনার জন্য সরকার যে সর্বদলীয় বৈঠক সম্প্রতি ডেকেছিল, সেই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী যোগ দেননি। বিরোধীরা তার সমালোচনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীই তো বিরোধীদের জানাবেন সরকার প্রত্যাঘ্যাত নিয়ে কী চিন্তাভাবনা করছে। সেনাবাহিনীকে পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য যে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্তারা কী ব্যবস্থা নেয় তা দেখার জন্য দেশবাসী উন্মুখ হয়ে রয়েছে।

News Hub