• facebook
  • twitter
Tuesday, 29 July, 2025

আম্বানিকে তুষ্ট করতে

দেশের অন্যান্য টেলিকম সংস্থার মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিএসএনএল এবং আইটিআই-এর বৈদ্যুতিন যোগাযোগ পরিকাঠামো ব্যবহার করে ব্যবসা করছে রিলায়েন্স জিও।

দেশের অন্যান্য টেলিকম সংস্থার মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিএসএনএল এবং আইটিআই-এর বৈদ্যুতিন যোগাযোগ পরিকাঠামো ব্যবহার করে ব্যবসা করছে রিলায়েন্স জিও। নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী, এই দুই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার পরিষেবা ব্যবহার করে কোনও বেসরকারি সংস্থা ব্যবসা করতে চাইলে, দুই পক্ষের মধ্যে একট বিধিবদ্ধ সমঝোতা হওয়া জরুরি। এই পরিষেবা ব্যবহার করে বেসরকারি সংস্থাগুলি যে আয় করছে, তার কিছু অংশ বিএসএনএল ও আইটিআই’কেও দিতে হবে। সিএজি’র প্রকাশ করা এক চাঞ্চল্যকর রিপোর্টে এই তথ্য প্রকাশ করে বলা হয়েছে, ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড (বিএসএনএল) ও ইন্ডিয়ান টেলিফোন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (আইটিআই)-এর প্রাপ্য টাকায় মুকেশ পুত্র অনন্ত আম্বানির বিয়ে হয়েছে।

সিএজি’র এই রিপোর্ট বলছে, গত দশ বছর ধরে মুকেশ আম্বানির এই সংস্থাকে অজ্ঞাত কিছু কারণে বিএসএনএল ও আইটিআই, ‘বিশেষ ছাড়’ দিয়ে চলেছে। ২০১৪-র মে থেকে ২০২৪-এর মার্চ পর্যন্ত, বৈদ্যুতিন যোগাযোগ পরিষেবা ব্যবহার করার বিনিময়ে রিলায়েন্স বিএসএনএল-এর প্রাপ্য টাকা মেটায়নি। এর ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের মালিকানাধীন এই সংস্থার অন্তত ১৭৫০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এই বিষয়ে বিএসএনএল যে কিছু জানত না, এমন একেবারেই নয়। তবে কোনও নির্দিষ্ট কারণবশত যেচে রিলায়েন্সকে এই ছাড় দেওয়া হয়েছে।

গত ১০ বছর ধরে এই সংক্রান্ত বিধিবদ্ধ চুক্তি ‘মাস্টার সার্ভিস এগ্রিমেন্ট’ (এমএসএ) স্বাক্ষরে রিলায়েন্সকে রাজি করাতে ব্যর্থ হয়েছে বিএসএনএল। অথচ এই চুক্তির যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা গত ১০ বছর ধরে আম্বানির এই সংস্থা পেয়ে চলেছে। তবে কি মোদী ঘনিষ্ঠতাই রিলায়েন্স জিও-কে এমন বিশেষ ছাড় দেওয়ার প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে, এমন একাধিক প্রশ্ন সামনে আসছে। এই ঘটনায় বিএসএনএল-এর শীর্ষ আধিকারিকরা দায়সারা ও সরকারের স্বার্থবিরোধী আচরণ করেছে বলে রিপোর্টে অভিযোগ করেছে সিএজি। একই সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত এই সংস্থা পরিচালনায় আধিকারিকদের চূড়ান্ত ব্যর্থতা প্রকাশ্যে এসেছে বলে সিএজি রিপোর্টে কটাক্ষ করা হয়েছে। পাশাপাশি স্বচ্ছতা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। দুই সংস্থার মধ্যে এমএসএ সংক্রান্ত বোঝাপড়া না থাকায়, এই কয়েক বছরে অতিরিক্ত পরিকাঠামোর পিছনে বেহিসাবি খরচ বাবদ ২৯ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বিএসএনএল-এর।

সিএজি’র এই রিপোর্ট নিয়ে ইতিমধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। বিশ্লেষকদের অনেকে এই ঘটনায় অর্থ তছরুপ ও দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন। মোদী সরকারের আমলে গুটি কয়েক একচেটিয়া ধনকুবেরকে বিশেষ ছাড় দিতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির স্বার্থ বিকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিরোধীদের এই অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হচ্ছে। বিএসএনএল ও কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাপ্য টাকা হাতিয়ে, তা দিয়ে ছোট ছেলে অনন্তের বিয়ে দিয়েছেন মুকেশ আম্বানি। সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন অভিযোগই উঠে এসেছে। গত বছর এই বিয়েতে আম্বানি পরিবারের খরচ হয়েছিল প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। পারিবারিক সূত্রে এমনটাই জানা যায়। অর্থাৎ বিএসএনএল ও আইটিআই-এর প্রাপ্য টাকার তা দ্বিগুণেরও বেশি। রিলায়েন্স চাইলেই এই টাকা মেটাতে পারতো। বিএসএনএলের থেকে যে টাকা সরকারের কোষাগারে যাওয়ার কথা ছিল, দেশের উন্নয়নে যা ব্যয় হওয়ার কথা ছিল, তা দিয়ে হলিউড-বলিউডের নামকরা তারকাদের দিয়ে অনুষ্ঠান করিয়েছেন আম্বানি।

অন্যদিকে বিএসএনএলের শীর্ষ আধিকারিকদের দায়সারা হাবভাবের আরও একাধিক অভিযোগ উঠেছে সিএজি’র এই রিপোর্টে। পরিকাঠামোগত বৃদ্ধির জন্য বেশ কয়েকটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আমদানি করা হয়েছে ঠিকই, তবে তা ব্যবহার না হওয়ায় গুদামে নষ্ট হচ্ছে। এর সামগ্রিক মূল্য অন্তত ৮০ কোটি টাকার কাছাকাছি। প্রত্যাশিত আয় বৃদ্ধির বদলে উল্টে ক্ষতি হয়েছে। ফলে ‘বিনিয়োগ’ হয়ে গিয়েছে ‘অপচয়’, জানিয়েছে সিএজি’র সমীক্ষক দল।