পার্বত্য চট্টগ্রাম আবার অশান্ত, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের ব্যাংক লুট

Written by SNS April 5, 2024 12:24 pm

বাসুদেব ধর: নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলার দুই উপজেলা রুমা ও থানচিতে ১৭ ঘণ্টার মধ্যে দুটি ব্যাংকের তিনটি শাখায় হামলা ও লুট করার পর আতংক তৈরি হয়েছে৷ ওরা বাংলাদেশের সরকারি খাতের বৃহত্তম ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের রুমা শাখার ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) নিজামউদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে৷ পাশাপাশি পুলিশ ও আনসারের ১৪টি আধুনিক অস্ত্র ও ৪১৫টি গুলি লুট করে৷ স্থানীয়দের মুঠোফোনও তারা ছিনিয়ে নেয়৷ ফাঁকা গুলি ছুড়ে চলে যায়৷

রুমায় সোনালী ব্যাংকের শাখায় মঙ্গলবার রাত সোয়া আটটার দিকে হামলা করলেও অস্ত্রধারীরা কোনো টাকা নিতে পারেনি৷ তবে বুধবার দুপুর একটার দিকে থানচিতে সোনালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের শাখায় হামলা করে তারা সাড়ে ১৭ লাখ টাকা নিয়ে যায়৷

কেএনএফ’র হামলার পর বান্দরবানের তিন উপজেলা রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়িতে সোনালী ব্যাংকসহ সব ব্যাংকের কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে৷ আজ বৃহস্পতিবার বান্দরবান সদরের সোনালী ব্যাংক শাখার অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক ওসমান গণি এই তথ্য জানান৷ সার্বিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ওসমান গণি জানান৷

কেএনএফ পাহাড়ের অপেক্ষাকৃত নতুন সশস্ত্র সংগঠন৷ তারা ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে তৎপরতা শুরু করে৷ পাহাড়ে তাদের আস্তানায় সমতলের নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়ার সদস্যরা সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছিল বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতিপূর্বে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল৷ সেই আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত বছর অভিযান চালিয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়া ও কেএনএফের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে৷

কেএনএফ সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমার নেতৃত্বে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা’ কমিটি গঠন করা হয় গত বছরের মে মাসে৷ ওই কমিটির সঙ্গে কেএনএফের কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে৷ সর্বশেষ আলোচনা হয় গত ৫ মার্চ৷ এরপর হামলার ঘটনা ঘটল৷

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলাকারীরা ইউনিফর্ম (নির্দিষ্ট পোশাক) পরে এসেছিল৷ তাতে কেএনএফ লেখা ছিল৷ থানচিতে ব্যাংকে ডাকাতি করার পর তারা ফাঁকা গুলি করতে করতে বেরিয়ে যায়৷
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, অস্ত্রধারীদের খুঁজে বের করতে পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দায়িত্ব পালন করছে৷ প্রয়োজনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও কুকি চিন ও অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযানে যোগ দেবে৷

বান্দরবান সদর থেকে সড়কপথে থানচির দূরত্ব প্রায় ৭৫ কিলোমিটার৷ সেখানে সাপ্তাহিক হাটবার ছিল গতকাল৷ সকালে বাজারে লোকজন বেশি ছিল৷ দুপুর হতে হতে ভিড় কমে যায়৷ হামলা হয় বেলা একটার দিকে৷ সেখানে সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকের শাখা দুটির অবস্থান পাশাপাশি৷ কাছেই থানচি থানা৷ উপজেলা পরিষদও বাজারের কাছে৷

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, অস্ত্রধারীরা আসে চার চাকার মোটরগাড়ি যা স্থানীয়ভাবে পরিচিত দুটি চাঁদের গাড়িতে৷ সংখ্যায় ছিল ৪০ জনের মতো৷ ব্যাংকের ভেতরে চার থেকে আটজন ঢুকলেও বাকিরা বাজারের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নেয়৷ এ সময় তারা ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক তৈরি করে৷

