• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

চতুরঙ্গ

এই গোষ্ঠীর বাইরে আরো দু’জন পণ্ডিতের নাম করতে হয়। মুহম্মদ শহীদুল্লা এবং সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়। দিলীপ রায় আর কালিদাস নাগও এই যুগের লোক।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

পূর্ব প্রকাশিতর পর

এ গোষ্ঠীর কার্যকলাপ বাঙলা সাহিত্যে কতখানি স্থায়ী মূল্য ধরে তার বিচার একদিন হবে; উপস্থিত বলতে পারি এঁরা বাঙলা সাহিত্যে যে ফরাসী উদারতার আমন্ত্রণ জানালেন তার ফল পরবর্তী যুগের অনেক বাঙালী লেখক গোড়ার থেকেই সঙ্কীর্ণতামুক্ত হয়ে সাহিত্যের আরাধনা করতে পেরেছিলেন।

Advertisement

হঠাৎ একদিন বাঙলা সাহিত্যে শরৎচন্দ্রের আবির্ভাবের ফলে এঁদের লোকপ্রিয়তা ক্রমে ক্রমে কমে গিয়ে একদিন সম্পূর্ণ লোপ পায়। কিন্তু শতরে মোহ কেটে যাওয়ার পর আজ পর্যন্ত কেন যে কেউ এঁদের হেমন্তের সফলতা সন্ধান করে না সে এক আশ্চর্যের বস্তু!

Advertisement

বাঙলায় ফরাসী সাহিত্য প্রসঙ্গে শুধু প্রমথ চৌধুরী সম্বন্ধে পূর্ণাঙ্গ একটি প্রবন্ধ লিখতে হয়। ইনিই একমাত্র বাঙালী সাহিত্যিক যাঁকে সর্বার্থে ফরাসিস আখ্যা দেওয়া যেতে পারে। একমাত্র এঁরই ভাষাটিতে ‘ঈভনিং ইন্ প্যারিসের’ খুশবাই পাওয়া যায়। এঁর শৈলী ফরাসী শ্যাম্পেনের মতো বুদ্বুদিত, ফেনায়িত। এমন কি এঁর বিষয়বস্তুও মাঝে মাঝে ফরেসডাঙার ধুতি পরে মজলিসে এসে বসে। বাঙলা সাহিত্যে বহু পণ্ডিত, বহু দার্শনিক, বহু কলাবিদ এসেছেন, কিন্তু একমাত্র এঁকেই সত্য বিদগ্ধ জন বলা যেতে পারে। এবং সে বৈদগ্ধ্য ফরাসী বৈদগ্ধ্য।

জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ফরাসিদের সঙ্গে বাঙালীর চারি চক্ষের মিলন ঘটিয়েছিলেন; প্রমথনাথে দুই সাহিত্যে গভীরতম প্রণয়ালিঙ্গন।

এঁর সাহিত্যসৃষ্টি হয়ত বাঙলাদেশ একদিন ভুলে যাবে, কিন্তু এই বাঙালী ফরাসিস্ চরিত্রকে বাঙালী কখনো ভুলবে না।
প্রমথনাথের শেষ বয়সে ভারতী গোষ্ঠীর মুমূর্ষু অবস্থায় রবীন্দ্রনাথের আমন্ত্রণে ফরাসী পণ্ডিত সিলভাঁ লেভি এদেশে আাসেন। তাঁর চতুর্দিকে তখন এক ফরাসী পণ্ডিতমণ্ডলীর সৃষ্টি হয়। এঁদের প্রধান ভণী বোস, প্রবোধ বাগচি, মণি গুপ্ত, শশধর সিংহ, বিধুশেখর ভট্টাচার্য, ক্ষিতিমোহন সেন। এঁদের কেউই প্রচলিতার্থে সাহিত্যে নামেননি কিন্তু এঁদের মাধ্যমে আমরা এদেশে সর্বপ্রথম ফরাসী পাণ্ডিত্যের সন্ধান পাই। এতদিন আমরা জানতুম, ইয়োরোপীয় ‘প্রাচ্য-বিদ্যামহার্ণব’ বলতে বোঝায় ইংরেজ। এঁরাই প্রথম দেখিয়ে দিলেন, ফরাসিস্ ভারতবর্ষে ব্যাপকভাবে রাজত্ব না করেও ভারতীয় শাস্ত্রের চর্চা করেছে প্রচুর। বিশেষ করে আমাদের চিত্রকলা সঙ্গীতাদির। প্রবন্ধের গোড়ারল দিকেই বলেছি সাহিত্য ছাড়া অন্য রসে ইংরেজ বঞ্চিত। ফরাসীরা সেখানে যথার্থ গুণী। মণি গুপ্তের অনুবাদে বাঙালী তার সন্ধান পাবে। শান্তা দেবী এই সময়েই বিশ্বভারতীতে ফরাসী শেখেন।

এই গোষ্ঠীর বাইরে আরো দু’জন পণ্ডিতের নাম করতে হয়। মুহম্মদ শহীদুল্লা এবং সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়। দিলীপ রায় আর কালিদাস নাগও এই যুগের লোক।

কিন্তু আমাদের জোড়া কুৎব্-মিনার? বঙ্কিম এবং রবীন্দ্রনাথ? তা হলে দীর্ঘতর প্রবন্ধ লিখতে হয়। সংক্ষেপে নিবেদন করি।

বঙ্কিম কিঞ্চিৎ ফরাসিস জানতেন। কিন্তু তিনি ইংরিজির মাধ্যমে কঁৎ-কে চিবিয়ে খেয়েছিলেন। পূর্বশূরগুণের প্রসাদাৎ কঁৎ ফরাসী তর্কালোচনায় যে শুদ্ধবুদ্ধির (rationality-র) চরমে পৌঁছেন, বঙ্কিম সেই শাণিত অস্ত্র নিয়ে হিন্দুধর্ম রণাঙ্গনে প্রবেশ করেন। এই ক্ষুদ্র প্রবন্ধে তার সবিস্তর আলোচনা অসম্ভব।

(ক্রমশ)

Advertisement