• facebook
  • twitter
Sunday, 20 July, 2025

যুদ্ধবিরতির জন্য অনুরোধ করিনি, দাবি পাক সেনার

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ বিরতির মধ্যেই বিস্ফোরক দাবি করেছেন পাকিস্তান সেনার মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরি।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ বিরতির মধ্যেই বিস্ফোরক দাবি করেছেন পাকিস্তান সেনার মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরি। পাকিস্তান কখনওই সংঘর্ষ বিরতির জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ করেনি বলে দাবি করেছেন তিনি। ভারতীয় সেনার বক্তব্য নস্যাত করে এই দাবি করা হয়েছে পাক সেনার তরফে। পাক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রবিবার রাতে পাকিস্তান সেনার মুখপাত্র লেফটেনান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরি এই দাবি করেন।

রবিবার ভারতীয় সেনাবাহিনী জানায়, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ শুধুই পাকিস্তানের জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে। কীভাবে পাকিস্তানের হামলার চেষ্টা ব্যর্থ করা হয়েছে, তা-ও জানিয়েছে ভারতীয় সেনা। যদিও পাকিস্তান সেনা সাংবাদিক বৈঠক করে বিপরীত তথ্য প্রকাশ করেছে। ভারতের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে দাবি করেছে, ভারতের হামলায় পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের প্রাণ গিয়েছে। তাদের আরও দাবি, পাকিস্তানি সেনার আঘাতে ভারতের কয়েকটি বায়ুসেনাঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে। যদিও ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফে এমন কিছু জানানো হয়নি।

শনিবার বিকেল পাঁচটা থেকে ভারত এবং পাকিস্তান সংঘর্ষ বিরতির কথা ঘোষণা করে। স্থল, বায়ু, জল সব ক্ষেত্রে সংঘর্ষ থেকে দুই দেশ বিরত থাকবে বলে জানানো হয়। এই আবহে ভারতের ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশন লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই রবিবার জানান, ‘পাকিস্তানের ডিজিএমও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিলেন।’ কিন্তু একদিন পার হতে না হতেই সেই বক্তব্য অস্বীকার করে পাকিস্তান

সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরি বলেন, ‘আপনারা লিখে রাখুন যে, পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির জন্য অনুরোধ করেনি। বরং এই সংঘর্ষের পরিস্থিতি পাকিস্তান শক্ত হাতে সামলেছে। ভারতকে দেওয়া হয়েছে উচিত জবাব। তীব্রতা নিয়ন্ত্রণ করে জবাব’ দেওয়া হয়েছে ।’ তবে তিনি এও জানিয়েছেন যে, পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের জায়গা থাকতে পারে না।

শনিবার যুদ্ধবিরতির ঘোষণার আগে সমাজ মাধ্যমে পোস্ট করে দুই দেশকে অভিনন্দন জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমেরিকার সংবাদমাধ্যমগুলি জানায়, কীভাবে দুই দেশের মধ্যে মধ্যস্থতা করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই আবহে জল্পনা তৈরি হয়েছে যে, যুদ্ধবিরতির জন্য কোন পক্ষ প্রথম দাবি তোলে। ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশন লেফটেনান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই রবিবার জানান, পাকিস্তানের ডিজিএমও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেই বক্তব্যই খন্ডন করেছে পাক সেনা।

পাকিস্তানের সাংবাদিক বৈঠকে ছিলেন পাক বায়ুসেনার ডিরেক্টর জেনারেল পাবলিক রিলেশন এয়ার ভাইস মার্শাল অওরঙ্গজেব আহমেদ, নৌবাহিনী অপারেশনস ডেপুটি চিফ ভাইস অ্যাডমিরাল রাজা রব নওয়াজ।

সেখানেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধরি দাবি করেছেন যে, ভারতের বায়ুসেনাঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে পাকিস্তান। তাঁর দাবি, ৬-৭ মে রাতে শুরু হয় আক্রমণ। তাতে প্রাণ গিয়েছে পাকিস্তানের সাধারণ নাগরিকের। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন মহিলা, শিশু, বৃদ্ধ।

ভারত প্রথম থেকেই জানিয়ে এসেছে, পাকিস্তানের জঙ্গিঘাঁটি নিশানা করে আক্রমণ চালিয়েছে ভারতীয় বাহিনী। ওই অভিযানে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীর মিলিয়ে মোট ৯টি জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করেছে ভারত। সূত্রের খবর, নিহত হয়েছে শতাধিক জঙ্গি। এর মধ্যে ইউসুফ আজহার, আব্দুল মালিক রাউফ এবং মুদস্‌সর আহমেদের মতো বেশ কিছু জঙ্গি রয়েছে, যাদের নাম বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে উঠে এসেছিল। নিহত জঙ্গিদের মধ্যে আইসি ৮১৪ বিমান অপহরণ অর্থাত কান্দাহার অপহরণ এবং পুলওয়ামা হামলায় জড়িত জঙ্গিও রয়েছে বলে জানিয়েছে সেনা।

পাক সেনার মুখপাত্র দাবি করেন, ‘ভারতের ছোড়া ব্রহ্মস আমরা ধ্বংস করেছি। এছাড়াও ভারতের সুরতগড়, সিরসা, আদমপুর, ভুজ, নালিয়া, ভাটিন্ডা, বারনালা, হালওয়ারা, অবন্তীপোরা, শ্রীনগর, জম্মু, মামুন, আম্বালা, উধমপুর, পাঠানকোটে বায়ুসেনাঘাঁটিতে নিশানা করা হয়েছে। সেগুলির ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে।’ পাকিস্তান এই দাবিও করেছে যে, ভারতের হানায় তাদের দেশের ৩১ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন। প্রত্যাঘাতে তারা ভারতের বেশ কয়েকটি বায়ুসেনাঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে। ১৯৭১ সালের পরে একটি অভিযানে এত আঘাত তারা হানতে পারেনি।

তবে ভারতীয় সেনার তরফে সাংবাদিক বৈঠকে জানানো হয়েছে, ‘পাকিস্তানি সেনা, পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের সঙ্গে ভারতের কোনও লড়াই নেই। ভারত লড়ছে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে।’ভারত এ-ও জানিয়েছে যে, এর সূত্রপাত করেছিল পাকিস্তানই। ৭-১০ মে-র মধ্যে ভারতীয় সেনার পাল্টা হামলায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রায় ৩৫-৪০ জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে ২৬ নিরস্ত্রকে হত্যা করে লস্করের সঙ্গী সংগঠন টিআরএফের পাঁচ জঙ্গি। মঙ্গলবার রাত থেকে পঁচিশমিনিটের অপারেশন চালিয়ে বদলা নিয়েছে ভারত। বায়ুসেনার এই অভিযানে অন্তত ১০০ জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে। এরপর ভারতের সীমান্তবর্তী জনবহুল এলাকা এবং সেনাঘাঁটিকে পাকিস্তান নিশানা করলে পালটা হামলা চালায় ভারত। পাকিস্তানের একাধিক শহরের বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়। চাপে পড়ে পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত হটলাইনে সংঘর্ষবিরতির জন্য ফোন করে ভারতের ডিজিএমওকে।