থানচি কৃষি ব্যাংকের শাখার নিরাপত্তা প্রহরী অং সা প্রু বলেন, অস্ত্রধারীদের দেখে তিনি প্রথমে ব্যাংকের দরজা বন্ধ করে দিতে উদ্যত হন৷ কিন্ত্ত অস্ত্রধারীরা তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়৷ তিনি বলেন, চার থেকে পাঁচজন অস্ত্রধারী ব্যাংকে ঢুকে সবাইকে জিম্মি করে ফেলে৷ বাইরে আরও সাত-আটজন অবস্থান করছিল৷ অল্প সময়ের মধ্যে অস্ত্রধারীরা ব্যাংকের টাকা লুট করে বেরিয়ে যায়৷

বান্দরবান শহর থেকে রুমার দূরত্ব প্রায় ৪২ কিলোমিটার৷ রুমা উপজেলা পরিষদের ২০০ গজ দূরে সোনালী ব্যাংকের রুমা শাখা৷ তার পাশে উপজেলা মসজিদ৷ আশপাশে সব উঁচু উঁচু পাহাড়৷
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে ঢোকার মুখে একটি দোতলা ভবনের নিচতলায় থাকেন সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা৷ দ্বিতীয় তলার এক পাশে সোনালী ব্যাংক রুমা শাখা৷ আরেক পাশে থাকেন ব্যাংকের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১০ জন পুলিশ সদস্য৷

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, কেএনএফ সদস্যরা হামলার আগে বিদু্যৎ উপকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়৷ এতে উপজেলা পরিষদ এলাকা বিদু্যৎ্যহীন হয়ে পড়ে৷ অস্ত্রধারীরা বান্দরবান-রুমা সড়কের উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনের অংশে দুই পাশে ব্যারিকেড দেয়৷
হামলায় কেএনএফের শতাধিক সদস্য অংশ নিয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ তাদের বেশির ভাগের পরনে ইউনিফর্ম ছিল৷ সদস্যরা কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে সোনালী ব্যাংক, স্থানীয় মসজিদ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবনের দিকে যায়৷ ইউএনওর বাসভবনে গিয়ে তারা আনসার সদস্যদের অস্ত্র কেড়ে নেয়৷

মসজিদে তখন নামাজ চলছিল৷ সেখানে ২০ জনের মতো মুসল্লি ছিলেন বলে জানিয়ে রুমা উপজেলা মসজিদের ইমাম নুরুল ইসলাম বলেন, অস্ত্রধারী ২০ থেকে ২৫ জন মসজিদে ঢুকে পড়ে৷ সেখান থেকে তারা সোনালী ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপককে নিয়ে যায়৷

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, কেএনএফ সদস্যরা পুলিশের গার্ড কমান্ডার উপসহকারী পরিদর্শক (এএসআই) মামুনুর রহমান ও কনস্টেবল তৌহিদুল ইসলামকে আহত করে দুটি লাইট মেশিনগান (এসএমজি) ও আটটি চায়নিজ রাইফেল লুট করে৷ স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানায়, কেএনএফ পুলিশের কাছ থেকে ৩৮০টি গুলিও ছিনিয়ে নিয়েছে৷

কীভাবে তৈরি হলো কেএনএফ
পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন আতঙ্কে পরিণত হয়েছে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)৷ এই ঘটনায় যে নামটি বারবার উঠে আসছে, তিনি নাথান বম, যার পুরো নাম নাথান লনচেও বম৷ বলা হচ্ছে, তিনি কেএনএফের প্রধান৷ পাহাড়ে সেনাবাহিনীর উপস্থিতির মধ্যে ব্যাংক ডাকাতির মতো এতো বড় ঘটনার নেতৃত্ব দেওয়া এই ব্যক্তি কে ? কীভাবে তার উত্থান হলো ?

জানা গেছে, বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার ২ নম্বর রুমা সদর ইউনিয়নের ইডেনপাড়ার বাসিন্দা মৃত জাওতন লনচেও এর ছেলে নাথান লনচেও বম৷ বাবা পেশায় জুমচাষী৷ মা মৃত রৌকিল বম গৃহিনী৷ ৫ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে তিনি ছোট৷ স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী, নাথান বমের পরিবার ছিল অভাবী৷ নাথান বমদের পরিবার অনেক বড়৷ পরিবারের এতো সদস্যের আহার যোগাতে নাথান বমকেও মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছিল৷ স্থানীয় সেনা ক্যাম্প, জোন ও বিগ্রেডে সাহায্যের জন্যও যেতেন৷

পরে পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) সন্ত্ত গ্রুপের পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) যোগ দেওয়ার কারণে নাথান বমের পড়াশোনার দায়িত্ব নেন সন্ত্ত লারমা৷ এরপর তার জীবন ও পরিবারের জীবনধারা পাল্টে যায়৷ পরিবারের অনেক সদস্য সরকারি চাকরি পান৷ নিজের স্ত্রী লাল সমকিম বম রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নার্স হিসেবে যোগ দেন৷ তাদের দুটি শিশু সন্তান আছে৷
পাহাড়িদের একটি পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালে নাথান বম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে আবেদন করতে পারলেও ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করতে পারেননি৷ ঘটনাচক্রে ওই বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ও বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা প্রয়াত এমাজউদ্দীন আহমেদ একবার বান্দরবন সফর করে খিয়াং, লুসাই, ম্রো, বম জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের সরাসরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রতিশ্রুতি দেন৷

আর তাই পরীক্ষায় পাশ না করতে পারলেও এমাজউদ্দিনকে প্রতিশ্রুতি স্মরণ করিয়ে পিসিপি নেতারা নাথান বমকে চারুকলা অনুষদে ভর্তি করার সুপারিশ করেন৷ তাদের চাপে নাথান বম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান৷ ছাত্রজীবনে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদে যুক্ত ছিলেন নাথান৷

১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তি চুক্তির পর সহশিল্পী নিম্মি দেওয়ানকে সঙ্গে নিয়ে খাগড়াছড়ি শহরের মহাজনপাড়া এলাকার লারমা স্কয়ারে পার্বত্য অধিকার আন্দোলনের নেতা এম এন লারমার একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করেন৷ তখন হিল আর্টিস্টস গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি৷

নাথানদের নির্মিত লারমার আবক্ষ ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করা হয় ২০০০ সালে৷ এরপর শিল্পী হিসেবে তার খ্যাতি বাড়তে থাকে৷ তিনি লেখালেখি করতে শুরু করেন৷ কুকি-চিনভুক্ত জাতিগোষ্ঠীর পরিচিতি নিয়ে ‘দ্য বমজৌ’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন৷

তখন থেকেই তিনি কুকি-চিন জাতীয়তাবাদী চিন্তার একটি বলয় তৈরির চেষ্টা করছিলেন৷ সেই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালে কুকি-চিন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএনডিও) নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন৷ ওই সংগঠনের পক্ষে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করতে চেয়েছিলেন নাথান৷ মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তার আর নির্বাচন করা হয়নি৷

নাথানের গড়ে তোলা কেএনডিও পরে নাম বদলে হয় কুকি-চিন ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার্স (কেএনভি)৷ আরও পরে ২০১৯ সালের দিকে হয়েছে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)৷ এর সশস্ত্র উইংয়ের নাম দেওয়া হয় কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ)৷

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, বম পার্টি নামেও পরিচিত কেএনএফের সদস্য মূলত বমরাই৷ এটি রাঙামাটি ও বান্দরবানের ৯ উপজেলায় বমসহ ৬টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য ‘কুকি চিন রাজ্য’ প্রতিষ্ঠার দাবিতে সশস্ত্র সন্ত্রাসী তৎপরতা শুরু করে৷

গণমাধ্যম থেকে জানা যায়, বান্দরবানের রুমা সীমান্ত ও মিজোরাম সীমান্তের জাম্পুই পাহাড়ে এর সশস্ত্র ও নিরস্ত্র মিলিয়ে কেএনএফের সশস্ত্র শাখার কেএনএর ৬০০-এর বেশি সদস্য আছে৷ তারা চাঁদাবাজি, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, হত্যাকান্ডসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড করে পুরো জেলায় আতঙ্ক তৈরি করে৷ রুমা ও থানচি উপজেলায় তাদের উৎপাত বেশি৷

জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসারের সঙ্গে নাথানের সম্পর্ক গত বছর ২৪ জুলাই পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সঙ্গে জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার আল ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার যোগাযোগের নতুন তথ্য সামনে আনে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)৷ জামাতুল আনসারের কথিত আমির মো. আনিসুর রহমান মাহমুদকে গ্রেপ্তারের পর নাথান বমের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগের কথা জানায় র্যাব৷

র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আল মইন সেদিন এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, এই আনিসুরের মাধ্যমে ঢাকার বাসাবো এলাকার একটি ভাড়া বাসায় আট মাস ছিলেন কেএনএফ নেতা নাথান বম৷ আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ কুকি-চিন প্রধানকে বাসাটি ভাড়া করে দেন৷ বাসাটি ২০ হাজার টাকায় ভাড়া করা হয়েছিল৷ আর নাথান বমের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল আমিরের৷
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) তথ্য অনুযায়ী, নাথান বম যখন চারুকলার ছাত্র, জামাতুল আনসারের নেতা শামিন মাহফুজ তখন ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র৷ সে সময় তারা ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন৷

জামাতুল আনসারের প্রশিক্ষণের ব্যাপারে যখন দুর্গম জায়গা খোঁজা হচ্ছিল তখন শামিন মাহফুজ জানতে পারে তার বন্ধুই বমপার্টির প্রধান৷ এরপরে তাদের মধ্যে সাংগঠনিক পর্যায়ে যোগাযোগ ও চুক্তি হয়৷

২০২২ সালের অগাস্টে কুমিল্লা ও ঢাকার সাত কলেজছাত্র বাসা থেকে বেরিয়ে নিরুদ্দেশ হয়৷ অক্টোবরে কয়েকজনকে উদ্ধারের পর নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসারের নাম প্রকাশ্যে আসে৷ র্যাবের দাবি এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য ঘর ছেড়েছিলেন তারা৷ অন্যদিকে পাহাড়িদের কাছে ‘বম পার্টি’ নামে পরিচিত কেএনএফ সশস্ত্র কর্মকান্ডের মাধ্যমে বেশ কয়েক মাস ধরেই ছিল আলোচনায়৷ পাহাড়ে বসবাসরত বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর জন্য তারা ‘কুকি-চিন রাজ্য’নামে একটি অঞ্চল প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে আসছে৷

জামাতুল আনসারের ডজনখানেক সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব সংগঠনটির ‘বম পার্টি’র সঙ্গে সংযোগের কথা জানায়৷ পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠনটির পৃষ্ঠপোষকতায় জঙ্গি সংগঠনটির সদস্যদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে বলে সে সময় র্যাবের ভাষ্যে উঠে আসে৷ এই দুই উগ্র সংগঠনের সম্পর্কের বিষয়টি জানার পরই অক্টোবরে পার্বত্য চট্টগ্রামে সমন্বিত অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী৷ ওই অভিযানের সময়ই কুকি-চিন বা ‘বম পার্টি’ নেতা নাথান বম ঢাকায় ছিলেন বলে র্যাব জানায়৷

‘হিলভয়েস’র তথ্য অনুযায়ী, কেএনএফ সদস্যদের সঙ্গে ‘জামায়াতে আরাকান’ নামে একটি ইসলামি জঙ্গি সংগঠনের সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গেও যোগসূত্র রয়েছে৷ এই দুই সংগঠনকে ঢাকার এক বম তরুণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনগুলো অর্থ পাঠায় বলে অভিযোগ রয়েছে৷

র্যাব বলছে, ২০২০ সালের শুরুর দিকে নাথান বমসহ কেএনএফ এর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আসলাম নামের এক ব্যক্তির সাথে গহীন পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নিতে যান আনিসুর৷ সেখানে আসলামের তত্ত্বাবধানে তিনি প্রশিক্ষণ নেন৷

প্রশিক্ষণ শেষে তিনি কুমিল্লায় এসে নিজের সম্পত্তি ৫০ লাখ টাকার বেশি দামে বিক্রি করে দেন৷ এরপর নাইক্ষংছড়িতে তিন বিঘা জায়গা কিনে পরিবারসহ থাকতে শুরু করেন৷ তিন বিঘা জমির দাম দিয়ে বাকি টাকা তিনি নতুন জঙ্গি সংগঠনকে দেন৷

কেএনএফ প্রতিষ্ঠাতা নাথান বমের সঙ্গে ২০২১ সালে জামাতুল আনসারের আমিরের সমঝোতা হয়৷ পার্বত্য অঞ্চলে কেএনএফের ছত্রছায়ায় জামাতুল আনসার সদস্যদের ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য তাদের মধ্যে চুক্তিও হয়৷